স্ত্রী চলে গেলেন বাপের বাড়ি : অভিমানে স্বামীর বিষপানে আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার: স্বামী সবুর আলীর (৩০) ছোট থেকেই শ্রবণ শক্তি কম। বিয়ের ১৫ বছর স্ত্রী কাকলীর সঙ্গে সংসারও করেছেন। সম্প্রতি স্ত্রী শ্রবণ শক্তি হারানো স্বামীকে কটুক্তি করে চলে যায় বাপের বাড়ি। এতেই মান অভিমানে শুক্রবার সকালে সবুর আলী বিষপান করেন। উদ্ধার করে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে নেয়া হয়। রাত ১২টার দিকে চিকিসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। সবুর আলী চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার তিতুদহ ইউনিয়নের ছোটশলুয়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ভাদু ম-লের ছেলে।

নিহত সবুর আলীর মা বলেন, ১৫ বছর পূর্বে আমার ছেলে সবুর আলীর সঙ্গে সদর উপজেলার শংকরচন্দ্র গ্রামের জমিরউদ্দীনের মেয়ে কাকলী খাতুনের পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। ছোট থেকেই আমার ছেলেটার শ্রবণশক্তি কম ছিলো। মাঝেমধ্যেই এটা নিয়ে তার স্ত্রী কাকলী খাতুন কটুক্তি করতো আমার ছেলেকে। কয়েকবছর আগে তাদের দাম্পত্য জীবনে কোলজুড়ে আসে ছেলে সন্তান। জন্মের পর বোঝা যায় সন্তান শারিরীক প্রতিবন্ধী ছিলো। ছয়মাস পর সন্তানটি মারা যায়। এরপর আর কোনো সন্তানাদি হয়নি।

গত ৩ দিন পূর্বে আমার পুত্রবধূ কাকলী আমার ছেলেকে কিছু জিজ্ঞাসা করে। শ্রবণ শক্তি কম হওয়ায় আমার ছেলে হয়তো শুনতে পায়নি। পরে ওইদিন আমার ছেলেকে বিভিন্নভাবে কটুক্তি করে বাপের বাড়ি চলে যায় কাকলী খাতুন। স্ত্রী কটুক্তি করে চলে যাওয়ায় আমার ছেলেটা নিরব হয়ে যায়। শুক্রবার সকাল ৮ টার দিকে গ্রামের একটি কৃষি মাঠে গিয়ে বিষপান করে সবুর আলী। অসুস্থ হয়ে পড়লে মাঠের লোকজন বিষয়টি বুঝতে পেরে আমাদের জানালে আমরা তাৎক্ষণিক চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করি। রাত ১২ টার দিকে আমার ছেলেটা মারা যায় বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

নিহত সবুরের বোন বলেন, স্ত্রী চলে যাবার পর আমার ভাই সবুর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো। একদিন পর আমাদের জানিয়েছিলো তার পেটে প্রচ- ব্যাথার কথা। চিকিৎসা করেও কম হয়নি। স্ত্রীর কটুক্তি তার মনে দাগ কেটেছে। আজ আমার ভাইটা আমাদের ছেড়ে চলে গেলো। আমার ভাইকে দেখতেও আসেনি কাকলী খাতুন। মৃত্যুর সংবাদ দেয়া হলেও আসেনি। তবে আমাদের কোনো অভিযোগ নেই কারোর বিরুদ্ধে। ময়নাতদন্ত করতে চাইনা আমার ভাইয়ের।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শুক্রবার সকালে সবুর আলীকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। স্বামীকে দেখতে একটি বারের জন্যেও আসেনি স্ত্রী কাকলী। এমনকি স্বামীর মৃত্যুর পরও স্ত্রী কাকলী খাতুন হাসপাতালে আসেনি।

এদিকে, সবুরের মৃত্যুর পর পরিবারের সদস্যরা কৌশলে মরদেহ রেফার্ডের কথা বলে বাড়িতে নেয়ার চেষ্টা করে। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি বুঝতে পেরে মরদেহ উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়োজিত পুলিশ সদস্যদের জিম্মায় দেয়। পরে মরদেহ হিমঘরে রাখা হয়।

চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, শুক্রবার সকালে সবুরকে ভর্তি করে পরিবারের সদস্যরা। তার পাকস্থলি ওয়াশ করা হয়। রাত ১২ টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

দর্শনা থানার ওসি এএইচ এম লুৎফুল কবির বলেন, সবৃরের মৃত্যুর ঘটনা আমার জানা নেই। হাসপাতালটি সদর থানা এলাকায়, তারা প্রাথমিকভাবে বিষয়টি দেখবেন। কেউ অভিযোগ করলে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More