স্টাফ রিপোর্টার: সরকারি অফিস-আদালতে আজ থেকে শুরু হয়েছে ঈদের ছুটি। গতকাল মঙ্গলবার ছিলো শেষ কর্মদিবস। অফিস ছুটি হতে না হতেই বাড়ির উদ্দেশে রওনা করতে দেখা গেছে অনেক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকেও। রাজধানীর বাস, লঞ্চ ও রেলস্টেশনগুলোয় দুপুর পর্যন্ত যাত্রীচাপ ছিলো না বললেই চলে। তবে বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এসব টার্মিনালে যাত্রীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এদিন সড়ক-মহাসড়কে মঙ্গলবার তেমন একটা যানজট ছিলো না। তবে ঢাকার ভেতরেই যানজটে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জে ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ যানজট ছিলো। তীব্র গরম ও যানজটে যেন হাঁসফাঁস অবস্থা তাদের। এমন অবস্থার মধ্যেও নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যাচ্ছেন নগরবাসী।
রাজধানীর কমলাপুর থেকে বেশির ভাগ ট্রেন সময়মতো ছেড়ে গেছে। তবে ছয়টি ট্রেন নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ২০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। অপরদিকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ৫৫টি লঞ্চ বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে গেছে। আরও ২৫টি লঞ্চ ছাড়ার অপেক্ষমাণ অবস্থায় ছিল। সরেজমিন ঘুরে এবং সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা গেছে।
পরিবহণ সংশ্লিষ্টরা জানান, সামনে এসএসসি পরীক্ষা এবং তীব্র গরমসহ নানা কারণে এবার ঈদযাত্রায় যাত্রী অন্যান্য বছরের চেয়ে কম হবে বলে মনে হচ্ছে। এছাড়া সরকারি ছুটি দীর্ঘ হওয়ায় একই সঙ্গে যাত্রীচাপ পড়ার আশঙ্কা কম। তবে বিষয়টি অনেক গার্মেন্ট ছুটির ওপর নির্ভর করছে। একই দিন অনেক গার্মেন্ট ছুটি হলে পরিবহণের ওপর যাত্রীচাপ বেড়ে যাবে। তখন শৃঙ্খলা ধরে রাখাও কঠিন হবে।
গাবতলী হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার মাস্টার রুবেল জানান, মঙ্গলবার সকাল থেকেই গাবতলীতে যাত্রী ছিল না বললেই চলে। বিকাল থেকে যাত্রী আসতে শুরু করে। সেটাও খুব বেশি নয়। প্রতি বৃহস্পতিবার যাত্রীর চাপ যেরকম, মঙ্গলবার সেই অবস্থা ছিল। তিনি বলেন, যাত্রীর যে অবস্থা, তাতে ঈদযাত্রা বলা যাবে না। ঈদের কোনো চাপ নেই। আগে ঈদের ছুটির শেষ কর্মদিবসে গাবতলীতে লোকেলোকারণ্য থাকত। তখন ৪০-৪৫ ট্রিপ বাস ছেড়ে যেত। সেখানে আজ বিকেল পর্যন্ত ১২টি বাস ছেড়েছে।
তবে মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাজধানীর সায়েদাবাদ, যাত্রাবাড়ী ও আশপাশ এলাকায় বাড়িমুখী যাত্রীদের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। ওই এলাকায় বাস, ব্যক্তিগত গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনের চাপও ছিল বেশি। এতে সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল থেকে সাইনবোর্ড এবং যাত্রাবাড়ী-দোলাইরপাড়-পোস্তগোলা সড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। ঢাকা থেকে বের হতেই ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে যাত্রীদের।
ঈদযাত্রায় দ্বিতীয় দিনেও ট্রেনে যাত্রীদের খুব একটা ভিড় চোখে পড়েনি। মঙ্গলবার সকাল থেকে অধিকাংশ ট্রেন নির্দিষ্ট সময়ে কমলাপুর থেকে ছেড়ে গেছে। ধূমকেতু, নীলফামারী, তিস্তাসহ ৬টি ট্রেন ২০ মিনিট থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে ছেড়েছে। এ বিষয়ে ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক মাসুদ সারওয়ার বলেন, ৪-৫টি ট্রেন ছাড়া বাকি সব ট্রেন সঠিক সময়ে ঢাকা ছেড়ে যাচ্ছে। বিনা টিকিটে কোনো যাত্রী স্টেশনে প্রবেশ করতে পারছে না। ঈদযাত্রার দ্বিতীয় দিনেও ভিড় তেমন চোখে পড়ছে না। ২০ ও ২১ এপ্রিল ভিড় বাড়বে। চট্টগ্রাম রুটে দুর্ঘটনার কারণে ১৭ এপ্রিলের ‘সোনার বাংলা’ এক্সপ্রেস ট্রেন ১৯ এপ্রিল চলবে। তিনি জানান, যারা অগ্রিম টিকিট কাটতে পারেননি, তাদের জন্য সীমিতভাবে শুধু যাত্রার দিন ২৫ শতাংশ সিটবিহীন টিকিট দেয়া হচ্ছে।
গত বছরের ২৫ জুন স্বপ্নের পদ্মা সেতু উদ্বোধন করা হয়। ২৬ জুন সকাল থেকে যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় সেতুটি। ওইদিনই রাতে বেপরোয়া মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুতে দুজন নিহত হন। দুর্ঘটনা এড়াতে ২৭ জুন ভোর ৬টা থেকে মোটরসাইকেল চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে সেতু কর্তৃপক্ষ। পদ্মা সেতুর বিকল্প হিসাবে শিমুলিয়া-মাঝিকান্দি রুটে ফেরি চালু হলো। যদিও বৃহস্পতিবার থেকে পদ্মা সেতু দিয়ে মোটরসাইকেল চলাচল করতে পারবে। এ সিদ্ধান্ত মঙ্গলবার দুপুরে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ করপোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) পরিচালক (বাণিজ্য) এসএম আশিকুজ্জামান জানান, সকাল ৬টা ৫০ মিনিটের দিকে ১৬৯টি মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরি কলমিলতা শিমুলিয়া ঘাট থেকে রওয়ানা করে। প্রায় ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটে ফেরিটি মাঝিকান্দি ঘাটে পৌঁছায়। সেখান থেকে ৬টি মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরিটি আবারও শিমুলিয়া ঘাটে চলে যায়। সকাল ৯টার দিকে ৮৯টি মোটরসাইকেল নিয়ে ফেরি কুঞ্জলতাও শরীয়তপুরের মাঝিকান্দি ঘাটে যায়। এভাবে সারা দিন ফেরিতে মোটরসাইকেল পারাপার করা হয়।