মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুরে গ্রামগুলোতে সুপেয় পানির হাহাকার বিরাজ করছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় টিউবওয়েল ও সেচ পাম্পগুলো এখন প্রায় পানিশূন্য। গভীর নলকূপের জন্য আবেদন করেও মিলছে না কোনো সমাধান। পানি সংকটে তাইতো দুর্বিষহ এলাকাবাসীর জীবন। পানির অভাবে ব্যাহত হচ্ছে চাষাবাদ। দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়া হলে ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত এসব এলাকার সাধারণ মানুষ। নতুন করে বেশকিছু গভীর নলকূপ স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর। পানির তীব্র সংকটে পড়া গ্রামগুলোর মধ্যে একটি মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার জয়পুর গ্রাম। অন্য গ্রামগুলোর মতো এখানেও বেশির ভাগ বাড়িতে বসানো টিউবওয়েলে নেই পানি। প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে মসজিদে স্থাপিত গভীর নলকূপটি ভিড় করে পানি সংগ্রহ করছেন গ্রামবাসী। এটিই এখন একমাত্র ভরসা। সারাদিন লাইন দিয়ে চলে পানি সংগ্রহ। নিজেদের বাড়ির টিউবওয়েলগুলো অকেজো হয়ে পড়ে আছে। ভূগর্ভে পানির লেয়ার নেমে যাওয়ায় এখন আর পানি পাওয়া যায় না টিউবওয়েলে। পানি দিতে আসা গৃহিণীরা জানান, গ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে পানি সংগ্রহ করতে হয়। কেউ কেউ এক থেকে দেড় কিলোমিটার পথ হেঁটে এসে পানি সংগ্রহ করেন।
শুধু জয়পুর নয়, জেলার আমদহ, তারানগর, বিশ্বনাথপুরসহ অনেক গ্রামেই নলকূপগুলো পড়ে রয়েছে অকেজো অবস্থায়। সমস্যা সমাধানে কেউ কেউ ৫০০ থেকে ৫৫০ ফিট নিচে নলকূপ স্থাপন করেও পাচ্ছেন না সুরাহা। আগে যেখানে ১৫০ ফিটে পাওয়া যেত ভরপুর পানি। দিন যত যাচ্ছে সংকট তত তীব্র হচ্ছে বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর।
এমনই একজন তারানগর গ্রামের আবদুস সামাদ জানান, আগে টিউবওয়েলে ১০০ ফিটের নিচে পাইপ বসালে পানি উঠত। কিন্তু এখন টিউবওয়েলটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে। বর্তমানে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর গভীর নলকূপের জন্য আবেদন করেছি। কোনো সাড়া মিলছে না।
শুধু পাড়া-মহল্লায় নয়, মাঠে মাঠে কৃষকরাও ভুগছেন একই সমস্যায়। অধিকাংশ জমিতে ইঞ্জিনচালিত সেচপামগুলোতে উঠছে না পর্যাপ্ত পানি। অতিরিক্ত জ্বালানি ব্যবহারে বাড়ছে খরচ। এতে দুশ্চিন্তায় কৃষকরা।
শিবপুর গ্রামের কৃষক ডালিম জানান, মাঠের প্রায় ৬০ ভাগ সেচপামগুলোতে পানি উঠতে সমস্যা হচ্ছে। পূর্বে এক বিঘা জমি সেচ দিতে এক ঘণ্টা সময় লাগলে এখন সময় লাগছে দ্বিগুণ। এ ছাড়া অনেক ইঞ্জিনে এখন আর পানি উঠছে না। বিএডিসি ক্ষুদ্র সেচ প্রকল্পের ডিপ সেচপাম্পগুলো থেকে পানি উঠলেও সেখানে খরচ বেশি।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক শংকর কুমার মজুমদার সম্প্রতি সময় সংবাদকে বলেন, বৈশ্বিক আবহাওয়ার ফলে মাঠের ইঞ্জিনচালিত পাম্পগুলোতে এখন পানি কম হচ্ছে। আমরা সেচের পানির অভাব দূর করতে সন্ধ্যা থেকে রাতের মধ্যে জমিতে পানি দেয়ার পরামর্শ দিচ্ছি। কৃষিপণ্য উৎপাদনে এখন কোনো সমস্যা না হলেও ভবিষ্যতের জন্য এটি একটি হুমকি বলেও জানান তিনি।
গভীর নলকূপের আবেদনের বিষয়ে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মোসলেহ উদ্দিন বলেন, আমাদের কাছে অনেক আবেদন জমা রয়েছে, বরাদ্দ কম হওয়ায় আমরা এখন আর ব্যক্তিপর্যায়ে গভীর নলকূপ স্থাপন করছি না। প্রতিটি মহল্লায় একটি করে গভীর নলকূপ স্থাপন করা হবে যেখান থেকে আশপাশের পরিবারগুলো পানি সংগ্রহ করবে। নতুন করে আরও ৫০০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের তথ্যমতে, জেলায় গভীর-অগভীর মিলিয়ে ৯ হাজার ৯১৩টি নলকূপ রয়েছে। এর মধ্যে কাজে আসছে না ২ হাজার ২৩৯টি। ২০২২ থেকে এ পর্যন্ত ৪৮৩টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে।