স্টাফ রিপোর্টার: মুজিববর্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর প্রদানে নানা অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনার বিষয়টি সরেজমিন তদন্ত করছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পাঁচ টিম। এসব টিম সারা দেশে প্রকল্প এলাকাগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখবে। যেখানে যেসব কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হবে। একই সঙ্গে ভেঙে পড়া ঘরগুলো পুনরায় নির্মাণ করা হবে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এসব টিম সারা দেশের বিভিন্ন জেলার উদ্দেশে রওনা হয়ে গেছে। প্রথম দফায় সারা দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলাকে পাঁচটি ব্লকে ভাগ করে পরিদর্শন শুরু করেছে এসব টিম। পরিদর্শনকারী টিমগুলোকে বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্মিত এবং নির্মাণাধীন বাড়িগুলোর নির্মাণশৈলী ও গুণগতমান, অনুমোদিত ডিজাইন ও প্রাক্কলন অনুযায়ী হয়েছে কিনা, তা যাচাই করার এবং ছবিসহ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সরেজমিন পরিদর্শনে যাওয়া উচ্চ পর্যায়ের পাঁচটি টিমের একটিতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন নিজেই। গতকাল দুপুরে তার নেতৃত্বে দুটি টিম মুন্সিগঞ্জ জেলার সদর উপজেলায় পৌঁছায়। সদর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়িগুলো পরিদর্শন ও উপকারভোগীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারা। মাহবুব হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলা এবং বগুড়া জেলার বগুড়া সদর, শেরপুর ও শাহজাহানপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় নির্মিত ও নির্মাণাধীন বাড়িগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করবে। আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুর রহমানের নেতৃত্বে অপর টিম হবিগঞ্জ সদর, মৌলভীবাজার সদর ও সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার বাড়িগুলো পরিদর্শন করবে। এ ছাড়া বাকি তিনটি টিমের মধ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্প প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে একটি টিম ময়মনসিংহ ও জামালপুর জেলা, প্রকল্পের উপ-প্রকল্প প্রকৌশলী মো. আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে একটি টিম নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলা, সহকারী প্রকল্প পরিচালক বদরুল আলমের নেতৃত্বে একটি টিম পাবনা, মানিকগঞ্জ, নাটোর জেলার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি সরেজমিন পরিদর্শনে গেছে।
মুন্সীগঞ্জে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি পরিদর্শনকালে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না তিনি বলেন, এটা প্রধানমন্ত্রীর প্রকল্প, স্বপ্নের প্রকল্প। একটা গরিব লোক যখন ঘর পান তখন তার একটা স্বপ্নের সূচনা হয়। কাজেই এটা নিয়ে আমরা কোনো অবহেলা করব না। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ড্রিম প্রজেক্ট হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প। আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে বিনা পয়সায় জমি ও ঘরের মালিকানা দেওয়া হচ্ছে। যেটাকে আমরা বলি ‘অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নে শেখ হাসিনা মডেল’।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি নির্মাণে ত্রুটির বিষয়টি সামনে আসতেই নড়েচড়ে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর নির্মাণে অনিয়ম, অবহেলা ও অর্থ আত্মসাৎকারীদের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে এগোচ্ছে। অভিযোগ তদন্ত করে অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে সরকার। এরই মধ্যে পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে।
মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীনের জন্য গৃহ প্রদান নীতিমালা অনুযায়ী উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি হলেন ইউএনও। অন্য চার সদস্য হলেন- সহকারী কমিশনার (ভূমি), এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী, সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা। অর্থাৎ ঘর নির্মাণে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে তাদের সার্বিক দায়-দায়িত্ব নিতে হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোর ইউএনও এবং অন্য তিন কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দায়দায়িত্ব নিরূপণ করে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের কর্মকর্তারা বলেছেন, কিছু কিছু ক্ষেত্রে ঘর নির্মাণের বেলায় নীতিমালা মানা হয়নি। ওইসব ক্ষেত্রে অনেক ঘরে নির্মাণ ত্রুটি রয়েছে। গুণগতমানও ঠিক হয়নি। ঘরের দেয়ালে ফাটল দেখা দিয়েছে। পিলার ভেঙে গেছে। দেয়াল ধসে পড়েছে। ঘর নির্মাণে ব্যবহৃত মালামালও ছিল নিম্নমানের। নিচু এলাকায় ঘর নির্মাণ করায় সামান্য বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আবার ভূমির মালিকরাও ঘর বরাদ্দ পেয়েছে। সব মিলিয়ে ভূমিহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ নিয়ে কয়েকটি উপজেলায় নীতিমালাবহির্ভূত কর্মকান্ডের ঘটনা প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে।