আলমডাঙ্গার ভ্রাম্যমাণ বইমেলা যেন মলাটবন্দী জ্ঞানের কোলাজ

রহমান মুকুল: পৌষের প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করেই আলমডাঙ্গায় চলছে বইমেলা। বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ বইমেলা ও সাংস্কৃতিক উৎসব। বিকেলের সোনাঝরা নরম রোদ গায়ে মেখে শহরের নারী-পুরুষ এসেছেন মেলায়। তরুণ-তরুণী, শিক্ষার্থী ও শিশুদের সবচেয়ে বেশি চোখে পড়ছে। দীর্ঘদিন শহরে চিত্তবিনোদনের কিছু হয় না। ফলে মেলায় বেশ ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। বইপ্রেমীদের আনাগোনা পৌষের অমিতাভ বিকেলকে অনন্য করে তুলেছে। বেলা ৩টা থেকে রাত ৮টা অব্দি চলছে মেলা। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি ছাড়াও মোট ১৩টি স্টল রয়েছে মেলায়। এ স্টলগুলির অধিকাংশ স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের। গত ৮ জানুয়ারি বুধবার উদ্বোধন করা হয়েছে ৪দিনব্যাপী এ মেলার। এ বছর দেশের ১২৮টি জায়গায় এ ভ্রাম্যমাণ বইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। মেলায় থাকছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের তিনটি গাড়ি। প্রতিটি গাড়িতে আছে ১০ হাজার করে বই। এসব বই ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ ছাড়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রতি জায়গায় পাঁচদিন করে মেলা হওয়ার কথা। কিন্তু ব্যতিক্রম আলমডাঙ্গায়। এখানে ৪ দিনের মেলা। তাছাড়া, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির ৩টি গাড়ি থাকার কথা থাকলেও আছে মাত্র ১টা। বইমেলায় প্রতিদিনই থাকছে সাংস্কৃতিক কর্মকা-। গতকাল বিকেলে শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ছিল। সন্ধ্যায় ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। গত বুধবার আনুষ্ঠানিকভাবে মেলাটি উদ্বোধন করেন আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম। মূলত: তার অতিশয় আগ্রহ ও আন্তরিকতায় বইমেলার শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে। প্রশংসা কুড়িয়েছে তার এই সহৃদয় উদ্যোগ। উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলতে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করার লক্ষ্যে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বই-ই পারে মানুষের হতাশা দূর করে জীবনকে আনন্দে পরিপূূর্ণ করতে। স্টলগুলোতে স্থানীয় লেখক ও কবিদের বেশকিছু সংখ্যক গ্রন্থ নজর কাড়ছে বইপ্রেমীদের। এবার ফেব্রুয়ারির বইমেলা উপলক্ষ্যে প্রকাশিত নতুন বই এসেছে কয়েকটি। সেগুলি হলো-পিন্টু রহমানের ‘যে মন্দিরে পতিতারা রানি’, আতিকুর রহমান ফরায়েজীর কাব্যগ্রন্থ ‘অতল জলের গভীরতা’, রোকন রেজার ‘যে যার বৃত্তে’ ও আব্দুর রহমানের ‘দেশটা কারও বাপের না’। এছাড়াও, স্টলগুলো স্থানীয় যে সকল কবি সাহিত্যিকের গ্রন্থ সুশোভিত করে তুলেছেন, তারা হলেন, আসিফ জাহান, হামিদুল ইসলাম, মোস্তাফিজ ফরায়েজী, মহাসিনুজ্জামান, কবি গোলাম রহমান চৌধুরী, আনোয়ার রশীদ সাগর, সিরাজুল হক ও কহন কুদ্দুস। তাছাড়া, বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির র‌্যাকের তাকে আলো ছড়াতে দেখা গেছে বিভিন্ন বিখ্যাত লেখকদের উপন্যাস, গল্পের বই, রম্যরচনা, ভ্রমনকাহিনী, কবিতার বই, প্রবন্ধের বই, নাটকের বই, জীবনীগ্রন্থ থেকে শুরু করে ধর্ম, দর্শন, বিজ্ঞান, সায়েন্স ফিকশনসহ বহু ধরনের বই রয়েছে। স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের বই ক্রয় করতে দেখা গেছে প্রকৌশলী (বিএসসি) তাসনিম সরণিকে। তার সাথে কথা হয়। তিনি বলেন, ‘বইমেলা হলো গ্রন্থিত জ্ঞানের মিথ। একই সাথে নবীন প্রবীণ সাহিত্যিকের বই পাওয়া যায়। এমনকি একেবারে আনকোরা লেখকের লেখার সাথেও পরিচয় ঘটে। তাই সুযোগ হলেই বইমেলা মিস করি না। স্থানীয় কবি সাহিত্যিকদের বই সব সময় আমার কাছে অগ্রগণ্য।’ গতকালের মতো রাতে মেলা সাঙ্গ হলে অফিসের পথে হাঁটছিলাম আর ভাবছিলাম। ভাবছিলাম ফরাসি কথাসাহিত্যিক, কবি, ও সাংবাদিক আনাতোল ফ্রাঁসের কথা। তিনি আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘আমার যদি মাছির মত অনেকগুলি চোখ থাকতো! এক সাথে অনেক বই পড়তে পারতাম!’

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More