আলমডাঙ্গার ফরিদপুরে গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু : স্বামী-শাশুড়ী নির্যাতনের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যার অভিযোগ
আলমডাঙ্গা ব্যুরো: আলমডাঙ্গা ফরিদপুরের গৃহবধূর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শারীরিক নির্যাতনের পর পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গৃহবধূর পিতা-মাতার অভিযোগ তাদের মেয়েকে তার স্বামী ও শাশুড়ী নির্যাতন করে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করেছে।
অভিযোগসূত্রে জানা গেছে, আলমডাঙ্গা উপজেলার ডাউকী ইউনিয়নের মাধবপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আক্কাচ আলীর মেজো মেয়ে সানজিদা আক্তার ওরফে রোজিনা। আক্কাচ আলী অনেক কষ্টেসৃষ্টে মেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করেন। উচ্চ শিক্ষিত রোজিনার সাথে সাড়ে ৪ বছর পূর্বে আলমডাঙ্গা উপজেলার বেলগাছী ইউনিয়নের ফরিদপুর গ্রামের আরজেদ আলীর আইএ পাস বেকার ছেলে সেলিম রেজার সাথে বিয়ে হয়।
আক্কাচ আলী জানান, সানজিদা আক্তার রোজিনা আলমডাঙ্গা কলেজে পড়াশুনাকালীন প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। তারপর থেকেই সেলিম রেজা বিভিন্নভাবে তাকে উত্ত্যাক্ত করতেন এবং প্রেমের প্রস্তাব দিতেন। সানজিদা আক্তার রোজিনা তার প্রস্তাবে রাজী না হলেও এক পর্যায়ে তার বান্ধবী অর্থাৎ সেলিমের খালাত বোন তাকে ফুঁসলিয়ে বিয়েতে রাজি করায়। সানজিদা আক্তার রোজিনার হতদরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় এ বিয়েতে প্রথম থেকেই বাঁধ সাধে সেলিমের মা-বাবা। ওই সময় সেলিম কৌশল করে তার মা-বাবাকে মিথ্যা বলেন যে সানজিদা আক্তার রোজিনা উচ্চ শিক্ষিত মেয়ে এবং সে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চাকরি করে। চাকরির মিথ্যা তথ্য দিয়ে তিনি নিজের মা-বাবাকে রাজি করিয়ে বিয়ে করেন। বিয়ের কিছুদিন পর সেলিমের মা-বাবা যখন জানতে পারেন যে সানজিদা আক্তার রোজিনা সরকারি চাকরি করেন না, ঠিক তখন থেকেই শুরু হয় তার ওপর অকথ্য নির্যাতন। এরই মধ্যে বিয়ের পরের বছরেই সানজিদার গর্ভে সন্তান এলে সেলিমের বাপ-মা সেই সন্তানকে নষ্ট করার চেষ্টা করে বিফল হয় এবং তার ওপর মানষিক ও শারিরীক নির্যাতনের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। অনেক কষ্টে ও ধৈর্য্যে সানজিদা আক্তার রোজিনা স্বামী, শাশুড়ীর অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে আড়াই বছরের সন্তানের মুখের দিকে চেয়ে নিরব ছিলেন। এরই মধ্যে গত ঈদের রাতে করুণ মৃত্যু হয় তার।
সানজিদার বাবা আক্কাস আলী অভিযোগ তুলে বলেন, মেয়ের অশান্তির খবর পেয়ে তিনি ঈদুল ফিতরের আগের দিন মেয়েকে আনতে ফরিদপুরে জামাই বাড়ি গেলে মেয়ের শ্বশুর-শাশুড়ী তাকে অপমান করেন। অপমানিত হয়ে মেয়েকে না নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। ঘটনার দিন ২৫ মে সোমবার ঈদ উল ফিতরের সকাল বেলায় প্রতিবেশীদের মাধ্যমে মেয়ের মৃত্যুর খবর পান তিনি। সংবাদ পেয়ে ছুটে যান জামাই বাড়ি। গিয়ে মেয়ে লাশ পড়ে থাকতে দেখতে পান। তার গলায় আঙ্গুলের দাগ দেখেই বুঝতে পারেন মেয়েকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। তিনি মেয়ে হত্যার বিচার চান। সানজিদা আক্তার রোজিনার মা বাকরুদ্ধ কন্ঠে প্রশ্ন করেছেন, আমরা গরীব বলে কি মেয়ে হত্যার সঠিক বিচার পাবো না? এ ব্যাপারে আলমডাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ আলমগীর কবীর বলেন, ওই ঘটনায় প্রাথমিকভাবে থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাওয়া গেলে পরবর্তীতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।