বৃষ্টিসহ আবারও শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস
চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত
স্টাফ রিপোর্টার: দেশে কুয়াশা কিছুটা কমেছে, বেড়েছে সূর্যের আলোর প্রাপ্যতাও। ফলে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে দিনের বেলা শীতের অনুভূতি অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে নেমে এসেছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ মঙ্গলবার পর্যন্ত তাপমাত্রার কিছুটা ঊর্ধ্বগতি থাকতে পারে। এ সময় মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত কুয়াশা থাকলেও সূর্যের দেখা মিলবে। মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের উত্তরাঞ্চলে হালকা বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। বৃষ্টির পরপরই আবার তাপমাত্রা কমার প্রবণতা শুরু হতে পারে। আগামী বৃহস্পতিবার বা এরপর আবার টানা কিছুদিন তাপমাত্রা কমতে পারে। তখন মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসতে পারে। তবে তীব্র বা অতিতীব্র শৈত্যপ্রবাহ হবে কি হবে না তা শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর প্রবণতা দেখে বলা যাবে। গতকাল সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো যশোরে ১১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১৩ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৬ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে সীতাকু-ে ৩২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল রাতে বলেন, ‘মঙ্গলবার ও বুধবার দেশের উত্তরে হালকা বৃষ্টি হতে পারে। বৃহস্পতিবার বা এরপর আবার টানা কিছুদিন তাপমাত্রা কমতে পারে। তখন মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহও বয়ে যেতে পারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। রংপুর, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৮ থেকে ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে নেমে আসতে পারে। তবে তীব্র বা অতিতীব্র শৈত্যপ্রবাহ হবে কি হবে না তা শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ার পর প্রবণতা দেখে বলা যাবে।’
প্রসঙ্গত, আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের কিছু অঞ্চলজুড়ে তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা এর নিচে নামলে এবং তা দু-তিন দিন অব্যাহত থাকলে তখন তাকে শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৮ থেকে ১০ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মৃদু, ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৪ থেকে ৬ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। তাপমাত্রা ৪ ডিগ্রির নিচে নামলে তখন সেই পরিস্থিতিকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। মঙ্গলবার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা বা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হতে পারে। বুধবারও দেশের উত্তরাঞ্চলে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস। কিছুদিন মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে। ঘন কুয়াশায় বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে বলে সতর্ক করেছে আবহাওয়া অফিস।
চুয়াডাঙ্গার কনকনে শীতে আবারও গভীর রাতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর শীতবস্ত্র বিতরণে বেরিয়েছেন। ভাসমান শীতার্ত মানুষের মাঝে নিজ হাতে তুলে দিচ্ছেন কম্বল। খুশি হয়ে প্রকৃত শীতার্তরা করছেন দোয়া। কেউ কেউ আবার আবেগে আপ্লুত হয়ে তুলছেন দু’হাত। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বলছেন, প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে প্রাপ্ত উপহার পৌছে দিচ্ছি প্রকৃত ভুক্তভোগীদের মাঝে। শীত নিবারণে এভাবেই প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে দেয়া শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাইফুল্লাহ ও চুয়াডাঙ্গা কালেক্টরেটের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর সাইফুল ইসলাম সাঈফ।
জানা গেছে, চুয়াডাঙ্গায় এ বছর ৩০ লাখ টাকা ও ১০ হাজার পিস কম্বল বরাদ্দ এসছে। সরকারিভাবে বরাদ্দ পাওয়া এসব শীতবস্ত্র ও অর্থ উপজেলা এবং পৌরসভার মাধ্যমে বিতরণ কার্যক্রম চলছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক জহিরুল ইসলামের নির্দেশে প্রতিদিন রাতে প্রকৃত শীর্তাতদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করতে বের হচ্ছেন সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার এম সাইফুল্লাহ। গতকাল সোমবার রাত ৯টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার সরোজগঞ্জ, ডিঙ্গেদহ, ঝিনাইদহ বাস টার্মিনাল এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে কম্বল বিতরণ করা হয়।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, আলমডাঙ্গা কলেজপাড়া কল্যাণ কমিটির উদ্যোগে অসহায় শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল সোমবার বিকেলে কলেজপাড়ায় এ শীতবস্ত্র বিতরণের আয়োজন করা হয়। শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে কলেজপাড়া কল্যাণ কমিটির সভাপতি বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সাবেক এজিএম মতিয়ার রহমানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সাজ্জাদ হোসেন, কলেজপাড়া কল্যাণ কমিটির সাধারণ সম্পাদক হাজি মীর শফিকুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সহকারী অধ্যাপক (অব.) রোকনুজ্জামান ডাবলু, উপদেষ্টা আবুল, হাবিবুল করিম চঞ্চল, সাবেক ব্যাংকার মুহাম্মদ খালেকুজ্জামান প্রমুখ। কলেজপাড়া কল্যাণ কমিটির উপদেষ্টা আব্দুর রশীদ মঞ্জুর উপস্থাপনায় উপস্থিত ছিলেন কমিটির প্রচার সম্পাদক মাহামুদুর রশিদ জুয়েল, সাংগঠনিক সম্পাদক এম শোয়েবুজ্জামান সোহেল, রমজান, ফাহমিদুর রহমান মুন, ফারুক হোসেন, রুমন, হাসেম রেজা, জনি, মুনু, মেসি, রাসেল, কামরুজ্জামান কাজল, শিক্ষক রাজু, ব্যাংকার নাজমুল, জয়নাল, যুগোল প্রমুখ। শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে কুরআন তেলাওয়াত করেন কলেজপাড়া জামে মসজিদের ইমাম মাহাদী ইসলাম। এ সময় শতাধিক অসহায় শীতার্থদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।
এদিকে, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের আগমন উপলক্ষে আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাস ইউনিয়নে প্রস্তুতি সভা ও শীতবস্ত্র প্রদান অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ১৭ জানুয়ারি সকালে চুয়াডাঙ্গা টাউনহল মাঠে সমাবেশ করবেন। ৬ জানুয়ারি সোমবার বিকেলে আইলহাস ইউনিয়ন শাখার আয়োজনে প্রস্তুতি সভা ও শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। প্রস্তুতি সভা শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে আইলহাস ইউনিয়ন জামায়াতের সেক্রেটারি লিয়াকত আলীর সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা জামায়াতের আমীর আলমডাঙ্গা মহিলা ডিগ্রি কলেজের ইংরেজি প্রভাষক শফিউল আলম বকুল। বিশেষ অতিথি ছিলেন উপজেলা সেক্রেটারি মুহাম্মদ মামুন রেজা, উপজেলা দাওয়াহ বিভাগের সভাপতি মাওলানা জামিরুল ইসলাম, নওলামারি আলিম মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা আব্দুল লতিফ। এছাড়াও প্রস্তুতি সভায় বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। প্রস্তুতি সভা শেষে ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ডের অসহায় দরিদ্রদের মাঝে শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
অপরদিকে, আলমডাঙ্গায় কৃষক দলের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। সভাপতিত্ব করেন আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষক দলের আহ্বায়ক জামাল সাদিক পিন্টু। প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক মোকারম হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সদস্য সচিব বাড়াদী ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ তবারক হোসেন, যুগ্ম-আহ্বায়ক আরিফ হোসেন জোয়ারদার, আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব ডাক্তার ইদ্রিস আলী, মামুন মিয়া, কাউন্সিলর নাসির উদ্দিন, আব্দুর রাজ্জাক, ফারুক হোসেন ও প্রিন্সসহ উপজেলা, পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নের কৃষক দলের সুপার ফাইভগণ, ১৫টি ইউনিয়ন ও আলমডাঙ্গা পৌরসভায় শীত বস্ত্র বিতরণ করা হয়।
কার্পাসডাঙ্গা প্রতিনিধি জানিয়েছেন, দামুড়হুদা উপজেলার কার্পাসডাঙ্গা মিশনে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের মাঝে কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬ টার সময় কার্পাসডাঙ্গা মিশনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর উদ্যোগে শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। এ সময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় মজলিশে শুরা সদস্য ও জেলা জামায়াত ইসলামীর আমির মো. রুহুল আমিন। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা জামায়াত ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. মো. আসাদুজ্জামান, উপজেলা জামায়াত ইসলামীর আমীর মো. নায়েব আলী, উপজেলা নায়েবে আমীর মাও. আব্দুল গফুর, উপজেলা জামায়াত ইসলামীর সাধারণ সম্পাদক আবেদুদোল্লাহ টিটন, উপজেলা যুব বিভাগের সভাপতি হাফেজ মাও. আব্দুল খালেক, কার্পাসডাঙ্গা ইউনিয়ন জামায়াত ইসলামীর আমির মাও. আবু হানিফ, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, জামায়াত ইসলামী নেতা ক্বারি আবু সুফিয়ান, আলমগীর হোসেন মেম্বার, ইউনুচ আলী, উপজেলা ছাত্র শিবিরের সভাপতি আল ফাহাদ হোসেন সবুজ, ইউনিয়ন ওলামা বিভাগের সভাপতি হাফেজ মাও. আবু বক্কর, যুব বিভাগের সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক, ইউনিয়ন ছাত্র শিবিরের সভাপতি মো. নাহিদ, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল রানাসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতৃবৃন্দ।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.