মাজেদুল হক মানিক: মেহেরপুর জেলার ঈদ পোষাকের বড় অংশ দখল করে আছে ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোষাক। তবে এই পোষাকগুলো সত্যিকারের অর্থে কোথায় তৈরী তা নিয়ে ক্রেতাদের মনে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। দেশে তৈরী পোষাক ভারতীয় এবং পাকিস্তানি নামে বিক্রি করে বাড়তি অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন দোকানীরা। দোকানীরা স্বীকার করছেন, বিদেশী নামে বিক্রি হওয়া এ পোষাক দেশী পোষাক হিসেবে বিক্রি হলে দামের ফারাক হতো বেশটুকু। পোষাকগুলোতে কোন দেশে তৈরী তার কোন লেভেল কিংবা ট্যাগ নেই।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেহেরপুর জেলা শহর, গাংনী, মুজিবনগর, বামন্দীসহ বিভিন্ন পোষাকের দোকানে এবার ভারতীয় এবং পাকিস্তানী পোষাকের চাহিদা অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বেশি। বিশেষ করে পাকিস্তানি পোষাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ অনেক বেশি। দোকান থেকে বিদেশী পোষাক হিসেবে কেনা হলেও আসলে তা কোন দেশে তৈরী তার কোন লেবেল নেই পোষাকের গায়ে। হুজুগে বাঙালি বলে কথা। তাই দোকানীরাও সুযোগ নিচ্ছেন ক্রেতাদের চাহিদার।
থ্রি-পিসের মত পাঞ্জাবির ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। একই ধরনের পাঞ্জাবি একটি ভারতীয় অন্যটি পাকিস্তানী বলে বিক্রি করা হচ্ছে দোকানে। দেশীয় পোষাক বিদেশী নামে কেনা লজ্জাজনক হলেও প্রায় সব ক্রেতাই তাই করে যাচ্ছেন বলে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে গার্মেন্টসগুলোতে ভারতীয় এবং পাকিস্তানি নামে কিছু পাঞ্জাবী বিক্রি হচ্ছে। ঢাকার কোম্পানী রানাচাঁন গার্মেন্টস বিদেশী পোষাক হিসেবে সারাদেশের ব্যবাসায়ীদের কাছে বিক্রি করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় মেমো থেকে এ তথ্য মিলেছে। তবে বাস্তবতায় দেখা গেছে, পাঞ্চাবিতে যে ট্যাগ লাগানো রয়েছে তাতে ইংরেজীতে রানাচাঁন কোলকাতা এবং অপরটিতে রানাচাঁন এবং আরবি লেখা রয়েছে। আরবি লেখা ট্যাগের পাঞ্জাবি পাকিস্তানি এবং কোলকাতা লেখা ট্যাগের পাঞ্জাবি ভারতীয় পোষাক বলে বিক্রি করছেন স্থানীয় পোষাক বিক্রেতারা। প্রকৃতঅর্থে এগুলো ভারত ও পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত নাকি দেশীয় তৈরী পোষাক বেশি দরে বিক্রির জন্য বিদেশী ট্যাগ ব্যবহার করা হচ্ছে সে প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। এদিকে থ্রিপিসের অবস্থাও একই। পোষাকের গায়ে যে ট্যাগ রয়েছে তাতে কোন দেশের পোষাক তা উল্লেখ নেই।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গার্মেন্টস ব্যবসায়ী বলেন, পাকিস্তানি ও ভারতীয় নামে যে থ্রিপিসগুলো বিক্রি হচ্ছে তার একটির বিক্রির মুল্য সাড়ে ৩ হাজার টাকা। এই পোষাক দেশীয় হিসেবে ২ হাজার ৫০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা যেত। মূলত ঢাকার পোষাক বিক্রিকারী প্রতিষ্ঠানগুলো পাকিস্তানি ও ভারতীয় পোষাক বলে সারাদেশের ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করে বেশি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
ক্রেতারা বলছেন, মূলত পোষাক বাজারে ঈদের সময় যা হয় তার অনেকটাই ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা। পরিবারের চাহিদা থাকে তাই সবকিছু যাচাই করে সাধারণ ক্রেতার পক্ষে পোষাক কেনা সম্ভব হয় না। তাছাড়া প্রায় সব দোকানের চিত্র একই তাই অনিয়মটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। সেক্ষেত্রে ক্রেতাদের মেনে নেয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। এ বিষয়ে প্রশাসনের অভিযানে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি করেন কেউ কেউ।
বিষয়টি গোচরে আনলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার প্রীতম সাহা বলেন, বিষয়টি অবশ্যই ক্রেতাদের সাথে প্রতারণার সামিল। বাজার মনিটরিং কার্যক্রমে মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.