মেহেরপুর অফিস: খাবারের সন্ধানে মেহেরপুরের বিভিন্ন অঞ্চল দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হনুমানের দল। তাদের লাফা-লাফি ছেলে-মেয়েদের ভালো লাগলেও খাবার না পেয়ে বিভিন্ন ফসল তছরুপ করছে তারা। স্থানীয়রা ফসল ও বাড়িঘর রক্ষার্থে গুলটি ও লাঠি-সোটা নিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। সরকারিভাবে এদের খাবারের ব্যবস্থা করা হলে অত্যাচারের মাত্রা কিছুটা কমতে পারে বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। তবে বনবিভাগ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মেহেরপুরে বন-জঙ্গল না থাকায় হনুমানের কোনো আবাসস্থল নেই। গত বছর থেকে বিভিন্ন এলাকায় দেখা মিলছে দলছুট হনুমানের। এত হনুমান দেখে স্থানীয়রা প্রথমে খুশি হলেও তাদের অত্যাচারে এখন অতিষ্ট গ্রামের কৃষকরা। এরই মধ্যে বাচ্চা জন্ম দিয়েছে মা হনুমান। দল বেঁধে ছুটছে এগাছ থেকে ওগাছ। পর্যাপ্ত খাবার না থাকায় হনুমানের দল এখন ক্ষতি করছে ফসলের। বাঁশ বাগান অথবা বড় গাছে অবস্থান নিলেও ক্ষুধা পেলে সুযোগ বুঝে কলা, ভুট্টা, পেয়ারা, বরইসহ বিভিন্ন ক্ষেতে হানা দিচ্ছে হনুমানের দল। নিজে খাওয়ার পাশাপাশি নষ্ট করছে অনেক ফসল। ফসল রক্ষার্থে কৃষকরা গুলটি ব্যবহার করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। স্থানীয়দের দাবি, করোনা মহামারির সময় খাবার সংকটের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও ভারত থেকে এসব হুনুমান এখানে এসে বংশ বিস্তার করছে। মেহেরপুর সদর উপজেলার বাবুরপাড়া গ্রামের মসজিদ সংলগ্ন একটি গাছে অর্ধশত হনুমান এসেছে কয়েকদিন আগে। শুধু এই গ্রামেই নয়, আশপাশের অনেক গ্রামেই বিভিন্ন দলে বিভিক্ত হয়ে বিচরণ করছে হনুমানের দল। বাবুর পাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, মসজিদের মুসল্লিসহ গ্রামের অনেকেই রুটি-কলা দিয়ে কাছে ডাকছে হনুমানকে। কলা ও রুটি দেখালেই কাছে এসে খাবার নিচ্ছে হনুমান। মা হনুমানগুলি সবার বুকেই ধরে রেখেছে একটি বা একাধিক বাচ্চা। শিশু-কিশোরসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ হনুমান দেখতে ভিড় করছে। বাবুর পাড়া গ্রামের ইদ্রিস আলী জানান, দুদিন ধরে মসজিদের একটি গাছে অর্ধশত হনুমান রয়েছে। সামনেই পেপে বাগান। খাবার না পেয়ে পেপে বাগান তছরুপ করছে তারা। ওই গ্রামের বুলবুল আহাম্মেদ বলেন, আমাদের পরিবারের খাবার থেকে কিছু অংশ হনুমানদের খাওয়াচ্ছি, তবে যা দিচ্ছি তা চাহিদার তুলনায় খুব সামান্য। প্রতিটি হনুমানের বাচ্চা হয়েছে, তাই খাবারের চাহিদাও বেশি। খাবার না পেয়ে বিভিন্ন বাড়ি ও বাগানে অত্যাচার করছে। শুনেছি হনুমানের খাবারের জন্য নাকি সরকারি বরাদ্দ আছে তা থেকে খাবার সরবরাহ করলে কিছুটা হলেও অত্যাচার কমবে। পথচারী গোলাম মোস্তফা বলেন, পথের ধারেই হনুমানের দল চোখে পড়ে। দোকান থেকে কলা-পাউরুটি কিনে খাওয়ালাম। বড় গাছ না থাকায় আবাসস্থল হারিয়ে গেছে। হনুমানসহ বিভিন্ন প্রাণির আবাসস্থল করা হলে বিলুপ্তি হওয়া এসব প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা পাবে। স্কুলছাত্র রকিব বলে, হনুমান দেখতে অনেক ভালো লাগে। আমরা বন্ধুদের নিয়ে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে খাবার সংগ্রহ করছি এবং তাদের খাওয়াচ্ছি। গ্রামবাসীর পাশাপাশি বন বিভাগ ও প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানাই। গত বছর মেহেরপুর জেলায় ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। এ বছর ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ এসেছে। সদর ও মুজিবনগর উপজেলায় হনুমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হলেও গাংনী এলাকায় হনুমানদের জন্য কোনো খাবার দেয়া হয় না। ফলে এ এলাকার হনুমানের দল বেপরোয়া। তা ছাড়া জেলায় কতো সংখ্যক হনুমান রয়েছে তার পরিসংখ্যানও বন বিভাগের কাছে নেই। মেহেরপুর জেলা ফরেস্টার জাফর উল্লাহ জানান, বিভিন্ন স্থান থেকে হুনুমান এসেছে এবং বংশ বিস্তার করে সংখ্যায় বাড়ছে। ফলে জেলায় কতো সংখ্যক হনুমান আছে তার পরিসংখ্যান করা মুশকিল। তবুও এক জরিপে জেলায় পাওয়া গেছে পাঁচ শতাধিক হনুমান। প্রথমে ৪৫ হাজার টাকা বরাদ্দ আসে। তবে চলতি অর্থ বছরে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে জেলা সদর ও মুজিবনগরে একটি কমিটি করে টেন্ডারের মাধ্যমে হনুমানের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, স্থানীয় কৃষকদের ফসলের ক্ষতি করছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। যেহেতু বন্যপ্রাণী আমরা হত্যা করতে পারি না, সে জন্য স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে এবং যাতে ফসলের ক্ষতি কম হয় সেজন্য উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে।