মেহেরপুরে হত্যা চেষ্টা ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগে সাবেক পৌর মেয়রসহ ২৮ জনের নামে যুবদল নেতার মামলা

মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে হত্যা চেষ্টা ও শ্লীলতাহানীর অভিযোগ এনে পৌর মেয়র ও জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মাহফুজুর রহমান রিটনসহ ২৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল রোববার মেহেরপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট-১ (সদর) আদালতে মামলাটি দায়ের করেন যুবদল নেতা ইমন বিশ্বাস। মামলাটি আমলে নিয়ে আদালতের বিচারক শারমিন নাহার ২৭ আগস্টের মধ্যে পুলিশকে এফআইআর দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন। বাদির পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মারুফ আহমেদ বিজন মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলাটি আমলে নিয়ে বিজ্ঞ বিচারক সদর থানাকে এফআইআরের নির্দেশ দিয়েছেন।
মামলার অন্য আসামিরা হলেন জেলা যুবলীগের যুগ্ম-আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম পেরেশান, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক বারিকুল ইসলাম, যুবলীগ নেতা মিজানুর রহমান হিরণ যুবলীগ নেতা নাহিদ, রিয়েল, সোহানুর রহমান বাদশা, ২ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহ আল মামুন, যুবলীগ নেতা মাহাবুব খা, লিখন, ইয়ানুস, তুফান, সাজিজুর রহমান সাজু, কাজল দত্ত, আব্দুল হাই, মেজবাহ উদ্দিন, মিজানুর রহমান অপু, রিফাতুল, মাহাবুব ডালিম, শারাফত আলী, হিরক, জাহাঙ্গীর, ফাহাদ, সহিদুজ্জামান সুইট, আঙ্গুর, রাফিউল ইসলাম, মিজানুর রহমান মিঠু, আলমগীরসহ অজ্ঞাত ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে বাদি লিখেছেন, আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী যুবদলের একজন রাজনৈতিক কর্মী। ২০১৭ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ঘটনার তারিখে দেশের এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অবস্থার প্রেক্ষিতে আমি ফেসবুক থেকে ‘ইমন বিশ্বাস/যুবদল মেহেরপুর’ উল্লেখে একটি রাজনৈতিক পোস্ট করি। যার শিরোনাম ছিলো (দক্ষিণ এশিয়ার কুখ্যাত তিন নরঘাতক : মোদী, সূচি এবং হাসিনা। প্রথমজন: গুজরাটের কসাই হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন, দ্বিতীয়জন: আরাকানের ডাইনি হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন আর তৃতীয়জন নিজ দেশে ৫শ লোককে গুম করে শাপলা চত্বরে আলেমদের হত্যা করে লাশ গুম করেন মাঝে মাঝে বিরোধীদের গুম করবার কারণে গুমকুমারী হিসেবে কুখ্যাতি অর্জন করেছেন) মর্মে পোস্ট করলে আসামিরা আমাকে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। আমাকে না পেয়ে, আসামিরা সংঘবদ্ধ হয়ে আমার বাড়ীতে উপস্থিত হয়ে ভাংচুর ও লুটপাট করে ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি করে। ঘরে রক্ষিত নগদ আনুমানিক ২ লাখ ৫৫ হাজার টাকা চুরি করে নেয়। ৩ নম্বর আসামি নাহিদ আমার স্ত্রীর পরনের কাপড়চোপড় ধরে টানাটানি করে শ্লীলতাহানী করে। তার শরীরে থাকা সোনার গয়না (গলার হার ৬ আনা, কানের দুল ৩ আনা, হাতের বালা এক ভরি) জোর করে ছিনিয়ে নেয়। এসময় আমার মা মমতাজ বেগম ঠেকাতে এলে আসামিরা তাকে ব্যপক মারধর ও শ্লীলতাহানি করে এবং তার শরীরে থাকা সোনার গয়না (গলার হার ১২ আনা, কানের দুল ২ আনা, হাতের চুরি ৪ আনা) জোর করে ছিনিয়ে নেয় এবং আমার মাকে আসামিরা জোরে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে আমার মায়ের মাথার পেছনে মারাত্মক আঘাত লাগে। আহত হয়ে ১ বছর চিকিৎসাধীন থেকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
এজাহারে তিনি আরও উল্লেখ করেন, পরে আসামিরা আমাকে যেখানে পাবে সেখানে হত্যা করবে মর্মে হুমকি দিয়ে আমার বাড়ী থেকে চলে আসে এবং মোটরসাইকেলযোগে শহরের রাস্তায় আমাকে খোঁজাখুঁজি করতে থাকে। নীলমনি সিনেমাহল রোডের পশ্চিম বোসপাড়া পেশকারের বাগানের সামনে দিয়ে যাবার সময়ে সামনের রাস্তা দিয়ে আসামিরা আসতে থাকে। বিদ্যুতের আলোতে আসামিরা আমাকে দেখে চিনে ফেলে এবং আমাকে ধাওয়া করে ধরে ফেলে। আসামিরা জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে হত্যা করার উদ্দেশ্যে আমার ওপরে মাথায় মাঝ বরাবর স্বজোরে আঘাত করে মাথা ফাটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ১১ নম্বর আসামি তুফান তার হাতে থাকা জিআই পাইপ দিয়ে আমাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার বাম চোখের ভুরুর ওপরে স্বজোরে আঘাত করে। এতে আমি সেখানে পড়ে গেলে সকল আসামিরা আমাকে ঘিরে ধরে তাদের হাতে থাকা ভোতা অস্ত্র দ্বারা আমার শরীরের বিভিন্ন স্থানে মারাত্মক আঘাত করতে থাকে এবং সমস্ত শরীর জখম করতে থাকে। আসামিরা আমার মটর সাইকেলটি ভাংচুর করে আনুমানিক বিশ হাজার টাকার ক্ষতি করে। এসময় ৩ নম্বর আসামি নাহিদ আমার প্যান্টের পেছনের বাম পকেটে থাকা মানিব্যাগটি চুরি করে নেয়। যে মানিব্যাগে আদায়ের ছাব্বিশ হাজার টাকা ছিলো। পরে পুলিশ সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে। তিনদিন পর ১৭ নম্বর আসামি মিজানুর রহমান অপু আমার নামে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের ৫৭(২) ধারায় মামলা করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে এবং চিকিৎসা শেষে কারাগারে প্রেরণ করে। পরবর্তীতে আমি থানায় যেয়ে অভিযোগ করতে চাইলে থানা রাজনৈতিক কারণে মামলা গ্রহণ করেনি। আসামিদের হত্যার হুমকি থাকায় আমি আদালতেও মামলা করতে পারিনি।

 

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More