রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ১০ উইকেটের বিশাল জয়
মাথাভাঙ্গা মনিটর: রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে প্রথম ইনিংসে পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানরা রান কম করেননি। স্বাগতিকরা ৪৪৮/৬ রানে ইনিংস ঘোষণার পর বাংলাদেশের ব্যাটাররাও কম যাননি। মুশফিকুর রহীমের ১৯১ রানের ওপর ভর করে গড়েন রানের পাহাড়, তারপর দ্বিতীয় ইনিংসে স্পিনাররা নিলেন একের পর এক উইকেট। এমন ব্যাটিং স্বর্গে পেসাররাও খারাপ করেননি। দলীয় পারফরম্যান্সের এমন দারুণ সমন্বয়ে রাওয়ালপিন্ডিতে বাংলাদেশ পেয়েছে ১০ উইকেটের ঐতিহাসিক জয়। এর আগে ২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে জয়ের খুব কাছে গিয়েও হেরেছিল বাংলাদেশ। সেবার টাইগারদের হৃদয় ভেঙে পাকিস্তানকে রক্ষা করেছিলেন ইনজামাম উল হক। দুই দশকেরও বেশি সময় পর এবার রাওয়ালপিন্ডিতে টাইগারদের গর্জন! বিদেশের মাটিতে সবমিলিয়ে বাংলাদেশের সপ্তম জয় এটি। টেস্টে বাংলাদেশের এটিই প্রথম ১০ উইকেটে জয়। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৩ টেস্ট খেলে বাংলাদেশের প্রাপ্তি ছিল ২০১৫ সালে খুলনা টেস্ট ড্র। ১৪তম টেস্টে এসে বাংলাদেশ পেলো ঐতিহাসিক জয়। পাকিস্তান নবম প্রতিপক্ষ, যাদের টেস্টে হারালো বাংলাদেশ। বাকি থাকলো শুধু ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা। দেশের বাইরে বাংলাদেশের এটি মাত্র সপ্তম জয়, সবমিলিয়ে ২০তম। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, রান তাড়ায় বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট জয়ও এটি।
দেশের বর্তমান বাস্তবতা এবং সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের কারণে পাকিস্তান সফরের আগে এই দলটাই ছিল একেবারে আলোচনার বাইরে। অথচ সেই দলটাই পাকিস্তানের মাটিতে পাকিস্তানের পূর্ণ শক্তির দলকে হেসেখেলে হারালো। সেটাও কোনো বিশেষ নৈপুণ্যে নয়। পুরোপুরি দলীয় পারফরম্যান্সে। প্রথম ইনিংসের কথাই ধরুন। টেস্টের প্রথম দিনে রাওয়ালপিন্ডির ভেজা উইকেটের সুবিধা নিয়ে ১৬ রানেই ৩ উইকেট ফেলে দিয়েছিলেন পেসাররা। ব্যাটসম্যানরা মাঝের দুই দিনে ভালো কন্ডিশনের সুযোগ নিয়েছেন। এরপর শেষদিনে ভেঙে যাওয়া উইকেটের সুবিধাটা নিলেন সাকিব-মিরাজরা। বাংলাদেশের ফিল্ডিং ভুলে গেলেও চলবে না। উদাহরণ হিসেবে লিটন দাসকে নিতে পারেন। বাবর আজমের একটি ক্যাচ মিস করার পরও পুরো ম্যাচে দুর্দান্ত ফিল্ডিং করেন লিটন। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৬টি ডিসমিসালের সঙ্গে জড়িত ছিলেন এই উইকেটকিপার ব্যাটার। অবশ্য পুরো দলের বডি ল্যাঙ্গুয়েজই ছিল অসাধারণ।
সর্বশেষ তিন বছরে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বোলারদের গড় সবচেয়ে ভালো। ২২ গড়ে উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা, যা এই সময়ে সর্বনিম্ন। গতকাল রাওয়ালপিন্ডিতে এমন গড় বা এর চেয়ে ভালো কিছু করার প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। বাংলাদেশের বোলাররা ভালোটাই করেছেন। দ্বিতীয় ইনিংসে ১ উইকেটে ২৩ রান তুলে রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের চতুর্থ দিন শেষ করে পাকিস্তান। বাংলাদেশকে আবারো ব্যাট করাতে ৯৪ রান দরকার ছিল দলটির। উইকেটে ছিলেন আবদুল্লাহ শফিক ও শান মাসুদ। দিনের দ্বিতীয় ওভারেই পাকিস্তান অধিনায়ক শান মাসুদকে লিটন দাসের ক্যাচে পরিণত করেন হাসান মাহমুদ। তবে মাসুদের ক্যাচ নেয়া লিটনই পরের ওভারে শরীফুলের বলে বাবর আজমের ক্যাচ ছাড়েন। টেস্ট ক্রিকেটে দেড় বছরেরও বেশি হাফ সেঞ্চুরিহীন বাবর অবশ্য দ্বিতীয় জীবনকে খুব একটা কাজে লাগাতে পারেননি। ২২ রানে নাহিদ রানার করা ঘণ্টায় ১৪৬.৪ কিলোমিটার গতির বলে ড্রাইভ খেলতে গিয়ে ইনসাইড এজ হয়ে বোল্ড হন। এরপর পাকিস্তানের ভরসা ছিল সৌদ শাকিল। কী মনে করে যেন পরের ওভারেই সাকিবের বলে ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে শট খেলতে চাইলেন শাকিল। ফলাফল স্টাম্পড হয়েছেন প্রথম ইনিংসে ১৪১ রান করা শাকিল। টেস্ট ক্যারিয়ারে যা তার প্রথম শূন্য। ৬৭ রানে ৪ উইকেট হারানো পাকিস্তান এরপর পাল্টা আক্রমণের পথ বেছে নেয়। শফিককে সঙ্গে নিয়ে রিজওয়ান গড়েন ৩৬ বলে ৩৭ রানের জুটি। রিজওয়ানই ছিলেন আক্রমণের নেতৃত্বে, শফিক খেলছিলেন দেখেশুনে। তবে সাকিবকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে সাদমানের হাতে ক্যাচ দেন এই ওপেনার। পরের ওভারেই মিরাজ ফেরান সালমান আলী আগাকে। এরপর রিজওয়ান একলা লড়াই চালিয়ে যান। তুলে নেন ফিফটি। তবে সেই ফিফটি বাংলাদেশের সামনে শঙ্কার কারণ হতে পারেনি। মিরাজের বলে ৫১ রান করে বোল্ড হন রিজওয়ান। এরপর শেষ উইকেট যাওয়া ছিল সময়ের অপেক্ষা। সেটাই হয়েছে। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে পাকিস্তানের শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আলীকে ফেরান মিরাজ। ১৪৬ রানেই অলআউট হয় পাকিস্তান, যা টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বনিম্ন। পাকিস্তান ২৯ রানের লিড পেলে বাংলাদেশের জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ রানের। সহজ লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬ ওভার ৩ বলেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। জাকির হাসান অপরাজিত ছিলেন ১৫ রান করে। আরেক ওপেনার সাদমান অপরাজিত ৯ রান করেছেন।
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.