আলম আশরাফ: আলমডাঙ্গার রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মৃত্যুদ-প্রাপ্ত আজিজুল ও মিন্টু পরিবারের সাথে শেষ সাক্ষাৎ করেছেন। গতকাল শনিবার সকাল ১০টার দিকে পরিবারের লোকজন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছে আজিজুল ও মিন্টুর সাথে দেখা করেন। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এদিকে যশোর কারা কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদ- কার্যকর করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। আগামীকাল সোমবার রাত পৌনে ১১টায় তাদের দুজনের ফাঁসি কার্যকর করা হবে। মৃতদ-প্রাপ্তরা হলেন চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা ইউনিয়নের রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের আলীহিমের ছেলে মিন্টু ওরফে কালু ও একই এলাকার বদর ঘটকের ছেলে আজিজ ওরফে আজিজুল।
চুয়াডাঙ্গা আদালত সূত্র ও মামলার বিবরণীতে জানা যায়, আলমডাঙ্গা থানার জোড়গাছা হাজিরপাড়া গ্রামের কমেলা খাতুন ও তার বান্ধবী ফিঙ্গে বেগমকে ২০০৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর রায়লক্ষ্মীপুর গ্রামের মাঠে হত্যা করা হয়। হত্যার আগে তাদের দু’জনকে ধর্ষণ করা হয় বলে পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের পর মৃত্যু নিশ্চিত করতে গলা কাটা হয় ওই দুই নারীকে। এ ঘটনায় নিহত কমেলা খাতুনের মেয়ে নারগিস বেগম খুনের পরদিন আলমডাঙ্গা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় দ-প্রাপ্ত ওই দুজনসহ চারজনকে আসামি করা হয়। অপর দুজন হলেন একই গ্রামের সুজন ও মহি। মামলা বিচারাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন আসামি মহি।
২০০৭ সালের ২৬ জুলাই চুয়াডাঙ্গার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালত সুজন, আজিজ ও মিন্টুকে মৃত্যুদ-ের রায় ঘোষণা করেন। এরপর আসামিপক্ষের লোকজন হাইকোর্টে আপিল করেন। পরে ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে হাইকোর্ট তা বহাল রাখেন। ২০১২ সালে ১১ নভেম্বর নিম্ন আদালতের রায় বহাল রাখার আদেশ দেন হাইকোর্ট। চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি আপিল বিভাগ দুই আসামির রায় বহাল রাখেন এবং অপর আসামি সুজনকে খালাস প্রদান করেন। গত ২০ জুলাই যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান সুজন। পরে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়া হলেও তা নামঞ্জুর হয়। ৬ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগ থেকে কারা অধিদফতরকে চিঠি দেয়। যশোর কেন্দ্রীয় কারাগার ৮ সেপ্টেম্বর সেই চিঠি গ্রহণ করে।
গতকাল শনিবার সকালে খাসকররা ইউপি চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান রুন্নুর নেতৃত্বে আজিজুলের পিতা বদর ম-ল ওরফে বদর ঘটক, মা রাসুলা খাতুন, বড়ভাই সভা ম-ল ও মেজভাই আব্দুর রশিদ, আজিজুলের সাবেক স্ত্রী সুন্দরী খাতুন, ছেলে সজিব মিয়া ও মেয়ে সিমা খাতুন। মিন্টুর পিতা আলীহিম, মা আমিরুন খাতুন, বড়ভাই শুকচাঁন ম-ল ওরফে ফেন্টু, বড়বোন আলিমন খাতুন ওরফে উলি, ছোটবোন আনজিরা খাতুন, সাবেক স্ত্রী বেদেনা খাতুন, মেয়ে রিপা খাতুনসহ অর্ধশতাধিক আত্মীয়-স্বজন যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারে গিয়ে আজিজুল ও মিন্টুর সাথে দেখা করেন। এ সময় তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
এদিকে, যশোর কারাগারের একটি সূত্র বলেছে, ফাঁসির জন্য কারাগারের জল্লাদ মশিয়ার, কেতু কামালসহ বেশ কয়েকজনের প্রশিক্ষণ চলছে। এছাড়া ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতসহ ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে।
এ বিষয়ে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, ‘এই দুই আসামির ফাঁসির রায় কার্যকরের জন্য আদেশ এসেছে। আগামীকাল সোমবার রাতে আজিজুল ও মিন্টুর ফাঁসি কার্যকর করতে সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ফাঁসির রায় কার্যকরের সময় জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন ও সিভিল সার্জনের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকবেন।’ দুই আসামির পরিবারের পক্ষ থেকে শেষ দেখা করে গেছেন অর্ধশতাধিক লোক।’
পূর্ববর্তী পোস্ট
চুয়াডাঙ্গা পৌর কাউন্সিল চাঁদের ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাদ্যসামগ্রী ও স্বাস্থ্য সচেতনমূলক উপকরণ বিতরণ
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ