গাংনী প্রতিনিধি: দীর্ঘ ৫ বছর মানবেতর জীবনযাপনের পর অবশেষে স্বপদ ফিরে পেলেন গাংনী পৌরসভায় উচ্চমান সহকারী জামিরুল ইসলাম টিক্কা। গতকাল বুধবার সকালে তিনি স্বপদে যোগদান করেন।
জানা গেছে, ২০১৫ সালে গাংনী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহম্মেদ আলী পরাজিত হন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী আশরাফুল ইসলাম মেয়রের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। আহম্মেদ আলীপন্থী হিসেবে জামিরুল ইসলাম টিক্কাকে বহিষ্কার করেছিলেন আশরাফুল ইসলাম।
টিক্কার পারিবারিকসূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবেই জামিরুল ইসলাম টিক্কা আওয়ামী লীগ কর্মী। তার বড় ভাই গাংনী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। ২০১৫ সালের নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার অপরাধে তাকে পৌরসভা থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিলোা। আহম্মেদ আলী মেয়র থাকাবস্থায় দুর্ঘটনায় বা পায়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়। ছুটি নিয়ে তিনি ভারতে গিয়েছিলেন চিকিৎসা করাতে। তবে ভোটের পর থেকেই টিক্কাসহ পৌরসভায় আহম্মেদ আলীপন্থী অন্যান্য কর্মচারীদের ওপর মানসিক চাপ শুরু হয়। একপর্যায়ে বহিষ্কার করা হলে সে মানসিকভাবে আরও বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। অবৈধপন্থায় তাকে বহিষ্কার করা হলেও সে সময় তেমন কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি। টিক্কা ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বারবার গিয়েও সুরাহ হয়নি। উপায়ান্তর না পেয়ে ২০১৬ সালে উচ্চ আদালতে একটি রিট করেন জামিরুল ইসলাম টিক্কা। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ দ্রুত চাকরিতে পুনর্বহাল ও ৬০ দিনের মধ্যে বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধে গাংনী পৌর মেয়রকে নির্দেশ দেন। ওই বছরের ২৬ নভেম্বর আদালতের নির্দেশনাপত্র গ্রহণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। এরপরও টিক্কাকে তার পদে যোগদান করতে দেয়া হয়নি। এসব বিষয়ে ২০১৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি দৈনিক মাথাভাঙ্গায় ‘চাকরি ফিরে পেতে পথে পথে ঘুরছেন গাংনী পৌরসভার উচ্চমান সহকারী টিক্কা’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিলো।
এদিকে আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে টিক্কাকে বহাল করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ। তাই উপায়ন্তর না পেয়ে আরেকটি পৌর নির্বাচনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন জামিরুল ইসলাম টিক্কা। অবশেষে গেল ১৬ জানুয়ারি গাংনী পৌর নির্বাচনে টিক্কার ভাগ্যাকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে আসে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আহম্মেদ আলীর বিজয়। মেয়র হিসেবে আহম্মেদ আলী দায়িত্ব গ্রহণের পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালনে টিক্কাকে স্বপদে পুনর্বহাল করেন তিনি। একই সাথে দ্রুত তার সমুদয় বকেয়া পরিশোধ করা হবে বলেও পৌরসভাসূত্রে জানা গেছে।
এদিকে বুধবার সকালে স্বপদ ফিরে পেয়ে জামিরুল ইসলাম টিক্কা প্রতিক্রিয়ায় তার ফেসবুকে স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘দীর্ঘ ৫ টি বছর যাবৎ ঘাত প্রতিঘাত হাজারো কষ্ট, মানসিক নির্যাতনসহ অবশেষে আমি জামিরুল ইসলাম টিক্কা বিশ্বাস বিজয়ী হয়েছি আমার পূর্বপরিকল্পনা এবং চিন্তা চেতনা অনুযায়ী।
আমার প্রিয় মানুষ মেয়র আহম্মেদ আলীর স্যারের স্বাক্ষর নিয়ে যোগদান করবো। এই ছিলো আমার প্রতিজ্ঞা।
মহান রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবাণীতে স্বপদে যোগদান করিলাম।’
আপনারা সকলেই আমার জন্য দোয়া করবেন। আমার মেধা শ্রম দিয়ে আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো আমার দায়িত্ব পালন করার। ইনশাআল্লাহ
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ