৩ নম্বর ওয়ার্ডবাসীরও প্রত্যাশা পৌর পরিষদের নেকনজর
নির্বাচন পরবর্তী চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ওয়ার্ড ভিত্তিক প্রতিবেদন- ২
শামসুজ্জোহা রানা: সবুজপাড়া, সাদেক আলী মল্লিকপাড়া, কোর্টপাড়া, মুক্তিপাড়া, পোস্টঅফিসপাড়া ও পুরাতন হাসপাতালপাড়া নিয়ে গঠিত চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে পর পর ৩ দফা নির্বাচিত হয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন নাজমুস সালেহীন লিটন। তিনি আকস্মিক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান কয়েক বছর আগে। তার অকাল মৃত্যুর পর উপ-নির্বাচনে তারই স্ত্রী নাজরিন পারভীন মলি নির্বাচিত হয়ে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। কর্মকা-ে সন্তুষ্ট হতে না পেরে অধিকাংশ ভোটার এবারের নির্বাচনে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তারা নির্বাচিত করেছেন তরুণ সমাজসেবক মহলদার ইমরান রিণ্টুকে। এবারই প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমে নাজরিন পারভীন মলিকে বহু পেছনে ফেলে নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকার উন্নয়নসহ পৌর নাগরিক সুবিধা শতভাগ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সকলকে সাথে নিয়ে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে শপথও নিয়েছেন। তার নির্বাচনী এলাকার হালচিত্র জানতে গত কয়েকদিন ধরে সরেজমিন ঘুরে পাওয়া গেছে রকমারি ছবি।
সাদেক আলী মল্লিকপাড়ারই বাসিন্দা নব-নির্বাচিত কাউন্সিলার রিণ্টু। তিনি কুদ্দুস মহলদারের ছেলে। তার নিজের পাড়ার যেসব সমস্যা দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছেন তা কোনো পৌর এলাকার চিত্র হওয়ার কথা নয়। নিজের পাড়ার অভ্যন্তরের মূল রাস্তার করুণ দশা। চলাচলের একেবারেই অনুপযোগী। তার পাশে বহু আগে নির্মাণ করা পয়ঃ নিষ্কাশনের নালা ঢাকানা ছাড়া। তাতে ময়লা আর পঁচা পানি জমে কোটি কোটি মশা জন্মায় রোজ। আর বর্ষা এলে? জলাবদ্ধতা থেকে মহল্লাবাসীকে বাঁচতে শ্যালোইঞ্জিন বাসিয়ে দূরে ফেলতে হয় পানি। সবুজপাড়ার একপ্রান্তের চংবাবুর গলি রাস্তার দশা দেখে কেউ বলবেন না যে, ওই গলি রাস্তাটি পৌর কর্র্তাদের কোনো সময় নজরে পড়েছে। কোর্টমোড় থেকে পলাশপাড়া রাস্তার দশা ২ নং ওয়ার্ডবাসীর বর্ণনাতেও উঠে এসেছে। মশার উপদ্রব নিয়ে এলাকাবাসী ক্ষোভ উগরে দিয়ে বললেন, এলাকায় জেলার শীর্ষ পর্যায়ের অনেক কর্তার বসবাস। মশা বোধহয় কর্তাদের গায়ে বসে না। বসবেই বা কীভাবে? তাদের আবাসস্থল তথা বাসাগুলো নিশ্চয় সুরক্ষিত। এদিকে সাতভাই পুকুর সংলগ্ন মুক্তিপাড়া রাস্তাটিরও বেহাল অবস্থা। বিশেষ করে আড়তপট্টি হিসেবে পরিচিত স্থানের রাস্তায় বড় বড় গর্ত। ওদিকে তাকালেই গা রিরি করে ওঠে। ট্রান্সপোর্টের ভরি ট্রাকগুলো দিনে রাতে আধিকাংশ সময়ে রাখা হয়। মালামাল তোলা ও নামানোর কাজ চলে। পথচারীদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না। কয়েক মাস আগে মহল্লাবাসী বৈঠক করে তৎকালীন মেয়র কাউন্সিলরদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেও সুফল পাননি। এখন? নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর-মেয়রই ভরসা। এ সড়কটি সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে মহল্লাবাসী বললেন, পৌরসভা কথায় কথায় পৌর কর বাড়ালেও নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর দিকে একেবারেই আন্তরিক হয়নি। একটু আন্তরিক হলে রাস্তা ড্রেনের দশা এরকম হওয়ার কথা নয়।
চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের ভোটার সংখ্যা ৬ হাজার ১শ ৫৮ জন। ঝিনুক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঝিনুক মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও ভিজে সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্র। এবার ২ হাজার ৮শ ৩২ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। সাদেক আলী মল্লিকপাড়ার বাসিন্দা পৌর আওয়ামী লীগের সহ-প্রচার সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ। তিনি বললেন, পৌরসভা কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে ড্রেন নির্মাণ করে। এসব নির্মাণ কাজ যেমন একেবারেই নি¤œমানের হয়, তেমনই পরিকল্পনায়ও থাকে ঘাটতি। সে কারণে ড্রেন নির্মাণ করার পরও সুহালে পানি নিষ্কাশন হয় না। নিজ মহল্লার ড্রেন দেখিয়ে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বললেন, এসব ড্রেন কি কোনো কাজে এসেছে? কোনোদিন কি কোনো কাজে আসবে? নতুন করে করতে হবে। কোর্টপাড়ার বাসিন্দা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শাহীন রাব্বির অনুযোগ, ময়লা ফেলার স্থান নেই। রাস্তাগুলো সংস্কারের অভাব। পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার বালাই নেই। ফলে এলাকার পরিবেশ দিন দিন এতোটাই অস্বাস্থ্যকর হয়ে উঠছে যে, অবস্থার উন্নতি না হলে কিছুদিন পর বসবাসই করা যাবে না। পৌরসভা যদি প্রতিদিন নিয়ম করে একই সময়ে সকাল বিকেলে ময়লা নেয়ার গাড়ি পাঠায় এবং ওই গাড়িতে না দিয়ে কোথাও কেউ ময়লা ফেললে তার বিরুদ্ধে শক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয় তাহলে মহল্লার চিত্রটাই পাল্টে যাবে। কেনোনা, চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গলিগুলো খুব একটা ঘিঞ্জি নয়। যেমন ভিজে স্কুলের বিপরীত মুক্তিপাড়ার রাস্তাটি কিছুদিন আগে করার কারনে এখন ভালো। এরকম ভালো রাস্তা সব এলাকায় হওয়া জরুরী।
চুয়াডাঙ্গা কোর্টপাড়াতেই রয়েছে ভিজে উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ। মাঠটি চাঁদমারি মাঠ হিসেবে পরিচিত হলেও জনসংখ্যা বাড়ার কারণে এলাকাবাসীর অক্সিজেন নেয়ার একমাত্র স্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে এই মুক্ত স্থানটি। শীতে উপস্থিতির সংখ্যা কম হলেও গরমে বিকেল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত মানুষ মাঠে বসে মুক্ত বাতাসে বুক ভরে নিঃশ^াস নেন। কিন্তু মাঠটি পরিষ্কার না করার কারণে দুষণ ছড়াচ্ছে। যদিও মাঠটির চতুরধারেই ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করে প্রাতঃভ্রমণের সু-ব্যবস্থা করছেন জেলা প্রশাসক। তখনও পরিষ্কার পরিছন্নতায় ঘাটতি থাকলে উপকারের বদলে খেলার মাঠটিই শুধু সংকীর্ণ হওয়ার ভয়। তাছাড়া বর্ষায় মাঠে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
৩ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্যাগুলো নিরসনে ভোটার সাধারণের প্রত্যাশা নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর আশু পদক্ষেপ নেবেন। মেয়র থাকবেন পাশে। এলাকাবাসী দীর্ঘদিন ধরে উন্নয়নে বঞ্চিত হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা পৌরসভার নতুন পরিষদের কাছে প্রত্যাশা অনেক। নব-নির্বাচিত কাউন্সিলর মহলদার ইমরান রিণ্টু বলেছেন, আমি সকলকে সাথে নিয়ে সকল সমস্যা দূর করার সর্বাত্মক চেষ্টা করবো। পৌর নাগরিক সুবিধা বাড়ানোর ক্ষেত্রে আমার চেষ্টায় কোনো কমতি থাকবে না।