সকল জটিলতা কাটিয়ে তোলার জোর চেষ্টা-তদবির অব্যাহত ভোটের অপেক্ষায় এখনো কেরুজ শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও ভোটাররা
দর্শনা অফিস: ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী গতকাল শুক্রবার কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের দ্বি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত তা হয়নি। আইনি জটিলতার কারণে ঠিক তিনদিন আগে এবারের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। কেরুজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিপ্তরের সহকারী পরিচালক তৌফিক হোসেনের একের পর এক চিঠি ও নাটকীয় ঘটনাতে তাদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে। সকাল সন্ধ্যা সিদ্ধান্ত বদলানোর কারণে শ্রম অধিদপ্তরের কর্তাবাবুরা হাস্য রসের খোরাকেও পরিণত হয়েছেন। এদিকে ভোট বন্ধের কারণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রার্থীরা। ফলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। উৎসবমুখর পরিবেশ হঠাৎ করেই থমকে গেলো। নিরব ও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে কেরুজ আঙিনায়। ভোটের আশায় এখনো অপেক্ষার প্রহর গুনছে প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটাররা। অচিরেই জটিলতা কাটিয়ে তুলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই ভোট হবে বলে আশাবাদি নেতৃবৃন্দ। সে লক্ষ্যেই পরবর্তি কার্যক্রম পরিচালিত করছেন তারা। তবে নিশ্চিত বলতে পারেননি কবে নাগাদ ভোট হতে পারে। দ্রুত ভোট ফিরে পেতে করণীয় বিষয়ক আলোচনাসভা করেছে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের একাংশ। জানা গেছে, ১৯৩৮ সালে প্রতিষ্ঠিত কেরুজ চিনিকলের প্রথম শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন গঠন হয় ১৯৫৮ সালে। সে থেকেই প্রতি দু’বছর পরপর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়ে থাকে। ইউনিয়নের গঠনতন্ত্রেও সেভাবে লেখা। ৬৭ বছরের মধ্যে শুধুমাত্র প্রতি দুবছরে নির্বাচনের ব্যত্বয় ঘটেছিলো ২০০৯ সালে দেশে জরুরি অবস্থা চলাকালীন। অবশ্যই গঠনতন্ত্রের ১৮ নাম্বার অনুচ্ছেদের ক ধারায় উল্লেখ রয়েছে রাষ্ট্রিয় জরুরি অবস্থা ও প্রকৃতিক দুর্যোগ বা অনুরুপ কোনো কারণ ছাড়া কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদ ২ বছর পার হলে ওই কমিটি অবৈধ, অকার্যকর ও বাতিল বলে গণ্য হবে। তারপর থেকে নিয়ম মাফিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নে। শ্রমিক নেতৃবৃন্দ ও ভোটাররা মনে করেন কেরুজ ইউনিয়নের ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায় রচিত হলো এবারের নির্বাচনে। এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই একের পর এক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে। সকল সমস্য মোকাবেলা করে অবশেষে ভোটের তফসিল ঘোষণাও করা হয়। সে তফসিল অনুযায়ী আজ শুক্রবার ছিলো ভোটের দিন। শেষ পর্যন্ত বড় বাধার দেয়াল সৃষ্টি হয়েছে ১১ মার্চে। যখন প্রার্থীরা মাঠ গোছানোর পালা শেষ করেছে, ঠিক তখনই এ বাধার দেয়ালই আটকে দিয়েছে এবারের ভোট। ১১ মার্চ সন্ধ্যায় কেরুজ অতিথি ভবনে প্রার্থীদের নিয়ে বৈঠক করেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্যরা। ওই বৈঠকেই নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান আব্দুছ ছাত্তার পরিষ্কার জানিয়ে দেন কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের আপত্তি, গঠনতন্ত্র ও আইনি সমস্যা জনিত কারণে ১৪ মার্চের নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে। এ খবরে যেন আকাশ ভেঙে পড়ে প্রার্থী, সমর্থক ও ভোটারদের মাথায়। রাতেই শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা পাল্টাপাল্টি বৈঠক করে একে ওপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য দেন। এ ভোট বন্ধে এক পক্ষ অপর পক্ষকে প্রকাশ্যে দুষলেও ঘটেনি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা। এরই মধ্যে রাসেদুল ইসলাম নামের হিসাব বিভাগের চুক্তি ভিত্তিক এক শ্রমিক নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে হাইকোটে রিট আবেদন করেছেন। এছাড়া চৌধুরী রাসেল নামের এক শ্রমিক চুয়াডাঙ্গা আদালতে মামলাও দায়ের করেছেন। অবশ্য এ নিয়ে চুক্তি ভিত্তিক প্রায় সকল শ্রমিক-কর্মচারী জোটবদ্ধ হয়েছেন। প্রায় ৫শ’ চুক্তি ভিত্তিকের সাথে আলোচনা ছাড়া মনগড়া সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও তারা ঐক্যবদ্ধ হতে শুরু করেছেন। ভোটের দাবিতে আগের মতোই অনড় অবস্থানে রয়েছেন প্রার্থী ও ভোটারদের সিংহভাগ। এরই মধ্যে তারা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলীর সংগঠনে সমবেত হয়ে করেছেন বৈঠক। সাবেক সভাপতি তৈয়ব আলী ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুল ইসলাম প্রিন্স জানান, ভোট শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার। এ অধিকার হননে যারা পায়তারা করছে শুরু থেকে শ্রমিকদের কাছে তাদের মুখোশ খুলে গেছে। আমরা আইন, শ্রম অধিদপ্তর ও গঠনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই সকল নিয়ম মেনেই যত দ্রুত নির্বাচনের ব্যবস্থা করা সম্ভব সে পথেই হাটছি। আশা করছি অতি সন্নিকটে অপশক্তির হাত থেকে রক্ষা করা হবে শ্রমিকদের ভোটাধিকার। তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু পরিবেশে ভোট হবেই হবে ইনশাআল্লাহ। এসভায় উপস্থিত ছিলেন, সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী আব্দুল মান্নান, সাবেক সহ-সভাপতি রেজাউল করিম, সহ-সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান, এসএম কবির, ইদ্রিস আলী, রেজানুল হক, আরিফুল ইসলাম আরুক, মহিদুল ইসলাম, সাহেব আলী শিকদার, সালাউদ্দিন সনেট, সাঈফ উদ্দিন সুমন, আব্বাস আলী, আমিরুল ইসলাম, শান্তি খান, জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ। এদিকে সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ মোবাইল ফোনে জানান, সকলের মতো আমিও দ্রুত ভোট চাই। সে লক্ষ্যে নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে কাজ করছি। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যেই ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারিত করবে শ্রম অধিদপ্তর থেকে।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.