কালীগঞ্জ প্রতিনিধি: মা-মেয়ের একই বাড়িতে বসবাস, এক পরিবারেই চলে সকল কাজ। কিন্তু ভিন্নতা শুধু ভোটের মাঠে। মা-মেয়ের একই পদের ভোটযুদ্ধে এমন চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের নিয়ামতপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে। এখানে মায়ের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়েছেন মেয়ে। ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতায় তারা দুজনেই জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী। মা ও মেয়ের বাড়ি ওই ইউনিয়নের চাপরাইল গ্রামে। তাদের মধ্যে মা হুরজান বেগম বর্তমান ওই ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য রয়েছেন। পদটিতে আগামী ২৪ নভেম্বরের নির্বাচনেও তিনি প্রার্থী হয়েছেন। আবার মেয়ে আজিজার খাতুনও মায়ের প্রতিপক্ষ প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। মা-মেয়ে একই পদের প্রার্থী হলেও কেউ কারও ছাড় দিতে নারাজ। ফলে ওই ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের ভোটযুদ্ধে বাড়তি মাত্রা যোগ হয়েছে।
জানা গেছে, গত ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্যপদে মাকে জয়ী করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন মেয়ে। ফলাফলও এসেছিলো নিজেদের পক্ষে। তবে এবার একই পদে নির্বাচনে মায়ের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন মেয়েও। এই ঘটনা ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের ৪ নম্বর নিয়ামতপুর ইউপি নির্বাচনে। ইউনিয়নের ৭, ৮ ও ৯ নম্বর মিলে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে সদস্যপদে মা হুরজান বেগম (৬০) আর মেয়ে আজিজা বেগম (৩৮) মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। মা-মেয়ের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। মা-মেয়ে একই পদের প্রার্থী হলেও কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ। মেয়ের দাবি, মা তাকে এবারের নির্বাচনে প্রার্থী করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। প্রতিশ্রুতি না রাখায় তিনি প্রার্থী হয়েছেন। মা বলছেন, অন্যের প্ররোচনায় তার বিরুদ্ধে প্রার্থী হচ্ছেন মেয়ে।
নির্বাচন নিয়ে মেয়ে আজিজার বেগম ইতি বলেন, গত নির্বাচনের পর মাকে বলেছিলাম পরবর্তীতে (এবার) আমি প্রার্থী হবো। তখন মা বলেছিলো সময় এলে দেখা যাবে। কিন্তু ২৭ অক্টোবর মনোনয়নপত্র জমা দিতে গেলে আমার মা মাস্তান ভাড়া করে বাধা দেয়। পরে পুলিশের সহযোগিতায় মনোনয়নপত্র জমা দিই। আমি এবার নির্বাচন করবোই।’ তিনি আরো বলেন, ‘আমার মা’র ভোটের মাঠে অবস্থান ভালো নেই। তবুও তিনি নির্বাচন করছে।’
এ বিষয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী মা হুরজান বেগম বলেন, ‘আমি বর্তমানে ইউনিয়নের সংরক্ষিত মহিলা সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। রাতদিন সাধারণ মানুষের কল্যাণে কাজ করেছি। আমার ওয়ার্ডের ভোটাররা আমাকে সমর্থন দিয়েছে তাই আবারও ভোটে নেমেছি। তিনি আরও বলেন, আজ থেকে ২৭ বছর আগে আমি স্বামী পরিত্যাক্তা হয়েছি। বহু কষ্টে ছেলে ও মেয়েকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। এখন মেয়েই বিপক্ষে প্রার্থী হয়েছে। আত্মীয়-স্বজনরা বহুবার বুঝালেও মেয়ে কারও কথা শুনছে না। সেও ভোট ভিক্ষায় নেমে গেছে। আমি মেয়েকে সাফ জানিয়েছি, আমি ভোটের জন্য প্রস্তুত। সে কারণেই আমি গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছি।’ হুরজান বলেন, একটি মহল ইউনিয়নে তার ভাবমূর্তি নষ্ট করতে মেয়েকে ইন্ধন দিয়ে প্রার্থী করেছেন, যা মেয়ের বোঝা উচিত।
হুরজান বেগমের ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, একদিকে মা অন্যদিকে বোন একই পদের জন্য মনোনয়ন জমা দিয়েছেন। এটা নিজের কাছেই খারাপ লাগছে। আমরা প্রথম থেকে দুজনকে নিয়ে বসেছি সমাধানের জন্য। কিন্তু কোনো ফল আসেনি। তারা যার যার সিদ্ধান্তে অটল। আমি মনে করি ভোট করার অধিকার সব নাগরিকদের আছে। জোর করে বসিয়ে দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তারপরও তাদের মিমাংসার জন্য শেষ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
কালীগঞ্জ উপজেলায় ১১টি ইউনিয়ন রয়েছে। এখানে তৃতীয় ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২ নভেম্বর মনোনয়ন জমা দেয়ার শেষ তারিখ আর প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১১ নভেম্বর। ভোটগ্রহণ করা হবে ২৮ নভেম্বর।