মায়ের লাশের সামনে অশ্রুসিক্ত অবুঝ দুই শিশু
ইসলাম রকিব: ‘কাল থেকে আর মাকে নিয়ে হুইল চেয়ার ঠেলতে হবে না আমার’ আড়াই বছর বয়সের আব্দুল্লাহকে কোলে নিয়ে ৮ বছরের আব্দুর রহমানের এমন গগণ বিদারী কান্নায় চোখের পানি ধরে রাখতে পারেনি উপস্থিত জনতা। গতকাল সোমবার সকাল ৮টায় আব্দুল্লাহ ও আব্দুর রহমানের মা প্রতিবন্ধি আম্বিয়া খাতুন ফার্মপাড়ার ভাড়া বাড়িতে মারা যান। দুটি সন্তানকে নিয়ে আম্বিয়া খাতুন জেলার বিভিন্ন মসজিদে মসজিদে কখনো বা বাসা বাড়িতে ভিক্ষা করতেন। বড় ছেলে (৭ বছর) আব্দুর রহমান মায়ের হুইল চেয়ার ঠেলে নিয়ে যেতো। মা আম্বিয়া তার ছোট সন্তান আব্দুল্লাহকে নিয়ে বিভিন্ন সাহায্য নিয়ে দুই সন্তান ও অসুস্থ স্বামী আকতার হোসেনের খাবার জোটাতেন। সাতক্ষীরার মেয়ে হলেও বিবাহ সূত্রে যশোহরের আকতারের সাথে বিয়ে করে প্রতিবন্ধি জীবনের তাগিদে চলে আসে চুয়াডাঙ্গায়। চুয়াডাঙ্গা ফার্মপাড়ায় ছোট্ট একটি রুম নিয়ে ভাড়া থাকতেন। আব্দুর রহমানের লেখাপড়া ও পারিবারিকভাবে কিছুটা স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য অনেকের নিকট সাহায্যের দাবি জানালে সরকারি-বেসসরকারিভাবে অনেকে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছিলো। এ বিষয়ে দৈনিক মাথাভাঙ্গায় গতবছর ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। সে প্রতিবেদন নজরে এলে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম সরকার, ডিসি পতœী সৈয়দা তাহমিনা, চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান, ডা. মিজানুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিপুল শরীফ প্রতিবন্ধি আম্বিয়ার পাশে দাঁড়ান। কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই পরিবারের একমাত্র উর্পাজনক্ষম আম্বিয়ার জীবন কেড়ে নিলো ঘাতক জন্ডিস। আম্বিয়ার মৃত্যুতে তার অসুস্থ স্বামী আকতার দুটি সন্তানকে নিয়ে শোকে পাথর হয়ে পড়েছেন। স্বামী আকতার বলেন, গত এক সপ্তাহ যাবৎ তাকে জন্ডিসের কবিরাজি চিকিৎসা করানো হচ্ছিলো। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে ফার্মপাড়া ভাড়াবাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আম্বিয়া। গতকাল সন্ধ্যায় মরহুমার নামাজে জানাজা শেষে চুয়াডাঙ্গা জান্নাতুল মাওলা কবরস্থানে দাফন করা হয়। আকতার হোসেন আরও বলেন, দুটি সন্তানকে নিয়ে কি করে সংসার চালাবো।