চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরে কাঁচাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান
খুচরা ব্যবসায়ীদের কেনা দাম অনুযায়ী বিক্রির দাম নির্ধারণ
মাথাভাঙ্গা ডেস্ক: করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউয়ের ভয়াবহ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে দেশজুড়ে সর্বাত্মক কঠোর লকডাউনের দুই পার করে আজ ৩য় দিনে। গত বুধবার সকাল থেকে অপ্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকলেও চুয়াডাঙ্গায় গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে প্রয়োজন ছাড়াই বাইরে বের হতে দেখা গেছে কিছু অতি উৎসাহী মানুষকে। চুয়াডাঙ্গা শহরের শপিংমল ও মার্কেটগুলো বন্ধ থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি না মেনে মানুষ ভিড় করেছে কাঁচা বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে। সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, জরুরি সেবা ছাড়া সরকারি-বেসরকারিসহ সব ধরনের অফিস, গণপরিবহন ও সাধারণ মানুষের চলাচল বন্ধ থাকবে। মাঠপর্যায়ে বিষয়টি নিশ্চিত করতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ প্রশাসন। কেউ যেন অপ্রয়োজনে বাইরে ঘোরাফেরা করতে না পারে সেজন্য চুয়াডাঙ্গায় বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ যৌথ কাজ করছে। শহরের চৌরাস্তার মোড়, একাডেমি মোড়, কোর্ট মোড়, বাসটার্মিনাল, গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে সকাল থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়। যারা অপ্রয়োজনে গাড়ি ও মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন তাদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মুখোমুখি হয়ে গুনতে হচ্ছে জরিমানা। গতকাল বৃহস্পতিবার চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১২টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হয়। ভ্রাম্যমাণ আদালতের ৪৬টি মামলায় ২৯ হাজার ৯শ’ টাকা জরিমানা করা হয়।
জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালতসূত্রে জানা গেছে, বিনাপ্রয়োজনে রাস্তায় ও মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে বের হচ্ছেন। কী কারণে বের হয়েছেন এসব প্রশ্নের সদুত্তর দিতে যারা পারছেন তাদেরকে সর্তকমূলক করে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে আর যারা সদুত্তর পারছেন না তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। এছাড়াও কাঁচা বাজারে সামাজিক দূরত্ব না মানায় তাদের জরিমানা করা হয়েছে।
এছাড়া গতকাল বৃহস্পতিবার দামুড়হুদা উপজেলার পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৬ জনকে জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। মেহেরপুরে মোটরসাইকেলের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ১৫টি মোটরসাইকেল আটকসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে কাঁচাবাজারসহ শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালিত হয়। অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি না মানায় পথচারিদের ৪শ’ টাকা জরিমানা করা হয়। পরে একই আভিযানিক টিম বড় বাজার নিচের বাজারের কাঁচাবাজারে অভিযান করেন। সেখানে অতিরিক্ত দামে পণ্য বিক্রি করার অপরাধে খুচরা কাঁচামাল বিক্রেতা মেহেদী হাসানকে ২ হাজার টাকা, রতন আলীকে এক হাজার টাকা ও আক্কাছ আলীকে এক হাজার টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এ সময় নিচের বাজারের কিছু ব্যবসায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের টিমের সাথে অসদাচারণ করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। এ সময় পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান সেখানে মাইকিং করে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং বাজারের কাজ স্বাভাবিক রাখার জন্য নির্দেশ দেন।
পরে দুপুর দেড়টার দিকে চুয়াডাঙ্গার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সাজিয়া আফরিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) কনক কুমার দাস, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুর রহমান, জেলা মার্কেটিং অফিসার শহিদুল ইসলাম, সদর থানার ওসি আবু জিহাদ ফখরুল আলম খান নিচের বাজার পরিদর্শনে যান। এ সময় মূল্যতালিকা প্রদর্শন না করায় কাঁচামাল ব্যবসায়ী বকুলকে ৫শ’ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। একইসাথে অন্যান্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। পরে কাঁচামাল আড়ৎ সমিতির কার্যালয়ে ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে আলোচনাসভা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাঁচামাল আড়ৎ সমিতির সভাপতি শাহ আলম, সাধারণ সম্পাদক মাফিজুর রহমান মাফিসহ খুচরা মৎস্য, মাংস ও কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতির নেতৃবৃন্দ। সভায় অতিরিক্ত দামে কাঁচামাল বিক্রি বন্ধের লক্ষ্যে খুচরা ব্যবসায়ীদের কেনা দাম অনুযায়ী বিক্রির দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়। সর্বোচ্চ ৫০ টাকায় কেনা কাঁচামালে সর্বোচ্চ ৭ লাভ এবং ৫০ টাকার বেশি দামে কেনা কাঁচামালে সর্বোচ্চ ১০ টাকা লাভ নিয়ে বিক্রি করতে পারবে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এছাড়া আগামী সোমবারের মধ্যে প্রত্যেক দোকানে মূল্যতালিকা প্রদর্শন করতে হবে। আগামীকাল শনিবারের মধ্যে পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের তালিকা প্রশাসনের কাছে দিতে হবে।
পাঁচমাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গার বদরগঞ্জ বাজারে চার প্রতিষ্ঠানে ৬ হাজার টাকা জরিমানা করেছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সজল আহমেদের নেতৃত্বে সদর উপজেলার বদরগঞ্জ বাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। অভিযানে মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রি, মূল্যতালিকা যথাযথভাবে প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকায় অতিরিক্ত মূল্য লেখা ইত্যাদি অপরাধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী ৪ প্রতিষ্ঠানকে ৬হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং সতর্ক করা হয়। পরে উপস্থিত জনসাধারণকে মাস্ক পরার পাশাপাশি ভিড় এড়িয়ে দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে অনুরোধ করা হয়। অভিযানে সহযোগিতায় ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা মার্কেটিং অফিসার জনাব সহিদুল ইসলাম ও চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের একটি টিম।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সকাল থেকে মাঠে ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার পুলক কুমার ম-ল, সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ুন কবীর ও থানা অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর। যৌক্তিক কারণ ছাড়া যারা লকডাউনে বাইরে ঘোরাঘুরি করেছেন তাদেরকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করা হয়েছে। এদিকে করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত ৭ দিনের লকডাউনের প্রথম দিকে কারণ ছাড়া ৪ যুবক এক বাগানে বসে থাকার অপরাধে জরিমানা করেছে। বুধবার বিকেলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর এ জরিমানা করেন।
জানা গেছে, উপজেলার খাদিমপুর গ্রামে চার বন্ধু চলমান লকডাউনের মধ্যে একটি বাগানে বসে গল্প করছিলো। এ সময় পাঁচকমলাপুর ক্যাম্প পুলিশ লকডাউন ডিউটি করার সময় তাদেরকে কি কারণে বসে আসে জিজ্ঞাসা করে। তারা যৌক্তিক কোনো কারণ দেখাতে না পারায় উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমির নিকট সংবাদ প্রদান করেন। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. হুমায়ন কবীর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চারজনকে দ-বিধি ১৮৬০ এর ১৬৯ ধারা মোতাবেক ৪ হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় আলমডাঙ্গা থানার এসআই সুফল কুমার বিশ^াস সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে উপস্থিত ছিলেন।
দামুড়হুদা অফিস জানিয়েছে, করোনা দুর্যোগ মোকাবেলায় দামুড়হুদা উপজেলা পৃথক পৃথক স্থানে অভিযান চালিয়ে ২৬ জন ব্যক্তিকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারকগণ। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দামুড়হুদা উপজেলার পৃথক পৃথক স্থানে সরকারি আদেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত করে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যজিস্ট্রেট দিলারা রহমান ও দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ।
আদালতসূত্রে জানা যায়, দামুড়হুদা উপজেলা সদর ও কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন বাজার তদারকি, স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন যাচাইসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসন। এ সময় সরকারি আদেশ অমান্য কারি ২৬ জনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ভ্রাম্যমাণ আদালতের আওতায় এনে জরিমানা করা হয়। এ সময় অভিযুক্ত ২৬জন ব্যক্তির কাছ থেকে ৫ হাজার ৯শ’ ৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়। এ সময় সরকারি আদেশ অমান্যকারী ১৩ জন ব্যক্তিকে ১ ঘণ্টা করে আটক রাখার আদেশ দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সুদীপ্ত কুমার সিংহ।
এদিকে বিকেলে দামুড়হুদা উপজেলা সদরের বাসস্টান্ডে অতিরিক্ত মূল্যে ফল বিক্রি করার অভিযোগে ফল বিক্রেতাদের কে সর্তক করে দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিলারা রহমান। পৃথক ভ্রাময়মাণ আদালতে সহযোগিতা করেন দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী অফিসের পেশকার জিহন আলী, দামুড়হুদা মডেল থানার পুলিশ, কার্পাসডাঙ্গা ফাঁড়ি পুলিশ প্রমুখ।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, মেহেরপুরে মোটরসাইকেলের বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ১৫টি মোটরসাইকেল আটকসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। সরকার ঘোষিত লকডাউন চলাকালে ২য় দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এসব মোটরসাইকেল আটক ও গাড়ির মালিকদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। জানা গেছে, মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় ট্রাফিক পুলিশের অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় চালকের হেলমেট ও গাড়ির বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ১৫টি মোটরসাইকেল আটকসহ ৩৯ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা। মেহেরপুর ট্রাফিক ইন্সপেক্টর জাহাঙ্গীর কবীরসহ ট্রাফিক পুলিশের অন্যান্য সদস্যরা এ সময় অভিযান পরিচালনায় অংশগ্রহণ করেন।