সাতদিনে ভর্তি শিশুসহ ২০৩ জন : হাসপাতালে কলেরা স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট

চুয়াডাঙ্গায় বৃদ্ধি পেয়েছে ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা

আফজালুল হক: ফুড পয়জনিং ও আবহাওয়াজনিত কারণে রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে বাড়ছে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু রোগী। এছাড়া প্রতিদিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত হাসপাতালের বহিঃবিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে প্রায় দুই শতাধিক ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী। এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে প্রায় ২০ দিন যাবত কলেরা আইভি ফ্লুইড স্যালাইনের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বাইরে থেকে রোগীরা স্যালাইন কিনে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে রোগী ও স্বজনদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, আবহাওয়া পরিবর্তন, দূষিত পানি পান করা, অস্বাস্থ্যকর ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের খাবার বিশেষ করে রাস্তার পাশের খোলা জায়গার স্ট্রিট ফুড খাওয়া, নিয়মিত হাত পরিস্কার না করে অপরিস্কার হাতে খাওয়া, অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে খাদ্য সংরক্ষণ ইত্যাদি ডায়রিয়ার অন্যতম কারণ। বর্তমানে রাতে ঠান্ডা আবার দিনে গরমের ভাব, এর থেকেই রোটা ভাইরাসের আক্রান্ত হয়ে শিশু ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। সচেতন হলেই ডায়রিয়া থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহে অর্থাৎ ১০ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল রোববার ১৬ জুলাই রাত ৭টা পর্যন্ত ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে ২০৩ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু রোগী। এদিকে ২০ দিন যাবত কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই না থাকায় রোগী ও স্বজনদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডের হেলেনা খাতুন নামের এক নারী দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, আমার ছেলে গত তিন দিন আগে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করিয়েছি। প্রতিদিন কলেরা স্যালাইন দিতে হচ্ছে। সাপ্লাই না থাকার কারণে বাইরের ফার্মেসি থেকে কলেরা স্যালাইন কিনতে হচ্ছে। একেক সময় একেক মূল্য নিচ্ছেন ফার্মেসি থেকে। হাসপাতালে সাপ্লাই না থাকায় ইচ্ছেমত কলেরা স্যালাইনের মূল্য নিচ্ছেন।
আঞ্জুরা খাতুন নামের আরেক নারী জানান, গত দুদিন থেকে আমার মেয়ের পাতলা মল আর বমি হচ্ছিল। গত পরশু সকালে হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসক ডায়রিয়া ওয়ার্ডে ভর্তি করে। হাসপাতাল থেকে খাওয়া স্যালাইনসহ যাবতীয় ওষুধ দিলেও কলেরা স্যালাইন সাপ্লাই নেই জানিয়ে বাইরে থেকে কিনে আসতে বলে।
ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত একজন সিনিয়র স্টাফ নার্স দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, কয়েকদিন যাবত আবারো ডায়রিয়া রোগের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে কলেরা স্যালাইনসহ কয়েকটি ওষুধ সরকারিভাবে সরবরাহ না থাকায় রোগীরা বাইরে থেকে কিনে আসছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মাহবুবুর রহমান মিলন দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, ইদানিং ফুড পয়জনিং এবং বর্তমানে ঠান্ডা গরমের জন্য (আবহাওয়া পরিবর্তন) রোটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ডায়রিয়া হচ্ছে। এ সময় কোনমতেই বাসি খাবার খাওয়া যাবে না। যতটা সম্ভব বাইরের খাবার এড়িয়ে চলা ভাল৷ শিশুদের প্রতি বেশি যতœ নিতে হবে। বাসি খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে, রাস্তার ধারের অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার প্রতি মানুষের সচেতনতা না বাড়লে ডায়রিয়া মোকাবিলা করা কঠিন হয়ে যাবে। এছাড়া গরমে অনেকের মাঝে পানিশূন্যতাও তৈরি হয়ে থাকে। এজন্য প্রয়োজন গরমে বেশি বেশি বিশুদ্ধ পানি পান করা, ফলমূলের শরবত পান করতে হবে।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. রকিব সাদি দৈনিক মাথাভাঙ্গাকে বলেন, সবসময়ই হাসপাতালে কম-বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে রোগীরা আসেন। তবে বর্তমানে ফুড পয়জনিং এবং আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বেড়েছে। হাসপাতালে কলেরা স্যালাইন সঙ্কটের বিষয়ে বলেন, আমরা ঢাকাতে চাহিদা পাঠিয়েছি কলেরা স্যালাইনের৷ কয়েকদিনের মধ্যেই চলে আসবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More