আমরা যেন শেখ হাসিনার পাতা ফাঁদে পা না দিই : মির্জা ফখরুল

স্টাফ রিপোর্টার: শেখ হাসিনার পাতানো ফাঁদে পা না দেয়ার বিষয়ে সবাইকে সর্তক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে উৎখাত করেছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে, শেখ হাসিনা ষড়যন্ত্র করছেন। তার পাতা ফাঁদে আমরা যেন পা না দেই। গতকাল রোববার বিকালে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এই আহ্বান জানা। এদিন বিকালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী দেশে ফেরেন। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আজকে দেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, দেশের স্থিতিশীলতা বিনষ্ট করার চক্রান্ত করা হচ্ছে। আজকে আমাদের সাবধানতার সাথে পা ফেলতে হবে। আমাদের ধীরে ধীরে এগুতে হবে। একটা অন্ধকারকে দূর করতে আরেক অন্ধকারকে দিয়ে যাওয়া যায় না, তাকে আলো দিয়ে অন্ধকার দূর করতে হয়। সেই আলোকবর্তিকা নিয়ে আমাদের সামনের দিকে এগুতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘এজন্য আমি সকলের কাছে আহ্বান জানাতে চাই, সকলে একযোগে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা করার জন্য, দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষা করার জন্য ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য কাজ অব্যাহত রাখতে হবে।’ ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অভিযান শুরু করায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সাধুবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট এটা কি ভাই, আমরা তো দেশের বাইরে ছিলাম। ডেভিল তো একমাত্র ফ্যাসিস্ট সরকারকেই জানি। এতদিনে পরে একটা বোধোদয় হয়েছে, সেজন্য তাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এর আগে গত ২ ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তারা ওয়াশিংটন যান। পরদিন লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মেয়ে ব্যারিস্টার জায়মা রহমান তার বাবার প্রতিনিধি হিসেবে ওই অনুষ্ঠানে অংশ নিতে ওয়াশিংটন যান। সেখানে তারা ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে অংশ নেয়া ছাড়াও দেশটিতে অবস্থানরত দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা সভায় অংশ নেন। যুক্তরাষ্ট্রে সফর সফল হয়েছে বলেও জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যের আপডেট প্রসঙ্গে দলটির মহাসচিব বলেন, ‘ম্যাডাম লন্ডনে আছেন, তিনি ভালো আছেন, তার ট্রিটমেন্ট চলছে। এদিকে, অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে কিনা-তা দেখা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেছেন, কোনো কাল বিলম্ব না করে সময় মতো, যৌক্তিক টাইমে নির্বাচন দিন, সবাই স্যালুট জানাবে। গতকাল রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে ১২ দলীয় জোটের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় তিনি এসব কথা বলেন। সংবিধান ও রাষ্ট্র ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক সংস্কার, অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে প্রণীত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা ও জনসম্পৃক্তি’ র্শীষ এই প্রশিক্ষণ কর্মশালা করে ১২ দলীয় জোট। নেতাকর্মীদের মধ্যে ৩১ দফা নিয়ে বিশদ আলোচনা করেন বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদি আমিন।
গয়েশ্বর বলেন, জনগণ অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই অদৃশ্য শক্তিকে দৃশ্যমান করতে হবে। একজন (শেখ হাসিনা) ষড়যন্ত্র করে কাপড় নিয়ে দেশে ছেড় পালিয়েছেন। এখন যারা নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র করছেন তারা আগামী দিনে কাপড় পড়েও পালানোর পথ পাবেন না। আমার দেখেছি, রাষ্ট্র পরিচালনায় সরকারের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। প্রধান উপদেষ্টা বলেন এক কথা, তার সহকারীরা বলেন আরেক কথা। প্রধান উপদেষ্টার কথা উপদেষ্টামন্ডলীর সকলের কথা কিনা সে ব্যাপারেও আমাদের সন্দেহ আছে। সম্প্রতি ধানমন্ডি’র ৩২ নম্বরের ঘটনা উলেস্নখ তিনি বলেন, ৬-৮ আগস্ট যদি ৩২ নম্বরের বাড়ি ভাঙচুর করে পুকুর তৈরি করে মাছ চাষ করতো কেউ কিছু বলতো না। ৬ মাস পরে আমাদের এই চেতনা বোধ আসলো কেন? আমার যদি ব্যাক টেডিশন তৈরি করি, তাহলে আগামীদিন আপনার আমার বাড়ি ভাঙচুর হবে। ভাঙচুরের নামে বাজে ট্রেডিশন চললে সংস্কার করে কি লাভ? এখন শেখ মুজিবরের মৃত দিবস পালিত হবে ৫ আগষ্ট। শেখ হাসিনা তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিয়েছেন। বর্তমান সরকারকে পেছন থেতক কারা ইন্দন দিচ্ছে তা দেশের মানুষ জানে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বলেন, ইসলামের নামে কারা দখলবাজি করছে তা বিভিন্ন দফতরে গেলে তা জানা যাবে।
গয়েশ্বর বলেন, ৩১ দফা একটি জাতীয় সনদ। ৬২ টি দল একমত হয়ে এই সদন প্রতিষ্ঠায় নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কর্মশালায় সভাপতির বক্তব্যে ১২ দলীয় জোটের প্রধান ও জাতীয় পার্টির (জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার বলেন, ৩১ দফা আজকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে অন্ত্যত সরব এবং বহুল চলমান একটি বিষয়। এটি বস্তুত পক্ষে সমগ্রহ বাঙ্গালী জাতির মনের আঙ্খাকার প্রতিফলন ঘটবে। এব্যাপারে আমাদের কারও কোনো দ্বিমত নেই। আমার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিস্থিত হলে অক্ষরে অক্ষরে প্রতিটি দফা বাস্তাবায়ন করবো। আমাদের এই কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধাকে আমাদের চিহ্নিত করতে হবে। দেশি-বিদেশী ষড়যন্ত্র রুখে দিতে হবে। তাহলে আমাদের জনগণের আঙ্ক্ষাকার প্রতিফল ঘটবে। জোটের মুখপাত্র বাংলাদেশ এলডিপি চেয়ারম্যান শাহাদাত হোসেন সেলিম, পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচারী সরকারের জুলুম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করেছি। আমরা চূড়ান্তভাবে প্রতিদিন প্রতিক্ষণ রাজপথে ছিলাম। জুলাই আগষ্টের যে অভ্যুত্থান, আমরা বিগত ১৫ বছর বিশ্বাস করতাম এই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী সরকারের পতন হবে। হাঠাৎ করেই গণঅভ্যুস্থানের সৃষ্টি হয়। আমরা বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কথা শুনে, ধৈয্য করে আগামীর ভবিষৎ বাংলাদেশ বির্নিমাণে কাজ শুরু করে দিয়েছি। তবে বর্তমানে আমরা একটা অশনি সংকেত দেখছি, আমরা আতঙ্কিত। কয়েকজনের উষ্কানিতে সমগ্রহ জাতি আজ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। উপদেষ্টারা বিপ্লবের চেতনা ধারণ করছেন না। তারা নিচেরা আখের গুছানোর কাজে ব্যস্ত আছেন। এসময় আরও বক্তব্য রাখেন, জমিয়াতে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মুফতি গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশের চেয়ারম্যান অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির (জাগপা), সিনিয়র সহ-সভাপতি রাশেদ প্রধান, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান শামসুদ্দিন পারভেজ। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ লেবার পার্টির মহাসচিব আমিনুল ইসলাম, ইসলামী ঐক্য জোটের মহাসচিব মাওলানা আব্দুল করিম, ১২ দলীয় জোটের নেতা ইসলামিক পার্টির মহাসচিব আবুল কাশেম, প্রগতিশীল জাতীয়তাবাদী দলের চেয়ারম্যান, ফিরোজ মো. লিটন, নয়া গণতান্ত্রিক পার্টির চেয়ারম্যান, এম এ মান্নান প্রমুখ। প্রশিক্ষণ কর্মশালায় ১২ দলীয় জোটের সহস্রাধিক নেতাকর্মী অংশ নেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More