বিপাকে পড়লে প্রেমিক বা প্রেমিকাকে অনেক সময়ই খাটের নিচে বা আলমারির ভেতর ঢুকে লুকানো নতুন কিছু নয়। বাস্তবে না হলেও কিছু সিনেমা নাটকে এ দৃশ্য দেখেছেন অনেকে । কিন্তু পাকিস্তানের সাবেক অফ স্পিনার ও বাংলাদেশ দলের সাবেক স্পিন কোচ সাকলায়েন মুশতাকের জীবনে এমন ঘটনা বাস্তবেই ঘটেছে। প্রেমিকা নয়, সাকলায়েনকে আলমারির ভেতর লুকিয়ে রাখতে হয়েছিল তাঁর বিয়ে করা স্ত্রীকেই!
ঘটনাটা ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময়ের। বিশ্বকাপে সেবার পাকিস্তান ক্রিকেট দলের খেলোয়াড়েরা পরিবারের সদস্যদের ইংল্যান্ড নিয়ে যাওয়ার অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু টুর্নামেন্টের মাঝপথে হঠাৎ করেই টিম ম্যানেজমেন্ট সিদ্ধান্ত নেয়, পরিবারের সদস্যদের দেশে ফেরত যেতে হবে। হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত ক্ষোভের সঞ্চার করেছিল সাকলায়েনসহ অন্যান্যরা খেলোয়াড়দের মধ্যে। অন্যরা বোর্ডের সিদ্ধান্ত মেনে স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যদের দেশে ফেরত পাঠালেও সাকলায়েন নির্দেশটি না মানার সিদ্ধান্ত নেন। সাকলায়েন বলছিলেন, ‘আমি সিদ্ধান্তটা মানতে পারিনি। প্রধান কোচ রিচার্ড পাইবাসকে গিয়ে বলি, সবকিছুই তো ঠিকমতো চলছে, তাহলে এই সিদ্ধান্ত কেন? আমি নির্দেশটি না মানারই সিদ্ধান্ত নিলাম।’
এর পর থেকে স্ত্রীকে হোটেল রুমে লুকিয়ে রেখেই চলছিল দিনকাল। কিন্তু একদিন সত্যিই সত্যিই বেশ বিপদে পড়ে গিয়েছিলেন সাকলায়েন। টিম ম্যানেজমেন্ট মনে করল, খেলোয়াড়েরা নির্দেশ মেনেছে কিনা, সেটি পরীক্ষা করে দেখা দরকার। দলের কোচ আর ম্যানেজার হোটেলে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের কক্ষ পরিদর্শন করা শুরু করলেন। সাকলায়েন বললেন, ‘কোচ, ম্যানেজার হঠাৎ করেই প্রত্যেকের হোটেল কক্ষ পরিদর্শন করা শুরু করলেন। আমি পড়লাম বিপদে। স্ত্রীকে নিয়ে কী করি! হঠাৎ মাথায় এল তাঁকে হোটেল কক্ষের আলমারিতে লুকিয়ে রাখলেই তো হয়! স্ত্রীও রাজি হলো এতে। ঢুকে পড়ল আলমারির মধ্যে।’
ম্যানেজার সাহেব গম্ভীর মুখে কক্ষ পরিদর্শনে এলেন। সব দেখে চলেও গেলেন। সাকলায়েনের বুদ্ধি কাজে লেগে গেল সে যাত্রা। কিন্তু সতীর্থদের চোখ এড়াবেন কীভাবে। আজহার মেহমুদ ও মোহাম্মদ ইউসুফের (তখন ইউসুফ ইয়োহানা) হাতে শেষ পর্যন্ত ঠিকই ধরা খেলেন তিনি। সাকলায়েন বলছিলেন, ‘অবসর সময়ে আমরা একজন আরেকজনের কক্ষে গিয়ে আড্ডা দিতাম। আজহার আর ইউসুফও আমার কক্ষে এসেছিল গল্প করতে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরই তাঁরা টের পেয়ে গেল আমার স্ত্রীর উপস্থিতি। ধরা পড়ে স্ত্রীকে আলমারি থেকে বেরিয়ে আসতে বললাম। ওরা অবশ্য বিষয়টিকে বন্ধুসুলভ দৃষ্টিতেই নিয়েছিল।’
পাকিস্তানের হয়ে ৪৯টি টেস্ট আর ১৬৯টি ওয়ানডে খেলে সাকলায়েনের উইকেট যথাক্রমে ২০৮ ও ২৮৮টি। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে তাঁর পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। ১০ ম্যাচে ১৭ উইকেট পেয়ে সর্বোচ্চ উইকেটশিকারিদের তালিকায় পাঁচে ছিলেন সাকলায়েন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তুলে নিয়েছিলেন দুর্দান্ত এক হ্যাটট্রিকও।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ