ভোটের দাবিতে ছুটছেন নেতৃবৃন্দ : নির্বাচনমুখী কেরুজ শ্রমিক ভোটাররা

তফসিল ঘোষণা হলেই ফিরে পাবে ভোটের পরিবেশ

হারুন রাজু: ধীরে ধীরে বোমা আতঙ্ক কাটতে শুরু করেছে কেরুজ আঙিনা থেকে। ফিরে পাচ্ছে ভোটের পরিবেশ। নির্বাচনমুখী শ্রমিক-কর্মচারীদের মধ্যে নতুন করে ভোটের বাতাস লাগতে শুরু করেছে। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা হলেই ভোটের পূর্ণ পরিবেশ ফিরে পাবে বলেই ধারণা ভোটারদের। ভোটের দাবিতে একপক্ষ ছুটলেও অপর পক্ষ কৌশলে তা এড়িয়ে যাচ্ছে। ভোট না হলে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ৬৭ বছরের কলঙ্ক লেপন হবে এবার। নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে ভোটের আগে ও পরের পরিবেশ স্বাভাবিক রাখতে পারবে কী-না প্রশাসনকে সে মর্মে দেয়া হয়েছে পত্র। এদিকে কেরুজ চিনিকল এলাকায় বোমা আতঙ্ক দূর করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে ঝোপঝাড় কেটে পরিস্কার করার পাশাপাশি মিল এলাকার প্রবেশ পথগুলোতে স্থাপন করা হয়েছে গেট। সেই সাথে নিরাপত্তা নিশ্চিত করণে প্রতিটি প্রবেশ পথেই নিরাপত্তাকর্মী ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি উদ্যোগ নেয়া হয়েছে প্রতিটি প্রবেশ পথে সিসি টিভি ক্যামরা স্থাপনের। মিল এলাকায় বহিরাগত লোক সমাগম কমেছে বহুগুনে। ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে বোমা আতঙ্ক। দেশের সবচেয়ে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠান কেরুজ চিনিকল। এ মিলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন বরাবরই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপ নিয়ে থাকে। তবে এবারের কর্মকান্ড স্মরণকালের সকল রেকর্ড ভেঙেছে। এবারের নির্বাচনের শুরু থেকেই জটিলতার সৃষ্টি হয়। একটা জটিলতা কাটিয়ে তোলার আগেই আরেকটি সৃষ্টি হয়েছে। ফলে নির্ধারিত দিনে ভোট হয়নি তাই শুধু নয়, বরং এবারের নির্বাচন সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও অনুকূলে মনে করে ভোটের দাবিতে ছুটছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দরা। গত সপ্তাহের শেষের দিকে ৩২ জন শ্রমিক নেতা স্বাক্ষরিত লিখিত পত্র মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসানের কাছেও জমা দেয়া হয়েছে। ভোটের দাবিতে আবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যে কোনো ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনার জন্য দায়ভার তারা বহন করবে। তাই পুনরায় ভোটের ব্যবস্থা ও তফসিল ঘোষণার অনুরোধ করা হয়েছে। এ চিঠির প্রেক্ষিতেই নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান, মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার স্বাক্ষরিত পত্র গতকাল সোমবার প্রেরণ করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, কুষ্টিয়া আঞ্চলিক শ্রম অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও দর্শনা থানার অফিসার ইনচার্জের কাছে। পত্রে ৩২ জন প্রার্থীর স্বাক্ষরিত পত্রের প্রায় পুরো বক্তব্য উল্লেখ করে লিখেছেন বর্তমান অবস্থায় নির্বাচন পরিচালনা কমিটির পক্ষে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণাপূর্বক নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হবে কী-না? এবং নির্বাচন চলাকালীনসহ আগে ও পরে সার্বিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা করতে পারবেন কী-না তা জানানোর অনুরোধ করা হয়েছে। সেই সাথে সার্বিক অবস্থা অনুকূলে থাকলে নির্বাচন কমিশন আপনাদের নির্দেশনায় ও সহযোগিতায় নির্বাচন সু-সম্পন্ন করতে পারবে বলেও আশা করেছেন আব্দুছ ছাত্তার। তবে পত্রের জবাব কবে নাগাদ পাওয়া যাবে তার সুস্পস্ট জানা যায়নি। কেরুজ এলাকায় পৃথক তিনটি স্থানে ৬টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রশ্ন ওঠে শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ভোটকে কেন্দ্র করে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। যা খতিয়ে দেখছে পুলিশের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা।
এদিকে কেরুজ এলাকার আতঙ্ক অনেকটাই কেটেছে দর্শনা ঈশ্বরচন্দ্রপুর ও আকন্দবাড়িয়ায় একই দিন ৭টি শক্তিশালী বোমা উদ্ধারের ঘটনায়। কেরুজ ভোট কেন্দ্রীক বোমার ঘটনা থেকেও সরে এসেছে সকলে। যে কারণে ফের ভোটমুখী হতে শুরু করেছে কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ভোটাররা। পাশাপাশি পরিবেশ স্বাভাবিক মনে করেও ভোটের দাবিতে ছুটতে শুরু করেছেন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ। স্মরণকালে রেকর্ড ভাঙা এবারের কেরুজ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ইতিহাসের কলঙ্কিত স্বাক্ষী হয়ে থাকবে বলেও মন্তব্য করেছে সাধারণ শ্রমিক-কর্মচারী ভোটাররা। সকল বাধা-বিপত্তিকে মোকাবিলা করে এবারের নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারলে যেমনি বাহবা পাবেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রাব্বিক হাসান, তেমনি সাহসিকতার পরিচয়ের কারণে স্মরনীয় হয়ে থাকবে এবারের নির্বাচন পরিচালনা পর্ষদ। এবারের নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৮ ডিসেম্বর কমিটির শেষ নির্বাহী পরিষদের বৈঠকের সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয়েছে সাধারণসভা। সাধারণসভা থেকে ঘোষণা দেয়া হয়েছিলো ১৬ ফেব্রুয়ারি ভোট গ্রহণের। নানা জটিলতার কারণে ৭ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন সাময়িক স্থগিত করার লিখিত আবেদন করা হয় সকল প্রার্থীর স্বাক্ষরে। পরিবেশ স্বাভাবিক মনে করে গত সপ্তাহের শেষের দিকে ফের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার দাবিতে প্রার্থীরা লিখিত আবেদন করেন। কেরুজ শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়ন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন, মিলের মহাব্যবস্থাপক (অর্থ) আব্দুছ ছাত্তার, সদস্য সচিব, চিনিকলের প্রকৌশলী (পরিবহন) আবু সাঈদ, সদস্য উপ-ব্যবস্থাপক (পার্সোনাল) আল-আমিন, উপ-ব্যবস্থাপক (হিসাব) শেখ জাবেদ হাসান ও সহকারী ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) ডিস্টিলারি, জহির উদ্দিন। তবে এবারের ভোটে একের পর এক অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার ফলে সুধীমহল সহ মিলের শ্রমিক-কর্মচারীদের অনেকেই মন্তব্য করে বলেছেন, কেরুজ এলাকা থেকে প্রত্যেকটি শ্রমিক সংগঠন অপসারণ করা প্রয়োজন। তাতে যেমনই বহিরাগতদের আনাগোনা বন্ধ হবে, তেমনি অনেক পরিমাণ জায়গা হবে দখল মুক্ত। নিরাপত্তা ব্যবস্থা যেমন নিশ্চিত হবে, সেই সাথে শান্ত পরিবেশ গড়ে উঠবে। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের কাছে দাবিও তুলেছে এলাকাবাসী। এদিকে এবারের নির্বাচনে প্রথম থেকে ২ সভাপতি ও ৪ সাধারণ সম্পাদক প্রার্থীর প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা শোনা গেলেও বদলিজনিত কারণে কমেছে ১ জন। ফলে সাবেক ৯ বারের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান মাসুদের একমাত্র ছেলে সৌমিক হাসান রূপমের প্রতিদ্বন্দ্বিতা অনেকাংশে অনিশ্চিত। যে কারণে রূপম ছাড়াই যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন সাবেক সভাপতি ফিরোজ আহমেদ সবুজ ও তৈয়ব আলী, সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান হাফিজ, মনিরুল ইসলাম প্রিন্স ও জয়নাল আবেদীন নফর। এছাড়া ২৫ সদস্যের এ কমিটিতে সহ-সভাপতি, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক, কোষাধ্যক্ষ, প্রচার, দপ্তর সম্পাদকসহ সাধারণ সদস্য প্রার্থীর সংখ্যা শতাধিক হতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More