মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের চ্যাম্পিয়ন কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব
মেহেরপুর অফিস: কাগজ, কলম কিংবা ক্যামেরা নয় ব্যাটবল হাতে মাঠ মাতিয়েছেন দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলার সাংবাদিকরা। নেচে গেয়ে মাতিয়ে রাখে পুরো মাঠ। সাংবাদিকদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরির উদ্দেশ্যেই এ আয়োজন বলে জানালেন আয়োজক কমিটি। মেহেরপুর প্রেসক্লাব বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে মেহেরপুর সরকারি উচ্চ বালক বিদ্যালয় মাঠে বঙ্গবন্ধু-টি-১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। টুর্নামেন্টের সার্বিক পৃষ্টপোষক ছিলো ওয়ালটন প্লাজা।
সারাদিনের কর্মব্যস্ততার মধ্যে একটু অবসর মেলানোই দায় সাংবাদিকদের। অথচ দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের চার জেলা মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরা ব্যাটবল হাতে নিয়ে মাঠে। চারছক্কার সাথে সাথে মেতে উঠলেন সাংবাদিকরা। কখনও কখনও বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে নৃত্য। সাথে ছিলো মাঠভর্তি দর্শক। মেহেরপুর প্রেসক্লাব ও বিজয়ের সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু টি-১০ ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন। সকালে ভার্চুয়ালী টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। সাংবাদিকরা বিভিন্ন খেলার সংবাদ পরিবেশন করে আসে। তারাই এ প্রতিযোগিতায় ব্যাটবল হাতে নিয়ে গিয়েছেলেন শৈশবে।
ফাইনালে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবকে ৬৬টি রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব। টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেয় কুষ্টিয়া। নির্ধারিত ১০ ওভারের খেলায় ১৫২ রান সংগ্রহ করে তারা। ১৫৩ রানের লক্ষ্য নিয়ে খেলতে নেমে ঝিনাইদহ সংগ্রহ করে ৮৬ রান। এর আগে টুর্নামেন্টের প্রথম খেলায় অংশ নেয় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব ও ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব। টসে জিতে প্রথমে ব্যাটে নামে চুয়াডাঙ্গা। জবাবে নির্ধারিত ১০ ওভার শেষ হওয়ার কয়েকটি বল থাকতেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে ফাইনালে ওঠে ঝিনাইদহ। দ্বিতীয় খেলায় স্বাগতিক মেহেরপুরকে হারিয়ে ফাইনালে ওঠে কুষ্টিয়া প্রেসক্লাব।
এদিকে, টুর্নামেন্টের প্রথম খেলায় ঘটে এক অপ্রত্যাশীত ঘটনা। শুধুমাত্র প্রেসক্লাবের সদস্যদের নিয়ে খেলার শর্ত থাকলেও প্রেসক্লাবের সদস্য না হয়েও ঝিনাইদহের হয়ে খেলতে নামেন এক খেলোয়াড়। এমন অভিযোগ প্রথমদিকে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাব অস্বীকার করলেও একপর্যায়ে তা স্পষ্ট হয়ে যায়। অনিয়মের বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ার পরও ঝিনাইদহ তাদের ওই খেলোয়াড় ছাড়া খেলবে না বলে জানিয়ে দেয়। এ ঘটনায় প্রায় ১৫ মিনিট বন্ধ থাকে খেলা।
একপর্যায়ে জনগণের সামনে মেহেরপুর প্রেসক্লাবসহ সকল সাংবাদিকদের সম্মান রক্ষার্থে খেলা চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সভাপতি সরদার আল আমিন। নিজদলের খেলোয়াড়দের সাথে কথা বলে সরদার আল আমিন ঘোষণা দেন ‘আমরা সকল অনিয়ম মেনে নিয়েও ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে রাজি, আপনারা মাঠে নামুন।’
এদিকে, শর্ত থাকা সত্বেও বাইরের খেলোয়াড় নামানোর কারণে ঝিনাইদহের প্রতি যেমন ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে তেমনই এ অনিয়ম সাদরে মেনে নেয়ায় আয়োজক মেহেরপুর প্রেসক্লাবের প্রতিও ক্ষোভ প্রকাশ করেন চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্যরা। এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাব সদস্য ও সাংবাদিক সমিতির অর্থ সম্পাদক উজ্জ্বল মাসুদ বলেন, ‘আমরা হেরে গিয়েও জিতেছি। তবে এ ঘটনাটি আসলেই দুঃখজনক। আমাদেরও অনেক সাংবাদিক রয়েছেন যারা ভালো খেলোয়াড় কিন্তু প্রেসক্লাবের সদস্য নন। আমরা তাদের নিয়ে আসিনি। তিনি আরও বলেন, আমরা চার জেলার সাংবাদিকরা এক হয়েছি। এখানে আমাদের মিলনমেলায় রূপ নেয়ার কথা ছিলো। অনেকেই পরিচিত রয়েছেন, আবার অনেকের সাথে পরিচয় হতো। আর খেলাটা শুধু আনন্দের। তবে খেলায় জেতার লক্ষ্য সবারই থাকে। তবে সেটা আন্তরিকতার মধ্যে হলে অবশ্যই ভালো হতো। আগামীতেও এ ধরনের অনুষ্ঠানের আয়োজন হতো সকলের অংশগ্রহণে।’
কুষ্টিয়া প্রেসক্লাবের সাংবাদিক তুহিন খন্দকার জানান, অনেক বছর পর ব্যাটবল হাতে। এক দলে প্রতিদন্দ্বী অন্য দলের সাংবাদিক। এ এক অন্যরক অনুভূতি কাজ করেছে। সাথে মাঠভরা দর্শক। আর এ আয়োজনের মধ্য দিয়ে চার জেলার সাংবাদিক একত্রিত হওয়া। চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সভাপতি দৈনিক মাথাভাঙ্গার সম্পাদক ও প্রকাশক সরদার আল আমিন জানান, এর আগে এ অঞ্চলে কখনই এ ধরনের আয়োজন হয়নি। চারটি জেলার সাংবাদিক কখনও একত্রিত করা যায়নি। আর বিজয়ের মাসে এ আয়োজন অংশ নিয়ে নিজেকে গর্বিত মনে হচ্ছে। এতে সকলের মাঝে বাড়বে ভাতৃত্ববোধ।
খেলার পৃষ্টপোষক মেহেরপুর ওয়ালটন প্লাজার ব্যবস্থাপক দেওয়ান শাহ আলম জানান, শুধু ব্যবসা নয় আমরা ও সামাজিক বিভিন্ন কজেও অংশ নিয়ে থাকি। এটি তারই উদাহরণ। মেহেরপুর প্রেসক্লাব সকল সাংবাদিকদের একত্রিত করেছে আর আমরা তাদের অংশিদার হয়েছি। এটিই আমাদের মাঝে বড় প্রাপ্য। আর বিজয়ের মাসে বঙ্গবন্ধুর নামে মিডিয়াকাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্ট দর্শকদের কাছে আরও আকর্ষণীয় করে তুলেছে। আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক ও মেহেরপুর প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য রাশেদুজ্জামান জানান, জাহিদ, উজ্জল, জাকির ও আমাকে নিয়ে প্রেসক্লাবের ক্রীড়া কমিটি গঠন করা হয়। তারপর থেকেই নতুন কিছু করার কথা ভাবছিলাম। হঠাৎ মনে হলো ৪ জেলার সাংবাদিকদের মিলন মেলার কথা। উপলক্ষ বেছে নিলাম ক্রিকেট। আসলে নিজেদের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি ও একে অপরকে জানার উদ্দেশ্যই ছিলো এ আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য। এর আগে ভার্চুয়ালি টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জজ কোর্টের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাড. পল্লব ভট্টাচার্য।
খেলা শেষে বিজয়ীদের হাতে পুরষ্কার তুলে দেন জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম রসুল। বিশেষ অতিথি ছেলেন পৌর মেয়র মাহফুজুর রহমান রিটন। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন মেহেরপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুক হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক, ক্রীড়া কমিটির আহ্বায়ক রাশেদুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিনিয়র সাংবাদিক রুহুল কুদ্দুস টিটো।
জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ গোলাম রসুল ও পৌর মেয়র ঘোষণা দেন আগামীতে বিজয়ের মাসে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার সাংবাদিকদের নিয়ে আয়োজন করা হবে এমন একটা টুর্নামেন্টের। যার পুরো খরচ বহন করবেন তারা। এছাড়াও সাংবাদিকদের এ ধরনের আয়োজনে প্রশংসাও করেন তারা।