স্টাফ রিপোর্টার: প্রতিবছরের ন্যায় এবারও ঈদযাত্রায় ট্রেনের অগ্রিম টিকিট কাটতে ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ যাত্রীরা। ভোগান্তি যে শুধু কাউন্টারে তা নয়,অনলাইনেও টিকিট কাটতে বেগ পেতে হচ্ছে। শুক্রবার অগ্রিম টিকিট বিক্রির শুরুর দিন ১০ থেকে ১২ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়েও অনেকে টিকিট কাটতে পারেননি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেকে কাউন্টারের সামনে পর্যন্ত যেতে পারেননি। টিকিট কাটতে এসে বেশি দুর্ভোগে পড়েন নারীরা। কারণ কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে ২৬টি কাউন্টারের মধ্যে মাত্র ২টি কাউন্টার নারীদের জন্য। দ্রুত সময়ের মধ্যে আরও অন্তত ৪টি কাউন্টার খোলার অনুরোধ জানিয়েছেন নারীরা। এবার মোট টিকিটের ৫০ শতাংশ কাউন্টার এবং বাকি ৫০ শতাংশ অনলাইনে টিক্রি হচ্ছে। জানতে চাইলে ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় প্রধান কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা প্রতিটি টিকিট কাউন্টার থেকে দিচ্ছি। টিকিট বিক্রি না করে-রাখার সুযোগ নেই। কাউন্টার থেকেই টিকিট বিক্রি করছি। এটা ঠিক কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় অতিরিক্ত। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে অনেকে টিকিট কাটতে পারছেন না এমন অভিযোগ সত্য নয়। বিষয়টা হচ্ছে নির্ধারিত টিকিটের বিপরীতে ২-৩ গুণ বেশি যাত্রী লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। লাইনের সামনে থাকাদের দেয়ার পর টিকিট শেষ হয়ে গেলেই শুধু পেছনের টিকিট প্রত্যাশীরা দাঁড়িয়ে থাকছেন। এ ব্যাপারে রেলওয়েসংশ্লিষ্টদের কিছুই করার থাকছে না। শফিকুল ইসলাম জানান, টিকিট প্রত্যাশীরা আমাদের কাছে সব সময়ই সম্মানিত। উত্তরাঞ্চলে যাওয়া টিকিট প্রত্যাশীদের চাহিদা সব সময় বেশি। প্রায় দেড় যুগের অভিজ্ঞতায় বলা যায়, ওই অঞ্চলে যতগুলো ট্রেন চলে,তা যাত্রীর তুলনায় কম। এবারই প্রথম উত্তরাঞ্চল যাত্রীদের জন্য জয়দেবপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত একটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালু করছি-যা ঈদের ৪ দিন আগ থেকে চলবে। এ ট্রেনের টিকিট জয়দেবপুর এবং কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিক্রি হবে। আর কমলাপুর স্টেশনে যাত্রীদের ভিড় কমাতে এবারই প্রথম দুটি স্থান থেকে টিকিট বিক্রি হচ্ছে। একটি মূল ভবনের সামনের কাউন্টার থেকে এবং অন্যটি ৮ নম্বর প্লাটফরম (শহরতলী) থেকে। শহরতলী থেকে রাজশাহী এবং খুলনাগামী টিকিট বিক্রি হচ্ছে। আর মূলভবন থেকে উত্তরাঞ্চলের টিকিট বিক্রি হচ্ছে। টিকিট পেতে বৃহস্পতিবার বিকাল থেকেই অনেক যাত্রী কমলাপুর স্টেশনে অবস্থান করেন। তাদের মধ্যে অনেকে শুক্রবার বেলা ১১টা পযর্ন্ত লাইনে দাঁড়িয়েও টিকিট কিনতে পারেননি। অভিযোগ রয়েছে, কেউ কেউ দলবদ্ধ দাঁড়িয়ে লাইন ভেঙে দিচ্ছে। ওই সময় লাইনের পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা লোকজন হুড়মুড় করে কাউন্টারের সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। এমনটা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও নিশ্চুপ থাকছেন। একাধিক নারী টিকিটপ্রত্যাশী জানান, ২৬টি কাউন্টারের মধ্যে মাত্র ২টি কাউন্টার তাদের জন্য। অথচ নারীদের দীর্ঘ লাইন কাউন্টার চত্বর ছাড়িয়ে প্লাটফরম রাস্তায় গিয়ে ঠেকেছে। রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, নারীরা প্রতিবছরই চরম দুর্ভোগে পড়েন। প্রতিকারে রেলওয়ের কর্মকর্তারা কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনের ন্যায় রাজধানীর আরও ৬টি স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে। শুক্রবার ৫ জুলাইয়ের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হয়। আজ ২ জুলাই ৬ জুলাইরের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হবে। ৩ জুলাই হবে ৭ জুলাইয়ের, ৪ জুলাই হবে ৮ জুলাইয়ের এবং ৫ জুলাই হবে ৯ জুলাইয়ের টিকিট বিক্রি। কমলাপুর রেলওয়ের মূল স্টেশন থেকে পুরো উত্তরাঞ্চলগামী আন্তঃনগর ও বীর মু. সি. ই (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল ট্রেনের; কমলাপুরের শহরতলি প্লাটফরম থেকে রাজশাহী ও খুলনাগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের; ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের; তেজগাঁও স্টেশন থেকে ময়মনসিংহ, জামালপুর, দেওয়ানগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেন ও দেওয়ানগঞ্জ ঈদ স্পেশাল ট্রেনের, ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে মোহনগঞ্জগামী মোহনগঞ্জ ও হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনের; ফুলবাড়িয়ায় (পুরাতন রেলওয়ে স্টেশন) স্টেশন থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী সব আন্তঃনগর ট্রেনের এবং জয়দেবপুরে বীর ম. সি. ই (পঞ্চগড়) ঈদ স্পেশাল ট্রেনের টিকিট বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা রেলওয়ে বিভাগীয় প্রধান বাণিজ্যিক কর্মকর্তা শওকত জামান মোহসী জানান, ঢাকা থেকে আন্তঃনগর ট্রেনের মোট ২৭ হাজার টিকিট বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া মেইলসহ মোট ৩৫ হাজার টিকিটি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে। তারা কাউন্টারে ১৫ হাজার টিকিট বিক্রি করছেন। বাকি টিকিট অনলাইনে বিক্রি হচ্ছে। ১৫ হাজার টিকিট ৭টি স্টেশনের কাউন্টার থেকে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু চাহিদা বেশি থাকায় শুধু কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনেই প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার লোক টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়াচ্ছেন। ঈদযাত্রায় লাইনে দাঁড়িয়ে যারা টিকিট কাটছেন, তাদের প্রায় ৯০ শতাংশই ৪টি করে টিকিট কেটে নিচ্ছেন। এতে সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা খুব অল্পসংখ্যক যাত্রী টিকিট কাটতে পারছেন, এটাই স্বাভাবিক। নির্ধারিত টিকিট বিক্রি শেষ হওয়ায়, যারা টিকিট পাচ্ছেন না, তারাই ক্ষোভে নানা অভিযোগ করছেন। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার মো. মাসুদ সারোয়ার বলেন, ১৫ হাজার টিকিট ৭টি স্টেশন থেকে বিক্রি হলে-এক একটি স্টেশনে কটি টিকিট বরাদ্দ থাকে? ২ থেকে আড়াই হাজার। কিন্তু এর বিপরীতে ২-৩ গুণ লোক লাইনে দাঁড়াচ্ছেন।