মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এবং মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক সাগর বিজয়ী হয়েছেন। তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থী। গতকাল রোববার ভোটগণনা শেষে কেন্দ্রগুলোর ফলাফল একত্রিত করে বেসরকারিভাবে নৌকার প্রার্থীদ্বয়কে বিজয়ী ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা শামীম হাসান। নানা আশঙ্কা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন হয়েছে মেহেরপুর জেলার দুটি আসনের ভোট গ্রহণ। ভোটে দুটি আসনেই বিজয়ী হয়েছে নৌকা। এরমধ্যে মেহেরপুর-১ আসনে জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন হ্যাট্রিক করেছেন। মেহেরপুর-২ আসনে বিজয়ী হয়েছেন নতুন মুখ ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক সাগর। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এই কর্মযজ্ঞে দু’একটি ছোটখাটো অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই পুরো পরিবেশটাই ছিলো শান্ত। আর সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে গিয়েই মাথা ফাটিয়েছেন এক পুলিশ কনস্টেবল। মেহেরপুর সদর ও মুজিবনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-১ আসনে ফরহাদ হোসেন বিজয়ী হয়েছেন ৩৬ হাজার ৬২১ ভোটে। তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৯৪ হাজার ৩০৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আব্দুল মান্নান ট্রাক প্রতীকে পেয়েছেন ৫৭ হাজার ৬৮২ ভোট। এ আসনটিতে মোট ৩ লাখ ৩৭ জন ভোটার রয়েছেন। ভোট প্রদানের হার ৫৩ দশমিক ১৭ ভাগ। আসনটির ৬ প্রার্থীর মধ্যে চার প্রার্থীই জামানত হারাবেন। শুধুমাত্র গাংনী উপজেলা নিয়ে গঠিত মেহেরপুর-২ আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রার্থী ডা. আবু সালেহ মোহাম্মদ নাজমুল হক সাগর বিজয়ী হয়েছেন ২৩ হাজার ১৩৫ ভোটে। তিনি নৌকা প্রতীকে পেয়েছেন ৭২ হাজার ৭২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি বীর মুক্তিযোদ্ধা মকবুল হোসেন ট্রাক প্রতীকে ৪৯ হাজার ৫৯৩ ভোট পেয়েছেন। এ আসনটিতে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৯২৯ ভোট। ভোট প্রদানের হার ৫০ দশমিক ১৭ ভাগ। সকাল ৮টা থেকে বিরতিহীনভাবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হয়। সুষ্টু ও শান্তিপূর্ণভাবে ভোট প্রদান করতে পেরে সন্তোষ প্রকাশ করেন ভোটাররা। নাজমুল হক সাগর ও মকবুল হোসেন ছাড়া বাকি সবার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। এদিকে মেহেরপুর-১ আসনের অন্তর্গত মেহেরপুর সদর উপজেলার বারাদী ইউনিয়নের কয়রাডাঙ্গা ভোটকেন্দ্রে ভোটারদের বাধাদান ও মারধরের দায়ে নৌকা সমর্থক তিন জনকে ৭ দিন করে কারাদ- দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্রে জানা গেছে, কলাইডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোট কেন্দ্রে ভোট দিতে গিয়েছিলেন স্থানীয় সংরক্ষিত মহিলা মেম্বার বুলবুলি খাতুন। এ সময় নৌকা প্রতীকের সমর্থক সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলামসহ কয়েকজন তাকে চড় থাপ্পড় দেয়। ঘটনার সময় কেন্দ্র ও কেন্দ্রের আশেপাশের দায়িত্বে থাকা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নজরুল ইসলাম (৬০), নিয়ামত আলী (৫২) ও ইউনুস আলী নামের তিন নৌকা সমর্থককে আটক করেন। সাবেক মেম্বার নজরুল ইসলামসহ তিন জনকেই সাতদিন করে কারাদ- দেন ভ্রাম্যমাণ আদালত।
এদিকে ভোট শেষ হওয়ায় আগ মুহূর্তে মেহেরপুর-২ আসনের অন্তর্গত গাংনী উপজেলার মাইলমারী সরকারি বিদ্যালয়ের সামনে দুই পক্ষ অবৈধভাবে অবস্থান নেয়। পুলিশ সদস্যরা তাদেরকে সরাতে গেলে ইট ছুড়ে মারা হয়। এতে রহমান নামের এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। এ ঘটনায় আক্কাস আলী নামের এক ব্যক্তিকে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদ- দিয়েছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রনি খাতুন।
অন্যান্য প্রার্থীদের ভোটের অবস্থা; মেহেরপুর-১ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ছয়জন এবং মেহেরপুর ২ আসনের প্রার্থী সাত জন। তবে আওয়ামী লীগ এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যেই মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। অন্য দলের প্রার্থীদের অনেকের জামানত বাজেয়াপ্ত হতে পারে বলে জানা গেছে।
মেহেরপুর-১ আসনে মোট প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। এর মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছেন স্বতন্ত প্রার্থী সাবেক এমপি জয়নাল আবেদীন। তিনি ঈগল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন এক হাজার ৪৪০। চতুর্থ স্থানে রয়েছেন জাতীয় পার্টি প্রার্থী আব্দুল হামিদ। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ৮২০ ভোট। পঞ্চম স্থানে রয়েছে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) প্রার্থী তারিকুল ইসলাম লিটন। তিনি ৪৫৯ ভোট পেয়েছেন আম প্রতীকে। ষষ্ট স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তি জোট প্রার্থী বাবুল জম। ছড়ি প্রতীকে তিনি পেয়েছেন ২৪১ ভোট। বাতিল হয়েছে ৪ হাজার ৫৯৬টি ভোট। মেহেরপুর-২ (গাংনী) আসনে মোট ৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মেহেরপুর-১ আসনে জাতীয় পার্টির অবস্থান চতুর্থ হলেও গাংনীতে তা তৃতীয়। জাতীয় পার্টি প্রার্থী কেতাব আলী লাঙ্গল প্রতীকে ভোট পেয়েছেন ৮৯৬। চতুর্থ স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট প্রার্থী শাহ জামাল। ছড়ি প্রতীকে তিনি ২৯৪ ভোট পেয়েছেন। পঞ্চম স্থানে রয়েছেন বিএনপির সাবেক এমপি তৃণমূল বিএনপি প্রার্থী আব্দুল গনি। সোনালী আঁশ প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন ২৯১টি। ষষ্ট স্থানে রয়েছেন বাংলাদেশ কংগ্রেস প্রার্থী আল ফারুক। ডাব প্রতীকে তিনি ২৭৩ ভোট পেয়েছেন। সপ্তম স্থানে রয়েছেন ন্যাশনাল পিপলস পার্টি প্রার্থী গোলাম রসুল। আম প্রতীকে তিনি ভোট পেয়েছেন ২০৮টি। এ আসনে ৪ হাজার ১২৮টি ভোট বাতিল হয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.