মেহেরপুর অফিস: মেহেরপুর জেলায় হিমসাগর আমের খ্যাতি রয়েছে দেশসহ ইউরোপের বাজারে। বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আম্রপালিসহ বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদন হয়ে থাকে এ জেলায়। আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারে বেড়েছে আমের ফলনও। ফলে প্রতি বছরই বাড়ছে আমের বাগান। গেলো কয়েক বছর জেলার হিমসাগর আম দেশ ছাড়িয়ে ইউরোপের বাজারে রফতানি হয়েছে। তবে করোনা ভাইরাসের কারণে গেলো কয়েকদিনে বেড়েছে কীটনাশকসহ কৃষি উপকরণের দাম। রয়েছে শ্রমিক সঙ্কট। পাশাপাশি বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ী ও বাগান মালিকরা। আর কৃষি বিভাগ বলছে, ক্ষতিগ্রস্ত আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীদের তালিকা তৈরি করা হবে। গাছে থোকায় থোকায় আম দেখে হাসি ফুটেছিলো মেহেরপুর শহরের আমচাষি সাইদুর রহমান শাহিনের মুখে। তিনি এ বছর ৬০ বিঘা জমিতে বোম্বাই, হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ ও আম্রপালিসহ বিভিন্নজাতের আম চাষ করেছেন। করোনা ভাইরাস আতঙ্কের মধ্যেও বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত তিনি। তবে চিন্তার ভাজ পড়েছে তার কপালে। কাক্সিক্ষত ফলন হলেও করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে তার হাসি। প্রতি বছর তিনি ঢাকাসহ সারাদেশে আম বিক্রি করে থাকেন। এ বছর তিনি সারাদেশে আম বিক্রি করতে পারবেন কিনা সেই কোনো নিশ্চয়তা নেই। তিনি বলেন, আম সংগ্রহ পর্যন্ত করোনা ভাইরাসের এ অবস্থা চলতে থাকলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে। উপযুক্ত দামে বাজারজাত না করতে পারলে অনেক ক্ষতি হবে। এ বিপুল পরিমাণ আম স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা সম্ভব নয়। তাই এ বছর আম পরিচর্যা করে বিরাট অনিশ্চয়তার মধ্যে রযেছেন তিনি। বছরের শুরুতে আম পরিচর্যা করে তিনি প্রচুর টাকা খরচ করেছেন। তাই এখনও পরিচর্যা অব্যাহত রেখেছেন। করোনাভাইরাসের এ মুহূর্তে আম পরিপক্ক হয়েছে। এ সময়ে আম পরিচর্যা করলেও ক্ষতি না করলেও ক্ষতি। কারণ তিনি অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন করোনার প্রাদুর্ভাব না কমলে সঠিক সময়ে আম বাজারজাত করতে পারবেন কি না? সঠিক সময়ে আম বাজারজাত করতে না পারলে প্রায় ২৫ লাখ টাকা লোকসানের মুখে পড়তে হবে। তার মতো মেহেরপুরের শতশত আম বাগান মালিক ও ব্যবসায়ী সঠিক সময়ে আম বাজারজাত করতে পারবেন কিনা সংশয়ে রয়েছেন।
এদিকে যাদবপুর গ্রামের আরেক ব্যবসায়ী সামাদুল ইসলাম আম নিয়ে চিন্তায় রয়েছেন। প্রতিবছর গাছে গুটি আসার পরই ব্যবসায়ীদের কাছে বাগান বিক্রি করে দেন তিনি। করোনাভাইরাসের কারণে এ বছর বাইরের কোনো ব্যবসায়ী জেলায় না আসায় তিনি বাগান বিক্রি করতে পারেননি। সঠিক সময়ে আম বাজারজাত করতে না পারলে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়বেন বলে জানালেন। আমঝুপি গ্রামের আরেক আম বাগান মালিক সাখাওয়াত হোসেন এ বছর সাত বিঘা জমিতে আমের পরিচর্যা করেছেন। কয়েকবার বৃষ্টির কারণে আমের পরিচর্যায় অনেক বেগ পেতে হয়েছে। বাগান পরিচর্যায় হিমশিম খেতে হয়েছে। এখন তার বাগানে থোকায় থোকায় আম রয়েছে। করোনার কারণে সঠিক সময়ে বাজারজাত করতে না পারলে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বেন তিনিও। মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কামরুল হক মিয়া জানান, বাগান মালিক ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে তার তালিকা তৈরি করা হবে। এ বছর মেহেরপুর জেলায় ২ হাজার ৩৩৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করা হয়েছে। যা থেকে ২৫ হাজার ছয়শত ৮৫ মেট্রিকটন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
পূর্ববর্তী পোস্ট
জীবননগরে ধান ক্রয়ে কৃষক নির্বাচন লটারি করলেন এমপি আলী আজগার টগর
পরবর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ