কালীগঞ্জ সোনালী ব্যাংক বিধাবা ভাতার টাকা কম দেওয়ার অভিযোগ

স্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহঃ

বিধবা গৃহপরিচারিকা আখিরন নেছা সোমবার সোনালী ব্যাংক ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শাখায় গিয়েছিলেন সরকারের দেওয়া বিধবা ভাতা’র টাকা উত্তোলন করতে। তার পাওনা ৪৫ শত টাকা। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বইতে ৪৫ শত টাকা প্রদান লিখলেও তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন ৩ হাজার টাকা। বাকি টাকার কথা জানতে চাইলে বলা হয়েছে বেশি বুঝলে মোটেও পাবেন না। একই ভাবে কদবানু এর হাতে ও ৪৫ শত টাকার পরিবর্তে দেওয়া হয়েছে ৩ হাজার। তাকেও বলা এই টাকা নিলে নেন, না নিলে চলে যান। আখিরন নেছা, কদবানু শুধু নয়, এ জাতীয় অসংখ্য বিধবা নারীর টাকা কম দিয়েছেন ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। যা স্থানীয় সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনারের তাৎক্ষনিক পদক্ষেপের কারণে প্রকাশ পেয়েছে। বেশ কয়েকজন বিধবা নারী তাদের বাকি ১৫ শত টাকাও ফেরত পেয়েছেন। সাংসদের বক্তব্য অসহায় দরিদ্র মানুষের জন্য সরকারের দেওয়া এই টাকা আত্বসাতের উদ্দেশ্যেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের হাতে কম টাকা তুলে দিয়েছেন। পরে তার উপস্তিতে ১৫ জনের বাকি ১৫ শত করে টাকা দেওয়া হয়েছে। তার দাবি আরো অসংখ্য মানুষের সঙ্গে এটা করা হয়েছে। ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলা সমাজ সেবা অফিসের মাধ্যমে ৪০০৯ জন বিধবা ভাতা, ৮৪০০ জন বয়ষ্ক ভাতা ও ২১৭৭ জন প্রতিবন্ধি ভাতা পেয়ে থাকেন। উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ কৌশিক খান জানান, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত তাদের বরাদ্ধ সব চলে এসেছে। সোমবার কালীগঞ্জ পৌরসভা ও ৩ টি ইউনিয়নের ভাতা প্রাপ্তদের মাঝে টাকা বিতরণ করা হয়েছে। যদিও ওই দিন পৌরসভা এলাকায় ভাতা বিতরনের কথা না। এই পৌর এলাকায় অনিয়মটা হয়েছে। তিনি আরো জানান, মাসে বিধবা ভাতা ৫০০ বয়ষ্ক ভাতা ৫০০ ও প্রতিবন্ধীরা ৭৫০ টাকা করে পেয়ে থাকেন। যাদের টাকা কম দেওয়া হয়েছে তাদের একজন কদবানু (৮০)। বয়সের ভারে এখন সোজা হয়ে দাড়াতে পারেন না। কালীগঞ্জ শহরের আড়পাড়া এলাকায় মাত্র ৪ শতক জমির উপর তার টিনের চালায় বসবাস। স্বামী গোলাম রসুল আনুমানিক ৪৫ বছর পূর্বে মারা গেছেন। সেই থেকে তিনি বিভিন্ন মানুষের বাড়িতে রান্নার কাজ করে সংসার চালান। তার বড় ছেলে আসাদুল ইসলাম বাদাম বিক্রি করেন, ছোট ছেলে সাইদুল ইসলাম চা বিক্রেতা। একমাত্র মেয়ে আকলিমা খাতুনকে বিয়ে দিয়েছেন। তিনি জানান, ছেলেদের কষ্টের সংসার। এই ভাতা দিয়ে ঔষধপত্র কিনতে হয়। সোমবার টাকা তুলতে গেলে ৪৫ শত টাকার পরিবর্তে ৩ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। এটার কারণ জানতে চাইলে বলা হয়েছে নিলে নেন, না নিলে চলে যান। কদবানু কথা গুলো বলার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন, বলেন তার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে। ব্রীক ফিল্ড এলাকার বাসিন্দা আখিরন নেছা’র স্বামী আবু তাহের মারা গেছেন ২৪ বছর হয়েছে। এক ছেলে রবিউল ইসলাম রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। এক মেয়ে ফাতেমা খাতুনের বিয়ে দিয়েছেন। নিজে বাড়ির সামনে টোং দোকানে চা বিক্রি করেন। এই চা বিক্রি আর বিধবা ভাতার টাকায় তার সংসার চলে। সেই টাকা কম দেওয়ার পর তিনি এলাকায় ফিরে শফিকুজ্জামান রাসেলকে বিষয়টি খুলে বলেন। তিনি স্থানীয় সাংসদের নজরে নিয়ে আসার পর তার বাকি টাকা ফেরত পেয়েছেন। এভাবে অনেককে ৪৫ শত টাকার মধ্যে ১৫ শত টাকা কম দেওয়া হয়েছে। যারা প্রতিবাদ করতে না পেরে বাড়ি ফিরে গেছে। এমন অভিযোগ বিধবা ভাতার টাকা নিতে আসা উপজেলার ছোট শিমলা গ্রামের রেখা রানী, রুপালী বিশ্বাস ও মায়া রানীদের। তারা জানায়, তাদের বইতে ৪৫০০ টাকা লেখা থাকলেও ব্যাংক থেকে ৩০০০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু বাকি টাকা দেওয়ার ব্যাপারে তাদের কিছু জানায়নি। মঙ্গলবার সকালে সরেজমিনে সোনালী ব্যাংকের কালীগঞ্জ শাখায় গিয়ে দেখা যায় গত সোমবার যাদের টাকা কম দেওয়া হয়েছিল মঙ্গলবার তাদের টাকা দেওয়া হচ্ছে। সমাজসেবা অফিসের ইউনিয়ন সমাজ কর্মী রবিউল ইসলাম জানান, তারা খোজখবর করে আরো ১৪ জনের সন্ধান পেয়েছেন। তাদের বাকি ১৫ শত টাকা পাওয়ার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ব্যাংকে এসেছেন এবং ইতোমধ্যে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের সেই টাকাও পরিশোধ করেছেন। তিনি আরো জানান, খোঁজ নিচ্ছেন আরো কেউ টাকা কম পেয়ে থাকলে তার টাকা পাওয়ার ব্যবস্থাও নিবেন। এ সময় নার্গিস বেগম জানান, তিনি ১৫ শত টাকা কম দেওয়ার কারণ জানতে চাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাড়িয়ে দিয়েছেন। এ বিষয়ে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মোঃ কৌশিক খাঁন জানান, সকল পর্যায়ের ভাতা প্রাপ্তদের ২০২০ সালের জুন মাস পর্যন্ত ভাতার টাকা চলে এসেছে। তারাও এই টাকা ছাড় করেছেন। এখন শুধুমাত্র বিতরণ করার পালা। তিনি বলেন, ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই দিন সিমলা-রোকনপুর ইউনিয়নে টাকা বিতরণ করার কথা থাকলেও করেছেন পৌরসভা এলাকায়। যেখানে এই অনিয়মটি হয়েছে। তবে এটা কোনো ভাবেই ঠিক হয়নি। ভাতা প্রাপ্তদের যে বই আছে সেখানে ৪৫ শত টাকা লিখে ৩ হাজার দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ঝিনাইদহ-৪ আসনের সাংসদ আনোয়ারুল আজীম আনার জানান, সোমবার দুপুরে তার কাছে খবর যায় অসহায় মানুষের টাকা আত্বাসাত করা হচ্ছে। এই খবর পেয়ে তিনি ব্যাংকে ছুটে আসেন। সেখানে গিয়ে ঘটনা সঠিক দেখে উপস্থিত কমপক্ষে ১৫ জনের কথা শুনে তাদের বাকি ১৫ শত করে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাৎক্ষনিক ভুল বলে টাকা ফেরত দেন। সাংসদ আরো জানান, এখানে এসে জানতে পারেন ব্যাংকের নিরাপত্তা কর্মীও ভাতা নিতে আসা অসহায় নারীদের নিকট থেকে জনপ্রতি ১ শত করে টাকা নিচ্ছেন। এছাড়াও প্রতিবন্ধীদের সব টাকা দেওয়া হচ্ছে না। এসকল অনিয়মের বিষয়ে তিনি ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানান। তাৎক্ষনিক ভাবে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপককে বিষয়গুলি অবহিত করে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বলেছেন। এ বিষয়ে ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক শামীম রেজা জানান, অনেক কাজের মধ্যে এই কাজটি করতে গিয়ে তার অফিসাররা ভুল করেছেন। পরে সব সমাধান করে ফেলা হয়েছে। তারপরও বিষয়টি নিয়ে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে জানান।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More