সূর্যের দেখা মিললেও নেই উত্তাপ : শীতে বিপর্যস্ত জীবনযাত্রা
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার: ঘন কুয়াশার সঙ্গে হাড়কাঁপানো শীতে বিপর্যস্ত চুয়াডাঙ্গার মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে উঠেছে। তীব্র শীত উপেক্ষা করে কাজের সন্ধানে বের হওয়া খেটে খাওয়া মানুষ পড়েছেন বিপাকে। খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন শীতার্ত মানুষ।
দুদিন পর রোববার সূর্যের দেখা মিললেও নেই উত্তাপ। এ যেন তাপহীন রোদ। সন্ধ্যা থেকে সকাল পর্যন্ত বৃষ্টির পানির মতো ঝরছে শিশির। যার ফলে সড়কে হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। আর শীতের তীব্রতায় মানুষের কাজের গতিও কমে গেছে। গতকাল রোববার এ জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে এ মরসুমে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া সর্বশেষ গত শুক্রবার ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রাও রেকর্ড করা হয়।
চুয়াডাঙ্গা সদরের আমিরপুর গ্রামের শ্রমিক সবেদ আলী বলেন, দুদিন ধরে কাজ পাচ্ছি না। প্রতিদিনই কাজের সন্ধানে বাইরে আসছি কিন্তু কাজ না পেয়ে বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি। যেভাবে বাতাস বইছে, তাতে কাজ করাও কঠিন। আবার কাজ না করলেও পেট চালানো দায়।
চুয়াডাঙ্গা শহরের ভ্যানচালক মাসুম মিয়া বলেন, এই শীতে একদিন ইচ্ছা করেই কাজে বের হইনি। অন্যদিন বের হলেও ভাড়া হচ্ছে না। রাস্তাঘাটে যাত্রী নেই একদম। সকাল আর সন্ধ্যায়তো লোকজন একদমই কম। সূর্য উঠলে কিছু মানুষ বাইরে বের হয়, সূর্য না উঠলে তাও কেউ বের হয় না। অলস সময় কাটছে।
চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, শৈত্যপ্রবাহ কেটেছে। তাপমাত্রাও খানিকটা বেড়েছে। কিন্তু বাতাসের গতিবেগ আর সূর্যের উত্তাপ না থাকায় শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। তাপমাত্রার কিছুটা উন্নতি হতে পারে। ১০ জানুয়ারি থেকে আবারো শৈত্যপ্রবাহ আসতে পারে।
এদিকে, তীব্র শীতের মধ্যে চুয়াডাঙ্গার অসহায় ছিন্নমূল শীতার্ত ও নৈশপ্রহরীদের পাশে দাঁড়ালেন জেলা প্রশাসন। রোববার রাত ১০টা থেকে শহরের বিভিন্ন এলাকার শতাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করেছেন উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ ও জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) সাইফুল ইসলাম সাইফ।
সরেজমিনে দেখা যায়, গত কয়েক দিনের তীব্র শীতে জুবুথুবু অবস্থা চুয়াডাঙ্গার জনজীবনে। সবচেয়ে বেশি কষ্টে রয়েছে ছিন্নমূল অসহায় মানুষেরা। এই শীতে গভীর রাতে তাদের দুয়ারে শীতবস্ত্র কম্বল নিয়ে হাজির হন ইউএনও এবং এনডিসি। শহরের রেল স্টেশন, নিচের বাজার, বাস টার্মিনাল, হাসপাতাল এলাকা ঘুরে ঘুরে শীতার্তদের মধ্যে কম্বল বিতরণ করে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘবের চেষ্টা করছেন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা এম সাইফুল্লাহ বলেন, চুয়াডাঙ্গাতে এমনিতেই শীতের প্রবনতা একটু বেশি। এই শীতে অসহায় ছিন্নমূল শীতার্তদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে পাঠানো শীতবস্ত্র আমরা জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন বিতরণ করছি। এতে করে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হবে। আমরা সকলে যদি নিজের অবস্থান থেকে অসহায়দের পাশে দাড়াতে পারি, তাহলে নতুন বাংলাদেশ গড়ার পথটা সহজ হবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নাজির শহিদুল ইসলাম
ভালাইপুর প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা আলমডাঙ্গার চিৎলা ইউনিয়নে সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী পরিবারের মাঝে শীতবস্ত্র প্যাকেজ বিতরণ হয়েছে। গতকাল রোবরার বিকেলে গোকুলখালী বাজারে ডা. আফসার উদ্দীন কলেজ প্রাঙ্গণে গ্লোবাল ওয়ান বাংলাদেশের সহযোগিতায় প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার নির্বাহী পরিচালক মো. বিল্লাল হোসেনের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলা, বিপিএম সেবা, আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদি ইসলাম, ডা. আফসার উদ্দিন কলেজের অধ্যক্ষ মাহাবুবুল ইসলাম সেলিম, ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেক্টর এন্ড হেড অব প্রোগ্রাম, গ্লোবাল ওয়ান বাংলাদেশ মো. রমজান আলী, হেলাল উদ্দিন, শফিকুল ইসলাম সাদ প্রমুখ। সার্বিক সহযোগিতায় ছিলেন প্রত্যাশা সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়কারী সাইদুর রহমান, সিবিআর ওয়ার্কার আসাদুজ্জামান, মহিবুল হাবীব, আরিফুর রহমান, ফিল্ড ভলেন্টিয়ার হামিদুল ইসলাম ও আব্দুর রহমান। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সংস্থার প্রোগ্রাম ম্যানেজার ইউনুস আলী। শীতবস্ত্র প্যাকেজ হিসেবে একটি কম্বল, একটি বড়দের সুয়েটার, ছোটদের দুটি হুডি সুয়েটার, নারীদের একটি শাল, হট ওয়াটার ব্যাগ-একটি, দুটি পেট্রোলিয়াম জেলি, একটি গ্লিসারিন ও বহনযোগ্য চুলা।
পাঁচমাইল প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গায় শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়নের যুগিরহুদা ৮নং ওয়ার্ডে অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা ২টায় সরোজগঞ্জ ঈদগা মাঠে অসহায় হতদরিদ্রদের মাঝে শীতবস্ত বিতরণ করা হয়েছে। এ সময়ে যুগিরহুদা ৮নং ওয়ার্ড আয়োজিত এবং শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন যুবদলের নেতা রাজু আহম্মেদের তত্ত্বাবধানে, সাবেক যুগ্মসচিব জনতা ব্যাংকের পরিচালক ডক্টর এমএ সবুর (হাড়োকান্দির কৃতিসন্তান) এর পৃষ্ঠপোষকতায় গরিব অসহায় মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম, শঙ্করচন্দ্র ইউনিয়ন কৃষক দলের সেক্রেটারি আশরাফুজ্জামান বিপ্লব হোসেন, যুগিরহুদা ৮নং ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতি বাকু হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক নিজাম উদ্দিন, গোল্ডেন মাস্টার প্রমুখ। পরিচালনায় ছিলেন মিল্টন মালিথা।
দামুড়হুদা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবুর পক্ষে দামুড়হুদায় শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আয়োজনে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে শীতবস্ত্র কম্বল বিতরণ করা হয়। দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক একরামুল হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির, সাধারণ সম্পাদক রফিকুল হাসান তনু, যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মন্টু মিয়া, সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল হাশেম, দামুড়হুদা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সচিব জাকির হোসেনের সঞ্চালনায় আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্মআহ্বায়ক আব্দুল কাদের, রকিবুল হাসান তোতা, উপজেলা কৃষকদলের নেতা রোকনুজ্জামান তোতা, যুবদল নেতা শাসসুল আলম প্রমুখ।
ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদার কার্পাসডাঙ্গায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার বিকেলে লঙ্কা ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে কার্পাসডাঙ্গা ইসলামিয়া ফাজিল মাদাসা চত্বরে ৪ শতাধিক শীতার্ত মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে কার্পাসডাঙ্গা বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আব্দুল মালেকের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন দামুড়হুদা উপজেলা জামায়াত ইসলামীর আমির নায়েব আলী। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন লঙ্কাবাংলা ফাইন্যান্স এর সিএমএসএমই ক্লাস্টার হেড-সাউথ রিজিওন মোহাম্মদ শাহাদত হোসেন, কুষ্টিয়া শাখা মো. আহসান হাবীব, রিলেশনশিপ ম্যানেজার মো. নাসির উদ্দীন ও আলতাফ হোসেন। সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন আহসান হাবীব জুয়েল ও ডা. ইউনুস।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.