সীমান্তে নাক-কান কাটা বাংলাদেশি যুবকের লাশ উদ্ধার
জীবননগরের হরিহরনগর সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ : বিএসএফ’র ধাওয়া
জীবননগর ব্যুরো: চুয়াডাঙ্গার জীবননগর উপজেলার হরিহরনগর সীমান্ত হতে পান্না ভাঙি (৩৫) নামের এক যুবকের ক্ষত-বিক্ষত ও গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল সোমবার সকালে বিজিবি ও পুলিশ সীমান্তের কাটাতারের বেড়া হতে ১৫০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরের একটি সেগুন বাগান হতে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। নিহত পান্না হরিহরনগর গ্রামের আতিয়ার ভাঙির ছেলে। খবর পেয়ে পুলিশ, বিজিবি, সিআইডি, এনএসআই পিইবি সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
জীবননগর থানা পুলিশের ভাষ্যমতে, নিহত পান্নার বুকের বাম পাজরে গুলির মত ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। তার শরীর থেকে নাক ও একটি কান কেটে বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। তবে কিভাবে তার মৃত্যু হয়েছে ময়না তদন্তের রিপোর্ট না পাওয়া পর্যন্ত সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না। বিজিবি বলছে, সীমান্তের এতো ভেতরে এসে বিএসএফ গুলি করতে পারে না। ধারণা করা হচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীদের অন্তর্দ্বন্দ্বে পান্না খুন হয়েছে।
এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন রাতে সীমান্তের গ্রামগুলো হতে বেশ কিছু যুবক দল বেঁধে মাদকদ্রব্যসহ চোরাচালানি মালামাল আনতে ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশ করে থাকে। রোববার রাতে নিহত পান্নাসহ ৭-৮ জন হরিহরনগর সীমান্ত অতিক্রম করে ভারতের পুটখালী সীমান্তে যায়। এ সময় পুটখালী ক্যাম্পের বিএসএফ তাদেরকে ধাওয়া করে। সকলে পালিয়ে আসতে সক্ষম হলেও পান্না বিএসএফের হাতে আটক হয়। এ সময় তাকে ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সকালে তার মৃতদেহ বাংলাদেশের ১৫০ গজ অভ্যন্তরে সবুর মোল্লার সেগুন বাগানে পাওয়া যায়।
জীবননগর থানার ওসি নাসির উদ্দিন মৃধা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, নিহতের বাড়ির অদূরের একটি সেগুন বাগানে তার মরদেহ দেখতে পেয়ে স্থানীয়রা পুলিশকে জানান। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে মরদেহ উদ্ধার করে। মরদেহের একটি কান নেই, নাকের সামনের অংশ কাটা রয়েছে। এছাড়া বুকের বাম পাশে ক্ষত আছে। তিনি মাদক চোরাকারবারির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটনে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে।
সীমান্ত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. ইশাবুল ইসলাম মিল্টন বলেন, শুনেছি রাতে ভারত সীমান্তে ফেনসিডিল পাচার করতে যান পান্না। এসময় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) তাকে গুলি করে হত্যা করেছে। ভারত সীমান্তের তারকাটা থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূরে তার ক্ষতবিক্ষত মরদেহ পাওয়া গেছে। এতো দূর থেকে গুলি করে হত্যা করা সম্ভব নয়। পুলিশের তদন্তেই প্রকৃত ঘটনা উম্মোচন হবে।
মরদেহের সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুতকারী জীবননগর থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কিয়ামত আলী বলেন, পান্নার মরদেহের বাম পাজরে একটি ছিদ্র দেখা গেছে। তাকে যদি গুলি করা হয়ে থাকে তাহলে গুলিটি ভেতরে থাকতে পারে। ময়নাতদন্তের পর বিস্তারিত জানা যাবে। এছাড়া বাম কান নেই, নাকের নরম অংশের সামনের অগ্রভাগে কোনো কিছু কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঠোঁটের কিছু অংশে ক্ষত আছে।
অপরদিকে ঘটনাস্থল সীমান্তের নিকট হওয়ায় ঝিনাইদহের মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। মহেশপুর ব্যাটালিয়নের (৫৮ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মাসুদ পারভেজ রানা জানান, প্রাথমিক পর্যায়ে আমরা জানতে পেরেছি নিহত ব্যক্তি মাদক চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ঘটনাটি অভ্যন্তরীণ হতে পারে। এটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। জিরো পয়েন্টের ৭০০ গজ ভেতর থেকে উদ্ধার করেছেন পরিবারের সদস্যরা। ক্ষত চিহ্ন দেখে বোঝার উপায় নেই কীভাবে মৃত্যু হয়েছে। নিশ্চিত না হওয়ায় বিএসএফের (ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী) কাছে ঘটনা জানতে চাওয়া হয়নি। তাছাড়া সীমান্তে গুলির শব্দ শোনা যায়নি। আমাদের বিজিবির সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা ছিলো না। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করছে।