কক্সবাজারে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হওয়া সেই নারী ৮ জানুয়ারি খদ্দেরসহ আটক ৫৪ জনের একজন বলে তথ্য মিলেছে। কলাতলীর হোটেল-মোটেল জোনের কটেজ এলাকা হতে ওইদিন (৮ জানুয়ারি) খদ্দেরসহ আটক ৫৪ জনের ২৭ নম্বর আসামী ২২ ডিসেম্বরের ঘটনার ভিকটিম। এ সংক্রান্তে কক্সবাজার সদর থানার ৯ জানুয়ারি মানবপাচার আইনে দায়ের করা মামলা নম্বর-২০/২১। এ মামলায় কারাগারে যাবার পর ২৭ জানুয়ারি তিনি (২২ ডিসেম্বরের ভিকটিম) জামিনে বের হন। কক্সবাজার সদর থানার নথিপত্র যাচাই করে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. হাসানুজ্জামান।
পুলিশ সুপার জানান, ২২ ডিসেম্বরের যে ঘটনাটি প্রকাশ হয়েছে তা সত্যি স্পর্শকাতর। পর্যটন নগরী হিসেবে এটা উদ্বেগের। গণমাধ্যম যেহেতু ধর্ষণের শিকার সেই নারীকে পর্যটক আখ্যায়িত করে প্রচার করেছে এবং তিনি সত্যিই যদি পর্যটক হন তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর দায়িত্বশীল হিসেবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। তাই তার বিষয়ে সবকিছু খুঁটিয়ে দেখা হচ্ছে। এটা করতে গিয়েই ৮ জানুয়ারিতে অন্যদের সাথে তার আটকের বিষয়টি পরিষ্কার হয়। এসপি আরও বলেন, সেই মামলায় যে নামটি তিনি ব্যবহার করেছেন, ২২ ডিসেম্বরের ঘটনার পরে মামলায় একই নাম দিয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন হোটেলে ভিন্ন নামে রাত্রিযাপনের তথ্য পেয়েছি। এ ঘটনার (২২ ডিসেম্বরের) পর যখন তার সঙ্গে হাসপাতালে কথা বলেছি তখন তার তিনটি নামে নিজেকে উপস্থাপন করেন ভিকটিম নারী। তাহলে তাকে কি করে গণমাধ্যম পর্যটক হিসেবে আখ্যায়িত করবেন? এমন প্রশ্ন রাখেন এসপি।
কক্সবাজার হোটেল-গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, একটি অপ্রিয় সত্য হলো- ‘নারী-মদ-পানি’ তিনের সমন্বয় যেকোন পর্যটন নগরীতে বিদ্যমান। তবে, বৈধতা এক্ষেত্রে একটি বড় ফ্যাক্ট। কক্সবাজারে মদের বৈধতার কিছু ক্ষেত্র থাকলেও মনোরঞ্জনের জন্য নারীর বৈধতার ক্ষেত্র নেই। কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কোনো নারী কক্সবাজারে আগত পর্যটকের সাথে একীভূত হয়ে হোটেলে অবস্থান করলে হোটেল কর্তৃপক্ষের কিছুই করার বা বলার থাকে না। আবার কিছু অসাধু ব্যক্তি লোভে পড়ে কটেজ বা হোটেলে নারী রেখে অনৈতিক ব্যবসা করেন। খবর পেলে সেসব হোটেল- কটেজে অভিযান চালায় প্রশাসন। ৮ জানুয়ারিও এভাবে এক অভিযানে ৫৪ জন নারীকে খদ্দেরসহ গ্রেফতার করেছিলো। এভাবে প্রায় ধরা পড়ে কিছু নারী-পুরুষ। এসব নারী কখনো-ই পর্যটক নন। তবে, তারা পর্যটন অনুষঙ্গ বলা যায়। গত বুধবারের ঘটনায় ভিকটিমকে পর্যটক আখ্যা দিয়ে প্রচারণা আমাদের কক্সবাজারের ঐতিহ্যের চরম ক্ষতি করেছে। এরপরও অভিযোগ ওঠা বিষয়ের সঠিক বিচার কাম্য আমাদের।
কলাতলী জোনের টাইড ওয়াটার হোটেলের পরিচালকদের একজন এম. বেদারুল আলম বলেন, শুধু শুধু কক্সবাজার পর্যটন ও প্রশাসনের বদনাম করা হলো গত ৫টা দিন। কথিত ধর্ষণের শিকার ভিকটিম নারী নিজেই স্বীকার করেছেন তিনি টাকা আয় করতে নিজেকে অন্যের সাথে বিলিয়ে দিয়ে আসছেন। ৮ জানুয়ারি আটকের পর জামিন পেয়ে আবারও অসামাজিক কার্যকলাপে জড়ান। লেনদেন নিয়ে বিতর্কিত কিছু যুবকের সঙ্গে ঘটা অনৈতিকতায় তাকে ‘পর্যটক’ উল্লেখ করে পর্যটনের এ ভরা মৌসুমে একটি ভীতিকর ম্যাসেজ দেশব্যাপী ছড়ানো হয়েছে। আমাদের সাংবাদিকতা আরও দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমের দাবি রাখে।
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ