স্টাফ রিপোর্টার: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের স্বপ্ন যারা দেখছেন সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসবেন দয়া করে। এটা আর জীবনে হবে না। আর ক্ষমতায় যাওয়ার ইচ্ছা যাদের, আসেন নির্বাচন করেন। জনগণ যাকে মেনে নেবে সেই ক্ষমতায় যাবে। এখানে আওয়ামী লীগ কোনোদিন হস্তক্ষেপ করবে না।’ গতকাল বৃহস্পতিবার চলতি একাদশ জাতীয় সংসদের ২১তম অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে সংসদ নেতা শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত আছে বলেই, ১৪ বছর ধরে ধারাবাহিক সরকার আছে বলেই দেশে উন্নয়ন হচ্ছে। মানুষ সুফল পাচ্ছে। তিনি বলেন, এদেশের কিছু লোক বিদেশে গিয়ে নালিশ করে। দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে। এদেশের নাকি কিছুই হচ্ছে না। কিন্তু আজকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল। শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবর্তন তাদের চোখে পড়ে না। এখন তারা আনতে চায় অনির্বাচিত সরকার। আমরা দেখেছি অনির্বাচিত সরকারের সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্য-উন্নয়ন ধ্বংস হয়েছে। উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। ভয়ঙ্কর অবস্থা হয়েছিলো। সারাদেশের মানুষ আতঙ্কের মধ্যে থেকেছে। আবার কি এ দেশের মানুষকে আতঙ্কের মধ্যে নিয়ে যেতে চায়? আবার কি এ দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে চায়?’ অনির্বাচিত সরকার যারা চায় তারা ব্যক্তিস্বার্থকে বড় করে দেখে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সাবধান থাকতে হবে, সজাগ থাকতে হবে। এরা কোথা থেকে কী পয়সা পাবে সে লোভে অন্যের কাছ থেকে পয়সা খেয়ে আমার দেশে অরাজক অবস্থা সৃষ্টি করতে চায়। আমার দেশের মানুষের ওপর বিশ্বাস আছে, আস্থা আছে। বাংলাদেশের মানুষ আজকে যে জীবনে একটা স্থিতিশীলতা পেয়েছে, নিশ্চয়ই তারা তা ধ্বংস হতে দেবে না। এটা হালে পানি পাবে না।’ তিনি বলেন, ‘অনির্বাচিত সরকারের নামে যাদের ক্ষমতায় আসার ইচ্ছা তাদেরকে বলবো রাজনীতি করেন, মানুষের কাছে যান, জনগণের ভোট নেন, নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় আসেন। কোনো আপত্তি নাই। মানুষ যাকে ভোট দেবে তারাই সরকারে আসবে। নির্বাচন যে অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ হয় তা তো আমরা প্রমাণ করে দিয়েছি।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কিছু কিছু লোক বলে আসছে দুই তিনবছর অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকলে ক্ষতিটা কী, মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যাবে না। এটা কোনো ধরনের কথা? আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার আসবে। যার জন্য এত সংগ্রাম, আত্মত্যাগ, জেল-জুলুম সহ্য করেছি। যারা বলে অনির্বাচিত সরকার আসলে মহাভারত অশুদ্ধ হবে না, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন মহাভারত হয়তো তাদের কাছে অশুদ্ধ হবে না, কিন্তু আমাদের সংবিধান? যে সংবিধান জনগণের অধিকার সুরক্ষিত করেছে, সেই সংবিধান বাদ দিয়ে অনির্বাচিত সরকার যারা আনতে চায় তারা কি স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে? তারা কি গণতন্ত্র, জনগণের অধিকারে বিশ্বাস করে? তাদের কষ্টটা কোথায়? জনগণ ভালো থাকলে তাদের কষ্ট লাগে কেন?’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ পেট ভরে খেতে পারলে তাদের দুঃখটা কোথায়? হয়তো দুঃখ আছে। কারণ এই দেশের মানুষগুলো দরিদ্র থাকবে, কঙ্কালসার থাকবে, হাড্ডিসার থাকবে। আর তাদের দেখে দেখে বিদেশ থেকে ভিক্ষা নিয়ে নিজেদের উদরপূর্তি করবে, কেউ বিএমডব্লিউতে চড়বে। তাদের আমদানি কমে যাচ্ছে। সেই জন্য তারা অনির্বাচিত সরকার চায়।’ সংসদ নেতা বলেন, ‘অনেকেই বলেন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে না, এখানে অনির্বাচিত সরকার আনতে হবে। ছয়টি উপ-নির্বাচন হলো। আমার প্রশ্ন এ নির্বাচন সম্পর্কে তো কেউ একটা কথাও বলতে পারে নাই। এ নির্বাচন যে স্বচ্ছ, অবাধ-নিরপেক্ষ হয়েছে এটা কী প্রমাণ করে না আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই নির্বাচন কমিশন স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে নির্বাচন করার সক্ষমতা রাখে। সেখানে সরকার কোন রকম হস্তক্ষেপ করে নাই, করবেও না।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি এটা ঠিক। এর মধ্য দিয়ে আবার দেখা যায় বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে কীভাবে বোমা বানাবে জঙ্গিবাদ করবে, সেগুলো দেখায়। এগুলো যদি আড়ি না পাতা যায় আমরা জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস দমন করবো কীভাবে? তাদের এ সমস্ত তথ্য আমরা পাব কীভাবে। কাজেই আমাদের তো এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে। আড়িপাতা নিয়েও অনেকে কথা বলেন। কারণটা কী। কোন রহস্যের কথা বলবেন, যেটা সরকার শুনে ফেললে সমস্যা হবে। সরকার শোনে না। এটা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসী কর্মকা- রোধ করার জন্য যেটুকু করার সেটুকুই করে, তার বেশি আর কিছু করে না। আর এটা করা যায় বলেই এটা আইনসিদ্ধ। এটা করা যায় বলেই এটা সব দেশে আছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো কোনো দল আন্দোলন করছে, জোট করছে, মিছিল মিটিং করছে। বাধা দেয়া হচ্ছে না। আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকতে প্রতিপদে বাধা ছিলো। তিনি বলেন, ‘আমাদের মাঝে গণতান্ত্রিক সহনশীলতা আছে, আমরা তা দেখাচ্ছি। মিছিল মিটিং যা-ই করতে চায়, আমরা করতে দিচ্ছি। তবে জনগণের জানমাল রক্ষা করা, জনগণের নিরাপত্তা দেয়া এটা আমরা আমাদের কর্তব্য মনে করি। কাজেই অগ্নিসন্ত্রাসীরা যখনই মিছিল-মিটিং করতে যায় তখন আমরা আতঙ্কে থাকি যে, কখন কোন গাড়িতে আগুন দেবে, বাসে আগুন দেবে, নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মারবে। সেটা যাতে মারতে না পারে সেজন্য আমাদের দল, দেশবাসী সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করলে কেউ কিছু বলবে না। কোনো রকম অরাজকতা অগ্নিসন্ত্রাস, ভাঙচুর, কোনো ধরনের জঙ্গিবাদী কাজ করতে গেলে তার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নাই।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেকই দাবি করেন আজকের যে উন্নয়ন, সেটা নাকি কোনো কোনো বড় বড় এনজিও থেকে শুরু করে অনেক অর্থনীতিবিদ বা আতেল দাবি করে তাদের কারণেই হয়েছে। এটা ঠিক নয়। একমাত্র রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এবং তার সঙ্গে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা, যথাযথ নীতিমালা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নের ফলেই কিন্তু সম্ভব হয়েছে। দারিদ্র্যের হার কমেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যদি রাজনৈতিক নেতৃত্ব দ্বারা না হয়, তাহলে এর আগে হলো না কেন? তার আগে তো দেখিনি এতো দ্রুত দারিদ্র্য বিমোচন হতে। দারিদ্র বিমোচনের গালভরা বক্তব্য শুনেছি, কিন্তু ফলাফল দেখেনি। ফলাফল আওয়ামী লীগ দেখাতে পেরেছে।’ চলতি অধিবেশনে ২৬ দিন সংসদের বৈঠক বসেছে-উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ৫ জানুয়ারি সংসদে ভাষণ দেন। সেই ভাষণের ওপর আনীত ধন্যবাদ প্রস্তাব সংসদ সর্বসম্মতিক্রমে গ্রহণ করেছে। এতে ২০৯ জন সংসদ আলোচনায় অংশ নিয়েছেন। সংসদ নেতা বলেন, ৪০ ঘণ্টা ২৭ মিনিট আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সরকারি বিল ১৯টি এসেছিলো, এর মধ্যে ১০টি পাস হয়েছে। সংসদীয় কমিটিতে পরীক্ষাধীন সাতটি, পাসের অপেক্ষায় একটি এবং উত্থাপনের অপেক্ষায় একটি। একটি অধ্যাদেশ আইন হিসেবে পাস করার কথাও জানান সরকারপ্রধান।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ