স্টাফ রিপোর্টার: বিপনন কেন্দ্রগুলো খুলে দেয়ায় করোনা ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ার ঝুকি বেড়েছে। এরপর গণপরিবহন চালু হলে নতুন আরেকটি ঝুঁকি যুক্ত হবে বলে মনে করছেন শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গার্মেন্টস খুলে দিয়েছে। সেখানে ঝুঁকি বাড়ছে। ঈদের সময় মানুষজন বাজারে যাবে। তারা কি নিজেদের ব্যক্তিগত সুরক্ষা নিয়ে যেতে পাড়বে। তারা গাঁদাগাদি করে বাজার করবে। তারা যে মাস্ক পড়ছে সেটাও যেন দায়সারা। এতে কিন্তু ঝুঁকি বাড়বে। ঠেকানো যাবে না। সামনে ঈদ আসছে। কি অবস্থা নিয়ে আসবে জানি না। বড় মসজিদে দূরত্ব মেনে চললেও ছোট মসজিদগুলোতে মানছে না। শপিং মলগুলো খুব একটা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পাড়বে বলে মনে হয় না। আমরা যেখানে পুলিশ-সেনাবাহিনী দিয়ে লকডাউন মানাতে পারলাম না। আর শপিং মলে কে থাকবে। এখানে দূরত্ব মেনে চলা সম্ভব নয়। আড়ং অনলাইন শপিং চালু করেছে। অনলাইনে ক’জন বাজার করতে পারবে। আমিই তো পারবো না। এরপরে দোকানপাট খুলে দিয়েছে। আগামী দশ থেকে ১২ দিন পর হয়তো আবার একটি ঘোষণা আসবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে ৯ই মে থেকে ১০ই মে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিলো। আক্রান্ত আরো বাড়বে। এদিকে, লকডাউন আবার কার্যকর হচ্ছে না। কেউ মাস্ক পড়ছে, কেউ পড়ছে না। কেউ আবার মাস্ক পড়লেও নাক বের করে রাখে। স্যানিটাইজার ক’জনের সঙ্গে থাকে সেটাও নিশ্চিত না। সব কিছু ঢিলেঢালা হয়ে গেছে। এতে ঝ্ুঁকি আরো বেড়ে গেছে।
তিনি বলেন, এখন লকডাউন যখন শহরে কাজ করছে না। গ্রামে কিছুটা হলেও কাজ করে। তাহলে আমাদের ইনডিভিজ্যুয়াল স্বাস্থ্য বিধি মানা ছাড়া বিকল্প দেখছি না। মাস্ক পড়া, হাত ধোয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ চারটি বিষয় যদি মেনে চলে তাহলে কিন্তু সংক্রমণ কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। লকডাউন যেহেতু হচ্ছেই না। আমাদের সমাজে সচেতনতার খুবই অভাব। গণপরিবহন চালু হলে ঝুঁকির নতুন আরেকটি সেক্টর যুক্ত হবে। ঝুঁকিটা যথেষ্ট বাড়বে। কিন্তু যেভাবে আমরা লকডাউন কার্যকর করছি সেটা কতোটা সফল তা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যায়। লকডাউন মানেই শুধু লোকজনকে ঘরের মধ্যে বন্দি করে রাখা এমনটা নয়। যারা খেতে পারছে না তাদের খাবার সরবরাহ করা। খাবার তা না করায় তারা লাইন ধরে বাইরে খাবার সংগ্রহে যাচ্ছে। সেখান থেকে তারা সংক্রমণিত হচ্ছে। এই লকডাউনের কোনো মানে হয় না।
তিনি বলেন, ঢাকা শহরের জন্য একটি টাস্কফোর্স গঠন করা প্রয়োজন। রাস্তার মধ্যে কিছু দূর পরপর একটি করে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ওয়ার্ড কমিশনারদের বিষয়টি দেখার জন্য নির্দেশ দিতে হবে। এরকম কতগুলো ব্যবস্থা নিতে হবে। লকডাউনের সুফল কিন্তু আমরা দেখতে পেয়েছি। রাজধানীর টোলারবাগ পুরোপুরি লকডাউন করাতে নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দোষটি হচ্ছে আমরা যারা লকডাউন মানছি না বা মানাতে পারছি না তাদের। আমার মনে হয় করোনা ভাইরাসটি যে মাত্রায় উঠে গেছে তাতে প্রতিদিন আমরা যে করোনার কার্ভ (পরিংখ্যান চিত্র) পাচ্ছি সেটা কিন্তু ভুল। আমরা যখন বেশি করে স্যাম্পল সংগ্রহ করছি তখন আক্রান্ত সংখ্যা বেড়ে যায়। আমরা মনে করি আক্রান্ত খুব বেড়ে গেছে। কতগুলো স্যাম্পলের উপর কতো পার্সেন্ট পজেটিভ হয়েছে সেটা না বললেতো কার্ভ সঠিক হবে না।
তিনি বলেন, এই বছরের শেষের দিকে ভ্যাকসিন আসতে পারে। এখন যারা করোনায় আক্রান্ত হয়ে ভালো হয়ে যাচ্ছেন তারা ইমিউন হয়ে যাচ্ছেন। তাদের আর হবে না। এভাবে হার্ড ইমিউনিটি হতে পারে। কিন্তু এতে তো অনেক লোক মারা যাবে। আমরা হার্ড ইমিউনিটি ফর্ম করতে চাই ভ্যাকসিন দিয়ে। যতদিন না ভ্যাকসিন আসছে ততদিন আমাদেরকে এই সংক্রমণ ঠেকিয়ে রাখতে হবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. মো. আমিনুল হক বলেন, শপিং মল খুলে দেয়াতে যেমনি ঝ্ুঁকি বেড়েছে। এখন যদি গণপরিবহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হয় এতে যথেষ্ট পরিমাণে ঝুঁকি আছে। মসজিদ খোলার ক্ষেত্রে যেমন ১১ থেকে ১২ টি নিয়ম মানার কথা বলা হয়েছে। সেটা হয়তো মানতে পারবে। কিন্তু মার্কেটে এ ধরনের সামাজিক দূরত্ব, হাইজিন মেনটেন করা সম্ভব হচ্ছে না।