আন্দোলনের গতি-প্রকৃতিতে সিদ্ধান্ত বিএনপির : অস্তিত্ব সংকটে শরিকরা
২০ দলীয় জোটের অবস্থা ছন্নছাড়া : জামায়াতের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়
স্টাফ রিপোর্টার: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে জমে ওঠছে মাঠের রাজনীতি। সারাদেশে বৃৃৃহৎ পরিসরে সমাবেশ করে নিজেদের শক্ত অবস্থান জানান দিচ্ছে বিএনপি। তবে দলটির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের অবস্থা ছন্নছাড়া। বারবার যুগপৎ আন্দোলনের কথা বললেও শরিকদের জন্য কোনো সুনির্দিষ্ট বার্তা নেই বিএনপির পক্ষ থেকে। জোট ছেড়ে অনেক দল বেরিয়ে গেলেও তাদের ফের টেনে রাখা হয়েছে অনেকটা ‘জোড়াতালি’ দিয়ে। দু-একটি দলের ছোটখাটো কর্মসূচি থাকলেও কিছু দল একেবারেই নিষ্কিয়। জোটের শক্তিশালী দল জামায়াতের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়। এ অবস্থায় অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে অধিকাংশ শরিক দল। তথ্য বলছে, ২০ দলীয় জোট শরিকদের মধ্যে জামায়াত, অলি আহমদ নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এলডিপি, সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, মোস্তাফা জামাল হায়দার নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি (কাজী জাফর), মোস্তাফিজুর রহমান ইরান নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ লেবার পার্টি, সৈয়দ এহসানুল হুদার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ জাতীয় দল কিছু কিছু কর্মসূচি পালন করে। এছাড়া মাঝে মধ্যে বিএনপি নেতাদের নিয়ে প্রেস ক্লাবকেন্দ্রিক অনুষ্ঠান করে খোন্দকার লুৎফর রহমান নেতৃত্বাধীন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপা ও ফরিদুজ্জামান ফরহাদের ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপি। ন্যাপ (ভাসানী), জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম, সাম্যবাদী দল, ডেমোক্রেটিক লীগ, ইসলামী ঐক্যজোট, ইসলামিক পার্টি, এনডিপি, পিপলস লীগ, মুসলিম লীগ বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া কঠিন। এদের কোনো কার্যালয় আছে বলেও জানা নেই। রাজনৈতিক কোনো কর্মসূচি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এরা কোনো ভূমিকাও রাখতে পারছে না। ২০ দলের এক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান প্রয়াত শেখ শওকত হোসেন নিলু জোট ত্যাগের পর ২০ দলীয় জোটের নাম ধরে রাখতে তার দলের প্রধান করা হয় ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপের নিবন্ধিত অংশের নেতৃত্বাধীন জোবেল রহমান গানি জোট ত্যাগ করলে দলটির মহানগর পর্যায়ের নেতা শাওন সাদেকীকে ন্যাপ সভাপতি করে জোটে রাখা হয়। আবার আব্দুল লতিফ নেজামী নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোট জোট ত্যাগ করলে সিলেটের আব্দুর রকিবের নেতৃত্বে একটা ইসলামী ঐক্যজোট এবং ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি-এনডিপি চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা জোট ত্যাগের পর ক্বারি আবু তাহের নামে একজনকে এনডিপির চেয়ারম্যান করা হয়। প্রকৃত অবস্থা যাই থাক ২০ দলীয় জোটের সব দল সক্রিয় রয়েছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান। তিনি বলেন, সবার সাংগঠনিক সক্ষমতা এক রকম নয়। সবাই সক্রিয় রয়েছি। আমাদের প্রধান শরিক বিএনপি বিষয়টা মূল্যায়ন করবে। আমরা আমাদের মতো করে নিয়মিত কর্মসূচি পালন করছি। বাংলাদেশ জাতীয় দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ এহসানুল হুদা বলেন, ২০ দলীয় জোটের কিছু দল কখনোই সক্রিয় ছিলো না। কিছু দলের রয়েছে ভগ্নাংশ। বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টি কী করে? তাদের কোনো কর্মসূচি দেখা যায় না। অন্যদিকে নিষ্ক্রিয় থাকা দলের মধ্যে ন্যাপ ভাসানীর চেয়ারম্যান আজহারুল ইসলাম ক বলেন, গত এক বছরে আমরা সাত থেকে আটটি কর্মসূচি পালন করেছি। করোনা মহামারি, রাজনীতির বিরূপ পরিস্থিতি, অর্থনৈতিক সংকট-সব মিলিয়ে এবার বেশি কর্মসূচি পালন করতে পারিনি। তিনি বলেন, বিএনপি ছাড়া ২০ দলীয় জোটের সব শরিক দলের একই অবস্থা। শরিকদের কয়েকটি দলের কোনো কর্মকা-ই নেই। বাংলাদেশ মাইনরিটি জনতা পার্টির চেয়ারম্যান সুকৃতি কুমার মন্ডল বলেন, আমরা প্রচলিত রাজনীতি করি না। আমাদের রাজনীতির ধরন ভিন্ন। আমরা লোক দেখানো কর্মসূচি পালন করি না। তবে দেশের যে সব জায়গায় ধর্মীয় সংখ্যালঘু হামলার ঘটনা ঘটেছে সেখানে আমরা গিয়েছি, ভূমিকা রেখেছি। এছাড়া আমাদের সাংগঠনিক কর্মকা- চলমান। জোটের অন্যতম শীর্ষ দল এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ বলছেন ভিন্ন কথা। তিনি বলেন, বিএনপি যে যুগপৎ আন্দোলন পরিকল্পনা দিয়েছে, সে অনুযায়ী ২০ দলীয় জোটের দলগুলো নিজ নিজ জায়গা থেকে কাজ করছে। আমরা (এলডিপি) এক মাসের মধ্যে ঢাকায় দুটি বড় কর্মসূচি করেছি। জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে গত ৮ অক্টোবর বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল এবং ২ নভেম্বর একটা বড় সমাবেশ করেছি। অনুরূপভাবে অন্য দলগুলোও নিজ নিজ উদ্যোগে সামর্থ্য অনুযায়ী কাজ করে যাচ্ছে। এসব বিষয়ে জোটের সবচেয়ে বড় শরিক জামায়াতের প্রচার বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত মুখপাত্র মতিউর রহমান আকন্দ বলেন, জামায়াতের কর্মসূচি আগের মতোই আছে। দফাভিত্তিক কর্মসূচি পালন করছি। জামায়াতের অভ্যন্তরীণ নির্বাচন চলছে, এরই মধ্যে আমির নির্বাচিত হয়েছেন। কর্মসূচি যথারীতি চলছে। সার্বিক বিষয়ে ২০ দলীয় জোটের সমন্বয়কারী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, জোট আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে দেয়া হয়নি, এখনো আছে। সংলাপে জোটের শরিক দলগুলো একমত হয়েছে, তারা যুগপৎ আন্দোলনটা শুরু করবে। যার যার অবস্থান থেকে আন্দোলন শুরু হয়ে চলতে থাকবে। যারা আন্তরিকতার সঙ্গে সেই আন্দোলনে থাকবে, তারা কোনো এক পর্যায়ে গিয়ে আবার ঐক্যবদ্ধ হবে কি না সেটা এখনই বলা যাবে না। আন্দোলনের গতি-প্রকৃতির ওপর সেটা নির্ভর করবে।