মেহেরপুরের একটি টিউবওয়েলে চাপ ছাড়াই হরদম উঠছে পানি : রোগমুক্তির আশায় অনেকেই জ্বালাচ্ছেন আগরবাতি
ভীড় জমাচ্ছে হাজারও মানুষ : সানো হয়েছে বেশ কয়েকটি দোকান
মেহেরপুর অফিস: বৈদ্যুতিক মটর বা কোনো হাতের চাপ নয়, তারপরও নলকুপের মুখ দিয়ে অনবতরত পড়ছে পানি। বর্ষায় ভূপরিমণ্ডলে চাপের কারণে এমনটি হচ্ছে বলে অভিজ্ঞমহল মন্তব্য করলেও এক শ্রেণীর মানুষ মেতেছে বাণিজ্য নিয়ে। এ পানি পান করলেই মিলবে রোগমুক্তি! এমন গুজবে দূর-দূরান্ত থেকে পানি নিতে ভীড় জমাচ্ছেন শত শত মানুষ। চিকিৎসক ও মসজিদের ঈমামরা বলছেন, নলকূপের পানিতে রোগমুক্তি হয় এমন তথ্য চিকিৎসা বিজ্ঞান ও ধর্মীয় শাস্ত্রে নেই। আর ভূগোল ও পরিবেশের শিক্ষক বলছেন, এটি অলৌকিক কোন ঘটনা নয়।
নলকুপের পাশেই জ্বালানো হয়েছে একগুচ্ছ আগরবাতি। কেউ টিউবয়েলের পানি পান করছেন কেউবা বোতলে ভর্তি করছেন। আবার কেউবা তুলছেন সেলফি। যেনো টিউবয়েলটি নিয়ে সাধারণ মানুষের কৌতুহলের শেষ নেই। অনেকেই আবার এটি অলৌকিক ঘটনা বলেও দাবি করছেন। আর এ পানি পান করলে দুর হবে দুরারোগ্য ব্যাধিসহ নানা ধরনের জটিল ও কঠিন রোগ। তবে এ পানি খেয়ে রোগ ভালো হয়েছে এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি। এখনও কোনো প্রতারণার ফাঁদ পাতা না হলেও একটি চক্র এটিকে পুঁজি করে ব্যবসার ফন্দি আটছে বলে মনে করছেন অনেকেই।
ওই জমির মালিক আনারুল ইসলাম জানান, তিনি একজন লালনভক্ত। লালন চর্চা করার জন্য সেখানে কয়েক বছর আগে দুটি ছোট ছোট ঘরও নির্মাণ করেন। টিউবয়েলটি বসানো হয় দুই বছর আগে। তবে সাত দিন আগে থেকে টিউবওয়েলের মুখ থেকে পানি বের হচ্ছে। টিউবয়েলের হ্যান্ডেলে কোনো চাপও দিতে হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে হতবাক তিনি। গত বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা থেকে সাধারণ মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। তারপর থেকেই বোতল ভর্তি করে তারা পানি নিতে যেতে থাকে। অনেকেই সেখানে পানি পান করছেন। রোগ মুক্তির আসায় তারা পানি নিয়ে যাচ্ছেন বলেও জানান তিনি।
ভবানিপুর গ্রামের রেজাউল জানান, সাধারণ মানুষ যাতে পানি নিতে পারেন সেই লক্ষ্যে নীচের দিক থেকে মাটি কেটে সিড়ি বানানো হয়েছে। যাতে সহজেই মানুষ এখানে আসতে পারেন। এছাড়াও শৃঙ্খলার জন্য তারা তদারকি করছেন। মেহেরপুর শহর থেকে আসা বাবু নামের এক ব্যক্তি জানান, বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি জটিল রোগে ভুগছেন। বিভিন্ন জায়গায় চিকিৎসা নিয়ে খুব একটা ফল হয়নি। অনেকের মুখে থেকে শুনে তিনি এখানে পানি নিতে এসেছেন। এ পানি খেয়ে কারও রোগ সেরেছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। সিন্দুরকোটা গ্রাম থেকে আসা কোহিনুর বেগম জানান, আলৌকিকভাবে পানি পড়ছে। নিজের বিশ^াস থেকেই এখানে এসেছেন। হয়তো এ পানি খেলে রোগ সেরে যাবে। এখন নিজে এ পানি পান করছি। আর বোতল ভর্তি করে পানি নিয়ে যাবো বাড়ির অন্য সদস্যদের জন্য।
তবে ভবানিপুর গ্রামের শিক্ষক আনারুল জানান, বিষয়টি ইন্টারনেট ও মুখে মুখে প্রচারের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। এখনই লাগাম টেনে না ধরলে বিষয়টি অন্যদিকে গড়াবে। এছাড়াও এটাকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি দোকানও বসানো হয়েছে। গাংনী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক এনামূল আযীম জানান, এটি অলৌকিক কোনো বিষয় না। অস্ট্রেলিয়া ও পার্বত্য অঞ্চলের পাদদেশে এটি বেশি হয়ে থাকে। অতিবৃষ্টির ফলে কাঁদার স্তর বাকা হয়ে পানির নীচে চাপের সৃষ্টি হয়। তখনই এ ধরনের ঘটনা ঘটে। পানি শুকানোর সাথে সাথে টিউবয়েলের পানিও বন্ধ হয়ে যাবে।
গাংনী দারুস সালাম মসজিদের পেশ ঈমাম হাফেজ মাও. রুহুল আমিন জানান, রোগমুক্তির আশায় শুধুমাত্র জমজমের পানি পান করলে ফল পাওয়া যায়। এটি কোরআন হাদিস স্বীকৃত। এছাড়াও অন্য কোনো টিউবওয়েলের পানি খেলে রোগমুক্তি হবে এটা গুজব ছাড়া কিছুই নয়। ঢাকা মেডিকেল বিশ^বিদ্যালয়ের চিকিৎসক ডা. সজিব উদ্দীন স্বাধীন বলেন, কুসংস্কার থেকেই এটি সাধারণ মানুষের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে। অস্বাভাবিক কোনো বিষয় সাধারণ মানুষ দেখলেই অলৌকিকভাবে তার পেছনে ছোটে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এসব গুজবের কোনো স্থান নেই। এ পানি পানি পান করলে রোগমুক্তি হবে এটা ভাবা বোকামির শামিল।