অর্ধেক সিট খালি রাখাসহ ১১ শর্তে চলবে বাস
স্টাফ রিপোর্টার: অর্ধেক আসন খালি রাখাসহ ১১ শর্তে আগামী ৩১ মে নয়, ১ জুন সোমবার থেকে দূরপাল্লা ও নগর পরিবহন বাস চলবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিনিময়ে দ্বিগুণ ভাড়া চান বাস মালিকরা। শনিবার ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটির সভায় ভাড়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহন পরিচালনার শর্ত নির্ধারণে শুক্রবার বনানীতে সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়ে সভা হয়। এতে স্বাস্থ্যবিধি রক্ষায় ১১ শর্ত নির্ধারণ করা হলেও, মেনে বাস চালানো আদৌ সম্ভব কী না, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা শহরের অভ্যন্তরীণ রুটের বাসে সামাজিক দূরত্ব রক্ষা অসম্ভব বলে মনে করছেন মালিক চালকরাই। বৈঠকে অংশ নেয়া একাধিক পরিবহন নেতা বলেছেন, মাস্ক পরা ছাড়া আর একটি শর্তও বাস্তবে মানা হবে না। সভায় সভাপতিত্ব করেন সড়ক পরিবহন সচিব নরুজল ইসলাম। ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সভায় যোগ দেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিআরটিএ’র চেয়ারম্যান ইউছুব আলীসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন। অংশ নেন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাহজাহান খান, সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ, ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী, সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহসহ শীর্ষ পরিবহন নেতারা। করোনার বিস্তার রোধে গত ২৫ মার্চ থেকে বাস, লঞ্চ, ট্রেনসহ সব ধরনের গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। সোমবার থেকে আবার গণপরিবহন চালু হচ্ছে। তবে সরকারি ঘোষণা সীমিত আকারে কার্যক্রম চলবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যাত্রী পরিবহন করতে হবে। বিআরটিএ এর সভায় সিদ্ধান্ত হয়, বাস টার্মিনালে ভিড় করা যাবে না, তিন ফুট দূরত্ব বজায় রেখে লাইন ধরে টিকিট কাটতে হবে, বাসে উঠার আগে শরীরের তাপমাত্র পরীক্ষা ও হাত ধুতে হবে, বাসে স্যানিটাইজার রাখতে হবে, দাঁড়িয়ে যাত্রী নেয়া যাবে না, ৫০ ভাগ আসন ফাঁকা রাখতে হবে, চালক শ্রমিক ও যাত্রীকে অবশ্যই মাস্ক পরতে হবে, যাত্রার আগে ও পরে বাস জীবাণুমুক্ত করতে হবে, চালক-শ্রমিককে একটানা ডিউটি দেয়া যাবে না, মহাসড়কে বিরতি দেয়া যাবে না এবং মালামাল জীবাণুমুক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কারিগরি কমিটি গণপরিবহন ও ট্রেনে যাত্রী পরিবহনে ১৪ শর্ত দিয়ে নির্দেশিকা জারি করেছিলো। বিআরটিএর চেয়ারম্যান ইউছুব আলী মোল্লা জানিয়েছেন, সীমিত আকারে গণপরিবহন চালু করতে কারিগরি কমিটির সুপারিশকেই গুরুত্ব দেয়া হয়ছে। ভিডিওতে যুক্ত হয়ে ওবায়দুল কাদেব বলেন, সামাজিক দূরুত্ব রক্ষায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ আসন ফাঁকা রাখা যেতে পারে। যাত্রীরা একই পরিবারের হলে পাশাপাশি আসনে বসতে পারবে। তবে বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, যাত্রীরা পরস্পরের আত্মীয় কী না তা চিহ্নিত করা সম্ভব নয়। আবার করোনার কারণে একক যাত্রীই বেশি হবে। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতে অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে। দূরপাল্লার ৪০ আসনের বাসে সর্বোচ্চ ২০ জন যাত্রী নেয়া হবে। নগর পরিবহনে ৩২ আসনের মিনিবাসে ১৬ জন এবং ৫২ আসনের বাসে ২৬ জন যাত্রী নেয়া যাবে। অর্ধেক আসন খালি রাখার শর্তে ভাড়া দ্বিগুণ করার প্রস্তাব দেন মালিকরা। যেমন ঢাকা থেকে ময়মনসিংহ পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ২২০ টাকা। মালিকদের প্রস্তাব অনুযায়ী তা ৪৪০ টাকা হবে। ফার্মগেট থেকে মিরপুর-১০ নম্বরের ভাড়া ১২ টাকা। মালিকদের প্রস্তাব গৃহীত হলে এ ভাড়া ২৪ টাকা হবে। শনিবার বিআরটিএ এর ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটিতে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন খন্দকার এনায়েত উল্যাহ। দূরপাল্লার বাসে কিলোমিটার প্রতি বাস ভাড়া এক টাকা ৪৭ পয়সা। গত পাঁচ বছরে ভাড়া বাড়েনি। নগর পরিবহনে মিনিবাসে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া এক টাকা ৬০ পয়সা এবং বড় বাসে এক টাকা ৭০ পয়সা। ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে যুক্তি দিয়ে খন্দকার এনায়েত বলেছেন, দূরপাল্লায় বাসে আসন সংখ্যার ভিত্তিতে ভাড়া নির্ধারিত হয়। তাই যেহেতু অর্ধেক আসন খালি রাখতে হবে, ভাড়াও দ্বিগুণ হওয়া উচিত। ভাড়া নির্ধারণ করে সরকারের ব্যয় বিশ্লেষণ কমিটি। ৩০ শতাংশ আসন খালি ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হয়। করোনার কারণে ৫০ শতাংশ আসন খালি রাখার শর্ত দেয়া হয়েছে। এ হিসেবে ২০ ভাগ আসন বেশি খালি রাখতে হবে। এর জন্য ভাড়া দ্বিগুণ করার শর্ত যৌক্তিক কী না এর জবাবে খন্দকার এনায়েত বলেছেন, পাঁচ বছরে এক পয়সা ভাড়া বাড়েনি। ভাড়া বাড়লে এখন বাড়ানোর প্রয়োজন পড়তো না। ৩০ শতাংশ আসন খালি ধরে ভাড়া নির্ধারণ করা হলেও, যাত্রী তুলতে তো বাধা নেই। কিন্তু এখন বাধ্যতামূলকভাবে অর্ধেক সিট খালি রাখত হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার শর্ত আদৌ মানা সম্ভব কী না তা নিয়ে সংশয় রয়েছে মালিকদের মধ্যেই। বৈঠকে অংশ নেয়া একজন মালিক বলেছেন, দূরপাল্লার বাসে যাত্রীদের পরখ করে নেয়া যাবে। মালিক চেষ্টা করলে নজরদারি করে অর্ধেক সিট খালি রাখতে পারবে। কিন্তু বাসে উঠার আগে হাত ধুয়ানো, জীবাণুমক্ত করা এগুলো যাত্রীদের ওপর নির্ভর করে। আর নগর পরিবহনে এগুলো কোনোভাবেই মানা সম্ভব নয়। যাত্রীদের বিনামূল্যে মাস্ক ও গ্লাভস দেয়ার বিষয়ে আলোচনা হলে এর বিরোধিতা করেন মালিকরা। মালিকরা বলেন, চালক শ্রমিককের সুরক্ষা সরঞ্জাম দেবেন তারা।করোনাকালে মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে কাগজপত্র পরীক্ষা বন্ধ করার দাবি জানান মালিকরা। সড়ক পরিবহন সচিব বলেন, এমন সিদ্ধান্ত নিলে অবৈধ যানবাহন চলাচল করবে। পুলিশ সীমিত আকারে গাড়ির কাগজ পরীক্ষা করবে। মালিকদের দাবির প্রেক্ষিতে সচিব জানান, মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে পুলিশ তৎপর থাকবে।