মহাসিন আলী: ভাল ফলন ও দাম পাওয়ায় মেহেরপুরে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে মাল্টা চাষ। রোগবালাই কম ও ঝুঁকিমুক্ত এই ফলের বাজার দরও ভালো। এতে জেলার শিক্ষিত বেকার যুবকেরাও ঝুঁকছেন মাল্টা চাষে। কৃষি বিষেজ্ঞরা বলছেন, দেশের চাহিদা মিটিয়ে এই মাল্টা ভবিষ্যতে বিদেশেও রফতানি করাও সম্ভব হবে।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য মতে, এ জেলায় বর্তমানে প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হয়েছে। মাল্টার চাষ এখন ছড়িয়ে পড়েছে মেহেরপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। চারা বা কলম রোপনের মাধ্যমে মে হতে আগস্ট মাস পর্যন্ত রোপণ করা হয় মাল্টার চারা। এছাড়া সেচের ব্যাবস্থা থাকলে সারাবছর রোপণ করা যায় মাল্টা। বারি মাল্টা-১ জাতের এই মাল্টা চাষ হচ্ছে মেহেরপুরে।
মেহেরপুর মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের ইসমাইল হোসেন বলেন, ৭-৮ বছর আগে আমি মাত্র ১৩ কাঠা জমিতে মাল্টাা চারা রোপণ করি। পরের বছরে মাল্টার ফলন আসে। পাহাড়ি ফল সমতলে উৎপন্ন হওয়ায় এলাকায় সাজসাজ রব পড়ে যায়। চ্যানেল আই’র সাঈখ সিরাজ আসেন বাগান পরিদর্শনে। সাড়া পড়ে যায় দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে। এরপর দিনদিন বাড়ছে এ জেলায় মাল্টা চাষ। পরে আমি সাড়ে ৩ বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করেছি। তিনি মনে করেন মাল্টার চাষ বৃদ্ধিতে জেলাবাসীর পুষ্টির ঘাটতি অনেকাংশে পূরণ হচ্ছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার গোভীপুর গ্রামের মোমিনুল ইসলাম বেশ কয়েক বছর বিদেশে থাকার পরে দেশে ফিরে শখের বসে শুরু করেন মাল্টার চাষ। তিনি জানান, মাত্র দেড় বছর বয়স হতে তার মাল্টা গাছে ফল আসতে শুরু করে। এরপর থেকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। মাল্টা চাষ করে সফলতা পেয়েছেন তিনি। অধিক লাভবান হওয়ায় তার মতো জেলার অনেক বেকার যুবক আগ্রহী হয়ে উঠছে মাল্টা চাষে। প্রতি বিঘা মাল্টা চাষে খরচ হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার টাকা। যা বাজারে বিক্রি করে আয় হচ্ছে দ্বিগুন। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য ফসলের তুলনায় মাল্টা চাষে অনেক লাভ পাওয়া যায়। রোগ-বালাই কম হওয়ায় অল্প পরিশ্রমেই মেলে ভালো ফলন। বাজারে প্রতি কেজি মাল্টা বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
গোভীপুর গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক জানান, তিনি বাড়ির পাশে ৮ কাঠা জমিতে মাল্টার চাষ করেছেন। খুব ভাল ফলন পেয়েছেন। তাই এ বছর আড়াই বিঘা জমিতে মাল্টার চাষ করছেন। তারই ভাই আব্দুল কাদেন বলেন, তিনি এ বছর ১৯ বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ করেছেন।
মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের সফিউদ্দিন জানান, ২ বছর আগে এক একর জমিতে মাল্টা চাষ করেছি। এ বছর মাল্টা ধরেছে গাছে গাছে। গত ২ বছর ফল না পেলেও একই জমিতে সাথী ফসল হিসেবে বাঁধা কপি, বেগুন ও ঢেঁড়স আবাদ করে লাভবান হয়েছি।
মাল্টার বাগান করতে আগ্রহী একই গ্রামের মাহাফুজ হোসেন জানান, বেশ কিছুদিন ধরে আমরা মাল্টার বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মাল্টার বাগানের খোঁজ খবর নিচ্ছি। মাল্টার আবাদ লাভজনক কি না? বাগান ঘুরে দেখেছি মাল্টা লাভজনক ব্যবসা। এ বছর মাল্টার চারার ও কলমের অর্ডার দিয়েছি। সামনের বছর আমরা মাল্টা চাষ করবো।
রাজশাহী আঞ্চলিক মসলা গবেষনা কেন্দ্রের উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোঃ মনিরুজ্জামান বলেন, চাহিদা অনুযায়ী মাল্টার নতুন নতুন জাতের উদ্ভাবনের প্রক্রিয়া চলছে। সর্বোপরি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও এ ফল রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।
মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন, মাল্টা চাষ বৃদ্ধি করতে কৃষি বিভাগ চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। এ ছাড়া অনেক বেকার শিক্ষিত যুবক মাল্টা চাষে এগিয়ে আসছে। তাদেরকেও মাল্টা চাষ সম্পর্কে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।