এখনও এক কোটি বই সরবরাহই হয়নি : মাধ্যমিক স্তরের বই বেশি
নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির বই নিয়ে সঙ্কট তুলনামূলক বেশি
স্টাফ রিপোর্টার: শিক্ষাবর্ষের ৩৫দিন পার হয়েছে। কিন্তু এখনও ১ কোটি বই ছাপাই হয়নি। এসবের মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই বেশি। এছাড়া প্রাথমিক স্তরের কিছু বইও আছে। নতুন শিক্ষাক্রমের সপ্তম শ্রেণির বই নিয়ে সঙ্কট তুলনামূলক বেশি। এছাড়া নবম শ্রেণির বইও তুলনামূলক কম সরবরাহ হয়েছে। যদিও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে ভিন্ন কথা। তাদের বক্তব্য ১০ থেকে ১২ লাখ বই সরবরাহ বাকি আছে। মুদ্রণসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, অন্তত ৩ কোটি বই এখনও পাঠানো সম্ভব হয়নি। এনসিটিবি’র কর্মকর্তারা বলেন, এই সংখ্যা আসলে ১ কোটি। অবশ্য অপর একটি সূত্র বলছে, ৪৪ লাখ বই এখনও ছাপাই হয়নি। এভাবে পাঠ্যবই ছাপা ও সরবরাহ নিয়ে চার ধরনের বক্তব্য দেখা যাচ্ছে। আসলে কত ছাপা হয়েছে এবং সারা দেশে কত পাঠানো হয়েছে তা নিয়ে সংশয় সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাঠ্যবই যে আশানুরুপ সরবরাহ হয়নি সেটা শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্য থেকে আভাস পাওয়া যায়। তিনি শুক্রবার চাঁদপুরে এক অনুষ্ঠানে ওয়েবসাইট থেকে বই নামিয়ে (ডাউনলোড) পড়ানোর জন্য শিক্ষকদের পরামর্শ দিয়েছেন। ২৪ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রী বলেছিলেন ২৫ জানুয়ারির মধ্যে সব বই পৌঁছে যাবে। শনিবার পর্যন্ত কত বই সরবরাহ করা সম্ভব হলো-এমন প্রশ্ন ছিলো এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) লুৎফর রহমানের কাছে। তিনি বলেন, ১০-১২ লাখ বই সরবরাহ বাকি আছে। এটা দু-এক দিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেয়া হবে। এবার প্রাথমিকস্তরের পাঠ্যবই নিয়ে জটিলতা হয়েছিল। ওই স্তরকে ছাড় দিতে গিয়ে মাধ্যমিক পিছিয়ে গেছে। তবে যারা বিলম্ব করছে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। আর পাঠ্যবই ছাপানোর কাজ করা প্রতিষ্ঠানগুলোর কেন্দ্রীয় সংগঠন মুদ্রণ শিল্প সমিতির সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম বলেন, এখনও ৩ কোটি বই পাঠানোই হয়নি। গোটা ফেব্রুয়ারিতে বই পাঠানোর পরও অন্তত ১ কোটি বই সরবরাহ বাকি থাকবে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, কাগজ সঙ্কট। বাজারে কাগজই নেই। সুতরাং যারা এখনও বই ছাপতে পারেননি, তারা কোথা থেকে কাগজ এনে বই ছাপবেন? এনসিটিবির দুটি সূত্র আলাদাভাবে বলেছে, এখনও ১ কোটির বেশি বই পাঠানো সম্ভব হয়নি। মুদ্রাকররা যে আংশিক বই মুদ্রণ করেছেন, জরিমানা থেকে বাঁচতে সেগুলোর ছাড়পত্র নিয়ে রেখেছেন। ট্রাক ভাড়া বাঁচাতে বই পাঠাননি। কারণ দুবার ট্রাক পাঠালে দ্বিগুণ ভাড়া গুনতে হবে। তাই অবশিষ্ট বই মুদ্রণ শেষ হলে সেগুলোর ছাড়পত্রসহ একবারে গন্তব্যে ট্রাক পাঠাবেন। কিন্তু এনসিটিবি জানছে যে, ছাপানো বই পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তারা ছাড়পত্র হিসাব করে বলছে যে, বই চলে গেছে। কিন্তু মাঠের চিত্র ভিন্ন। অন্তত এক ডজন প্রতিষ্ঠানের কাছে এসব বই আটকে আছে। ওইসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে বারোতোপা, বর্ণশোভা, ভাই ভাই, ভয়েজার, আল আমিন প্রিন্টার্স অন্যতম। এনসিটিবির অপর সূত্র বলছে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৪৪ লাখ বই মুদ্রণই হয়নি। যেমন বর্ণশোভা মাধ্যমিকের ৫১ লাখ বই মুদ্রণের কাজ পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি শুক্রবার পর্যন্ত পৌনে ১২ লাখ বই মুদ্রণই করেনি। আবার যেসব বই সরবরাহের ছাড়পত্র নিয়েছে, তার সব পাঠায়নি। ভয়েজার সোয়া ২৪ লাখ বইয়ের কাজ নিয়েছে। এখনও ৯ লাখ ৭৮ হাজার বই তারা মুদ্রণই করেনি। বারোতোপার কাছেও একই সংখ্যক বই আটকে আছে। এভাবে ডজনখানেক প্রতিষ্ঠানের কাছে এক কোটির উপরে বই রয়ে গেছে। জানতে চাইলে বারোতোপার পরিচালক অনুপ কুমার দে বলেন, তাদের কাছে ৯-১০ লাখ বই আটকে থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। কিছু বই তারা এখন পর্যন্ত দিতে পারেননি। বাজারে কাগজের সঙ্কট ছিল। অগ্রিম টাকা দিয়েও একটি প্রতিষ্ঠান থেকে কাগজ পাননি। যে কারণে বিলম্ব হয়েছে। তবে রোববারের (আজ) মধ্যে ছাড়পত্র পেলে অবশিষ্ট বই পাঠিয়ে দেয়া হবে। কিন্তু কত বই তারা সরবরাহ করতে পারেননি তা তিনি জানাননি। এদিকে ঢাকা ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নিয়ে এখনও যে লাখ লাখ বই সরবরাহ হয়নি তার চিত্র মিলেছে। আর বই না যাওয়ায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ঠিকমতো শুরু হয়নি। যদিও শিক্ষামন্ত্রী ওয়েবসাইট থেকে ডাউনলোড করে বই পড়ার পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু ঢাকাসহ শহরাঞ্চলের বড় স্কুলে আগেই এনসিটিবির ওয়েবসাইট থেকে বইয়ের পিডিএফ ভার্সন ডাউনলোড করে চলছে পড়াশোনা। আর গ্রামের স্কুলের শিক্ষার্থীরা আসা-যাওয়ার মধ্যেই আছে। জানা গেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক উভয় স্তরের বই নিয়ে সঙ্কট আছে। তবে বেশি সংকট মাধ্যমিকের সপ্তম আর নবম শ্রেণির বই নিয়ে। এরমধ্যে সপ্তম শ্রেণির বইয়ের সর্বশেষ পা-ুলিপিই সরবরাহ করা হয়েছে ১৭ ডিসেম্বর। ফলে স্বাভাবিকভাবেই মুদ্রণ শেষ হয়নি। বিভিন্ন এলাকার অন্তত ১০টি স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, তারা ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণির বই ৩-৬টি করে পেয়েছেন। অন্যান্য শ্রেণির বইও কোনো কোনো স্কুলে সব কপি যায়নি। আংশিক বই আগে পাঠানোর বিষয়টি স্বীকার করেছেন এনসিটিবির সদস্য (পাঠ্যপুস্তক) লুৎফর রহমান। তিনি বলেন, নতুন শিক্ষাক্রমের বইয়ের পা-ুলিপি দিতে বিলম্ব হয়। তবে এই সংখ্যা কম। আবার নবম শ্রেণিতে বিভাগভিত্তিক (বিজ্ঞান, মানবিক, বিজনেস স্টাডিজ) বইও কম গেছে। এতে লেখাপড়ায় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কেননা, বিভাগের লেখাপড়া শুরু হয় ২-৩ মাস পর। তাই এসব বই পরে গেলেও তেমন সমস্যা হবে না।