স্টাফ রিপোর্টার: বৈশ্বিক মহামারী করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধের ৯ম দিন ছিলো গতকাল শুক্রবার। যানবাহন কম হলেও মূল সড়ক ও গলিতে সাধারণ মানুষের চলাফেরা করতে দেখা যায়। গলির ভেতরে নেই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই। যাদের সঙ্গে মাস্ক রয়েছে তারাও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঠিকঠাক মাস্ক পরছেন না। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে। পুলিশ চেকপোস্ট কিংবা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো আইন প্রয়োগে কঠোরতার ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারছে না। আর জীবিকার তাগিদও মানুষকে অসহিষ্ণু করে বাইরে বের করে আনছে। গত ৯ দিনে বিনা প্রয়োজনে ও মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ায় জরিমানা করা হয়েছে অনেককেই। কিন্তু এর পরও মানুষের অবাধ চলাচল রোধ করা যাচ্ছে না। বাজারের চিত্রও ছিলো প্রায় একই রকম। তবে জরুরি প্রয়োজন ছাড়াও সাধারণ মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বেড়েছে। অনেকে ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন অপ্রয়োজনে। যারা বাইরে বের হচ্ছেন তাদের অনেককে মাস্ক পরতেও দেখা যায়নি।
সড়কে চেকপোস্টগুলোতে দায়িত্ব পালনরত কয়েকজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘চেকপোস্টগুলোতে এখন কার্যক্রম যেমন দেখছেন সেভাবেই চলছে। এভাবে লকডাউন হয় না।’ এক কর্মকর্তা বললেন, ‘অনেক অফিস খোলা। আমি যদি বাইরে আসা ৫০০ জনকে ধরি, প্রত্যেকের জবাব আছে এবং সবার জবাবই যৌক্তিক। সব বন্ধ না করে আসলে এভাবে লকডাউন হয় না। শ্রমজীবী মানুষের খাবার সরকার নিশ্চিত করতে পারছে না, তাকে আপনি কোন যুক্তি দিয়ে ঘরে আটকে রাখবেন? সে বাইরে আসছে, আসবে। এতে তো লকডাউনের উদ্দেশ্যও ব্যাহত হয়।’
উল্লেখ্য, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় গত ১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে শুরু হয় সাতদিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ ছিল ৭ জুলাই মধ্যরাত পর্যন্ত। পরে বিধিনিষেধের মেয়াদ আরো সাতদিন অর্থাৎ ১৪ জুলাই পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে ২১টি শর্ত দেয়া হয়। শর্ত অনুযায়ী, এ সময়ে জরুরি সেবা দেয়া দপ্তর-সংস্থা ছাড়া সরকারি-বেসরকারি অফিস, যন্ত্রচালিত যানবাহন, শপিংমল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে শিল্পকারখানা। জনসমাবেশ হয় এমন কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা যাবে না এ সময়ে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গায় সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে মোটরসাইকেল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার অপরাধে ৬ জনকে জরিমানা করেছে। গতকাল শুক্রবার আলমডাঙ্গা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি টিম সঙ্গে নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা করেন।
জানা গেছে, আলমডাঙ্গা শহরের স্বাধীনতা স্তম্ভ মোড়, নতুন বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন, লাল ব্রিজ, সাদাব্রিজ, কালিদাসপুর, আনন্দধাম ব্রিজসহ শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করেন। সরকারি বিধি নিষেধ অমান্য করে মোটরসাইকেল নিয়ে বাইরে আসার অপরাধে শহরের আনন্দধাম ব্রিজ ও লালব্রিজ এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। এ সময় কালিদাসপুর গ্রামের মহাবুল হকের ছেলে আব্দুর রহমানকে ৫শ টাকা, একই গ্রামের মৃত জান মোহাম্মদের ছেলে মেহেদী হাসানকে ৫শ টাকা, জহুরুল ইসলামের ছেলে আলী হোসেনকে ৩শ টাকা, জগন্নাথপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেনকে ৫শ টাকা, আলমডাঙ্গা শহরের আজাদ আলীর ছেলে নাজমুলকে ৫শ টাকা, মিরপুর উপজেলার আমবাড়িয়া গ্রামের ফরিদুল ইসলামের ছেলে সবিজকে ৫শ টাকা জরিমানা করেন।
দর্শনা অফিস জানিয়েছে, মহামারী করোনা ভাইরাস ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে গোটা দেশে। তুলনামূলক হারে দিনদিন করোনা রোগী ও মৃত্যুর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এ জেলায়। ফলে সরকার ঘোষিত লকডাউনে সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিজিবি ছাড়াও মাঠে রয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। লকডাউনের ৯ম দিন ছিলো গতকাল শুক্রবার। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৯টা থেকে গোটা দর্শনার প্রায় সবগুলো হাট-বাজার ও পাড়া-মহল্লায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান পরিচালনা করেন চুয়াডাঙ্গা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বিএম তারিকুজ্জামান। এ অভিযানে ৫ ব্যবসায়ীকে ৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ-ে দ-িত করেছেন আদালতের বিচারক। কারাদ-প্রাপ্তদের তালিকায় রয়েছেন দর্শনা পরাণপুরের সুলতানের ছেলে হাফিজুর রহমান ওরফে ফকির, একই মহল্লার মাহাবুবুর রহমানের ছেলে শাহিনুর রহমান (৩৫), আজমপুরের মিজানুর রহমান ওরফে মানিকের ছেলে শামসুজ্জামান ওরফে ইমন (২৩), দর্শনা থানাপাড়ার শাহাবুদ্দিনের ছেলে তরিকুল ইসলাম ও মদনার রহিম মন্ডলের ছেলে আল আমিন। দ-প্রাপ্ত আসামিদের সোপর্দ করা হয়েছে দর্শনা থানায়। আজ শনিবার ৫জনকে আদালতে সোপর্দ করতে পারে থানা পুলিশ। এদিকে ভ্রাম্যমাণ অভিযানকালে বেশ কয়েকটি চায়ের দোকানের কেতলি ও ব্রাঞ্চ উদ্ধার করা হয়। যা থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জানান লকডাউনের পর এসব মালামাল থানা পুলিশ থেকে নেয়া যাবে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন দর্শনা থানার এসআই শিহাবসহ সঙ্গীয় ফোর্স।
মুজিবনগর প্রতিনিধি জানিয়েছে, ১৪ দিনের কঠোর লকডাউনে নবম দিনেও জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান মোবাইল কোর্ট চলমান আছে। মুজিবনগরে সর্বাত্মক পালিত হচ্ছে সরকারের দেয়া ঘোষিত লকডাউন। কঠোর লকডাউনের নবম দিনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) নাজমুল আলম এবং বিজিবি‘র সহযোগিতায় দিনব্যাপী পরিচালিত হয়। মোবাইল কোর্ট মুজিবনগর উপজেলার কেদারগঞ্জ বাজার, ভবেরপাড়া, সোনাপুর, দারিয়াপুর, মোনাখালী বাজারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৯টি মামলায় ৯জন ব্যক্তিকে দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৬৯ধারা অনুসারে এক হাজার টাকা ও সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ এর ৯২ (১)ধারায় তিন হাজার ও একই আইনের ৬৬ধারা অনুসারে দুই হাজার টাকা। মোট ৯জন ব্যক্তিকে ছয় হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট
কুষ্টিয়ায় করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে : আরও ২৪ জনের মৃত্যু
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ