গাংনী শহরের দোকানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড : অর্ধকোটি টাকার ক্ষতি
গাংনী প্রতিনিধি: মেহেরপুর গাংনী উপজেলা শহরে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৩টি গুদাম ও কয়েকটি দোকানে অর্ধ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। লেপ-তোষক তৈরি দোকানের গুদাম থেকে এ আগুনের সূত্রপাত বলে জানান স্থানীয়রা। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আগুন লাগার পর প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টায় আগুন নেভাতে সক্ষম হয় ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট।
স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, গাংনী শহরের বাসস্ট্যান্ড এলাকায় মনিরুল বেডিংসহ কয়েকটি বেডিং স্টোরের পেছনে রয়েছে তাদের মালামাল রাখার গুদাম। সেখানে আগুন লাগলে তা ছড়িয়ে পড়ে আশেপাশের কয়েকটি দোকানে ও দুটি বাসা বাড়িতে। স্থানীয় লোকজন আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু করেন। এক পর্যায়ে বামন্দী ফায়ার সার্ভিস ও পরে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট প্রায় তিন ঘণ্টা চেষ্টা করে আগুন নেভাতে সক্ষম হয়। তবে এর মধ্যে বেডিং স্টোর, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন দোকানের প্রায় কোটি টাকার মালামাল আগুনে পুড়ে যায়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও গাংনী থানা পুলিশের একাধিক দল আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতা করেন। অপরদিকে গাংনী পৌরসভার ট্রাকে চারটি বড় ট্রাংকিতে পানি সরবরাহ করা হয়। এ পানি দিয়ে ফায়ার সার্ভিসের কাজে সহযোগিতা করেন পৌরসভার কর্মচারীরা।
ক্ষতিগ্রস্তরা জানান, সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে আকমল স্টোরে। গাংনী শহরের একটি উল্লেখযোগ্য কসমেটিক্সের এ দোকানে ছিলো কোটি টাকার পণ্য। বেডিং স্টোরের গুদামের আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ে আকমল স্টোরের পশ্চিম দিকের দোকানটিতে। এছাড়াও কালো ধোয়ায় দোকানের পণ্যের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এ দোকানটিতে ৩০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান দোকানের মালিক। আকমল স্টোরের সামনের দিকে থাকা মনিরুল বেডিং ও সোহাগ বেডিংয়ের মালামাল সরিয়ে নেয়া হয় নিরাপদে। গুদামের সাথেই আকমল স্টোরের অবস্থান তাই মালামাল সরিয়ে নেয়ার কোনো সুযোগ ছিলো না বলে জানান দোকান মালিক।
এদিকে আগুনের সূত্রপাত হওয়া পেছনের দিকে মনিরুল, জিয়া ও সোহাগ বেডিং স্টোরের গুদাম। টিন শেডের গুদামে রাখা তুলা, কাপড় ও নারকেলের খোলসসহ অন্যান্য পণ্য পুড়ে ছাই হয়েছে। এতে অনেক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানান ভুক্তভোগীরা। তবে ঠিক কতো টাকার ক্ষতি তা প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত করে বলতে পারেননি তারা। এছাড়াও আকরাম কফি হাউজসহ আরও কয়েকটি দোকানের কিছুটা ক্ষতি হয়।
মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক শরফুল হাসান ভুইয়া বলেন, প্রাথমিকভাবে আগ্নিকা-ের কারণ জানা যায়নি। অপরদিকে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরুপণ করে জানানো হবে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে গাংন পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। শহরের অগ্নি নির্বাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ এখন সময়ের দাবি।
আগুন নেভাতে স্থানীয় মানুষের ভূমিকা: সকালে যখন মানুষ ঘর থেকে কাজের জন্য বের হয়েছে ঠিক এই সময়ে আগুনের ঘটনায় মুহূর্তেই ঘটনাস্থলের আশেপাশে ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। এতে আগুন নিয়ন্ত্রণ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়। তবে স্থানীয় অনেকে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেছেন আগুন নেভাতে। ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে আসার আগেই স্থানীয় মানুষ বিভিন্ন পাত্রে করে পানি নিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। আশেপাশের বাস ভবন থেকে পানি নেওয়ার চেষ্টা হলেও বিদ্যুত বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হয়নি। তবুও তাদের চেষ্টার ত্রুটি ছিলো না। হু হু করে আগুনের লেলিহান শিখা ছড়িয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশাপাশি উৎসুক অনেক মানুষের বুকেও যেন আঘাত লাগছিলো। অনেকেই আর্তনার্দ করে আল্লাহ স্মরণ করছিলেন। কেননা আগুন নিয়ন্ত্রণ না করা গেলে আরও অনেক দোকানপাট ও বাড়িঘরে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছিলেন অনেকে। তবে জেলা, উপজেলা ও পৌর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আগুন নেভাতে ফায়ার সার্ভিস দলকে ব্যাপক সহায়তা করে উৎসুক মানুষের নজর কাড়েন।
পানি সংকট: গাংনী শহরে এর আগে আলামিন হোটেলে আগুনে পুড়ে যায় মূল্যবান জেনারেটরসহ অনেক মালামাল। এরপর গতকালের এই অগ্নিকা-ের ঘটনাটি ছিলো গাংনী শহরের বড় অগ্নিকা-। ফলে আগুন নেভাতে পানি মজুদের বিষয়টি তেমনভাবে কেউ নিশ্চিত করার প্রয়োজন মনে করেননি। ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে আসার পর পানির উৎস খুঁজতে অনেকটাই সময় ব্যয় হয়েছে। পরে শফি মোহাম্মদ টাওয়ারের নিচতলার অর্থাৎ এক সময়ের আপ্রায়ন হোটেলের বরিং থেকে পানির উৎস পান ফায়ার সার্ভিস কর্মীরা। ফায়ার সার্ভিসের একটি সূত্র জানায়, এ ধরনের বড় অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণ করতে হলে আশেপাশে পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হবে। তবে আশার কথা শোনালেন গাংনী পৌর মেয়র আহম্মেদ আলী। তিনি বলেন, গাংনী পৌরসভায় পানি সরবরাহ লাইনের কাজ হচ্ছে। এ লাইন নির্মাণ কাজের সাথে শহরের কয়েকটি স্থানে পানি মজুদ রাখার ব্যবস্থা করা হবে। যাতে অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণসহ জরুরি প্রয়োজনে এ পানি ব্যবহার করা যায়।
অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ: বামন্দী ফায়ার সার্ভিসের দলটি যখন ঘটনাস্থলে পৌঁছায় তখন এসএম প্লাজা ও আগুন লাগা মার্কেটের ভেতরের সরু রাস্তা দিয়ে প্রবেশের চেষ্টা করে। কিন্তু ওই রাস্তা দিয়ে গাড়ি প্রবেশ করার পর্যাপ্ত জায়গা নেই। এতে গাড়ি প্রবেশ করতে না পেরে পেছনে সরিয়ে রাখা হয়। অগ্নিকা- নিয়ন্ত্রণসহ জরুরি প্রয়োজনের বাধা এড়াতে পৌরসভার নীতিমালা অনুযায়ী ভবন নির্মাণের দাবি ওঠে বিভিন্ন মানুষের মুখ থেকে।
ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের জন্য আফসোস: কয়েক বছর আগে থেকেই গাংনী পৌরসভার কয়েকটি স্থানে ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপনের জন্য জমি অধিগ্রহণে সিদ্ধান্ত নেয় ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ। কিন্তু জমি মালিকদের বাধার কারণে গাংনী উপজেলার ফায়ার সার্ভিস নির্মাণ হয় বামন্দীতে। যার কার্যক্রম শুর হয়েছে প্রায় দুই বছর আগে থেকে। এ ফায়ার স্টেশনটি গাংনী উপজেলায় অগ্নি নির্বাপনে নিয়োজিত। বামন্দী থেকে গাংনী উপজেলা শহর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার ব্যবধান। তাই সেখান থেকে বেশ সময় লাগে গাংনী পৌঁছুতে। গাংনী উপজেলা শহরে ফায়ার স্টেশন স্থাপন করা গেলে অনেক সুবিধা পেতেন গাংনী পৌরবাসী। ঠেলাঠেলিতে গাংনী থেকে ফায়ার স্টেশন বামন্দীতে চলে যাওয়ার আফসোস ছিলো তাই উৎসুক মানুষের প্রায় সকলের মুখে মুখে।
তবে দূরত্ব তেমন বিষয় নয় উল্লেখ করে মেহেরপুর ফায়ার সার্ভিস স্টেশনে উপ সহকারী পরিচালক বলেন, পরিকল্পিত ভবন ও সড়ক নির্মাণ এবং পানি মজুদের ব্যবস্থা থাকলে আগুন নেভাতে তেমন কোনো অসুবিধা হয় না। এছাড়াও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অগ্নি নির্বাপনের ব্যক্তিগত ব্যবস্থা করা খুব জরুরি।
তুলার গুদাম সরিয়ে নেয়ার দাবি: আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী; আর আতংকে ছিলেন আশেপাশের অনেক মানুষ। যেখানে কোটি কোটি টাকার মালামাল নিয়ে ব্যবসা করা হয় সেখানে তুলার গুদাম কতটা যুক্তি সঙ্গত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন অনেকে। তাদের দাবি, এমন স্থানে তুলার গুদাম রাখা যাবে না। মার্কেট মালিক ও গাংনী বাজার কমিটির নেতৃবৃন্দের কাছে এ দাবি জানিয়েছেন অনেকে।