চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে চলছে ১৪ দিনের কঠোর বিধি নিষেধ
স্টাফ রিপোর্টার: কঠোর লকডাউনের ষষ্ঠ দিনে সড়কে যানবাহন ও মানুষের চলাচল আগের দিনগুলোর চেয়ে বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আগের দিনের চেয়ে বেশি তৎপর দেখা গেলেও দোকানি, ক্রেতা, পথচারী অনেকেরই মাস্ক মুখে থাকছে না। বিভিন্ন রাস্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম দেখা গেছে। নানা ছুতোয় বের হওয়া মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে তল্লাশি চৌকিতে, মাস্ক না পরায় করা হচ্ছে জরিমানা। বের হওয়ার যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারায় এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকা, স্বাস্থ্যবিধি না মানা, মাস্ক না পরা, সরকারি নির্দেশনা অমান্য করার দায়ে অনেকে জরিমানা গুনেছেন। আবার অনেকে যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে ছাড় পাচ্ছেন। বিধিনিষেধ মানাতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের টহল ও মাইকিং করতে দেখা গেছে। গত পাঁচদিনের চেয়ে গতকাল সড়কগুলোতে বেড়েছে মানুষ ও ব্যক্তিগত গাড়ির চলাচল। আর পাড়া-মহল¬ার অলিগলিতেও মানুষের আনাগোনা বেড়েছে। পাশাপাশি হেঁটে চলাচল করছে অসংখ্য মানুষ। অধিকাংশের মুখেই মাস্ক ছিলো না। আগের দিনের তুলনায় এদিন কাঁচাবাজার, মাছ ও মুদি দোকানে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, অধিকাংশই জরুরি দরকার ছাড়া বের হয়েছেন এবং জানতে চাইলে নানা অজুহাত দিচ্ছেন। তাই তাদের জরিমানা করা হচ্ছে। অনেকেরই মাস্ক থুতনিতে, তাদেরও জরিমানা করা হয়েছে। বড় দোকানপাট বন্ধ থাকলেও অলিগলিতে দোকান খোলা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজর এড়াতে শার্টার অর্ধেক বন্ধ রেখে এসব দোকানে কেনাবেচা চলছে। রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ ভ্যানেও কাপড়, জুতো বিক্রি করতে দেখা গেছে।
চুয়াডাঙ্গা-মেহেরপুরসহ সারাদেশে চলছে ১৪দিনের কঠোর বিধি নিষেধ। চলবে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত। চলমান লকডাউনে সব সরকারি, বেসরকারি অফিস, শিল্প-কারখানা, পোশাকশিল্পসহ সব ধরনের কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। টানা এই ১৪ দিনের লকডাউনে দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে মানুষের চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অপ্রয়োজনে বাইরে বের হলেই করা হচ্ছে জেল জরিমানা। এমতাবস্থায় জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। সকাল থেকেই রাস্তায় নেমে পড়ছে মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে কারণে অকারণে ভীড় জমাচ্ছে বাজারে। যদিও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে চুয়াডাঙ্গা জেলার প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয়েছে চেকপোস্ট। তবুও স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই চলাচল করছে মানুষ। লকডাউন কার্যকর করতে পুলিশ, বিজিবি, আনসার ও সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় জেলার বিভিন্ন স্থানে পৃথক ৯টি ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা। অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য ও বিধিনিষেধ না মেনে বাইরে বের হওয়ায় জেলায় ৭৩টি মামলায় ৯০ জনকে ৪৯ হাজার ৯০০ টাকা জরিমানা করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বুধবার সকাল থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত শহরের বড় বাজার এলাকায় অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ১১টি মামলায় ২ হাজার ৭৭০ টাকা জরিমানা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক হাবিবুর রহমান। পরে দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত শহীদ হাসান চত্বর ও রেল বাজার এলাকায় অভিযান চালায় জেলা প্রশাসনের পৃথক ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই অভিযান পরিচালনা করেন জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জাকির হোসেন। অভিযানে ১৯টি মামলায় ২১ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়।
এদিকে, দামুড়হুদা উপজেলা ও দর্শনা এলাকায় অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওই অভিযান পরিচালনা করেন। এ সময় মোট ১০টি মামলায় ১৯ জনকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করা হয়। মাস্ক না পরায় দর্শনার ২টি ফার্মেসির মালিককে জরিমানা করা হয়। জয়রামপুর ও রঘুনাথপুরে ইলেকট্রনিকস দোকান খোলা রাখায় ২টি দোকান সিলগালা করে বন্ধ করে দেয়া হয়। কাজবিহীন বের হওয়ায় ৫টি মোটরসাইকেল জব্দ করে তাদের পিতা-মাতার হেফাজতে দেয়া হয়েছে। চায়ের দোকানে মাস্ক না পরে আড্ডা দেয়ায় মদনায় ৫ জনকে, জয়রামপুরে ৩ জনকে ও পারকৃষ্ণপুরে ৩ জনকে জরিমানা ও ৪ জনকে ২ ঘণ্টার আটকাদেশ দেয়া হয়। এছাড়া জিরাটে একটি বালুটানা ট্রাক্টর জব্দ করে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
আলমডাঙ্গা ব্যুরো জানিয়েছে, করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সরকার ঘোষিত লকডাউন বাস্তবায়ন করতে আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের শহরের আলিফ উদ্দিন মোড়, মার্কেট এলাকা, হাইরোড, চারতলার মোড়, হাউসপুর আনন্দধাম ব্রিজ, লাল ব্রিজ ও কাঁচাবাজার এলাকায় দিনভর অভিযান চালিয়েছে উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় সরকারি বিধিনিষেধ অমান্য ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় ৬টি মামলায় ৩ হাজার ৬০০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এরমধ্যে ইসলামপুর গ্রামের শরিফুল ইসলামকে ৩০০ টাকা, হাইরোডের মেসার্স আল আমিন ক্রোকারিজের মালিক আজম খাঁনকে ৫০০ টাকা, মেসার্স রুমান অ্যালুমিনিয়াম স্টোরের মালিক পাপ্পুকে ৫০০ টাকা, ঢাকা বইঘরের ম্যানেজার তরিকুল ইসলামকে ৫০০ টাকা, পারকুলা গ্রামের খবিরুল ইসলামের ছেলে বাপ্পিকে ৩০০ টাকা, আনন্দবাসের নুর কামালের ছেলে হুমায়নকে ১ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম নূর ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হুমায়ন কবীর ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে এ জরিমানা করেন। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনাকালে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশ ও সেনাবাহিনীর টিম, আলমডাঙ্গা বণিক সমিতির সভাপতি আরেফিন মিয়া মিলন, সাধারণ সম্পাদক কামাল হোসেন, সহসভাপতি কামরুজ্জামান হিরা, ক্যাশিয়ার আলাউদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
মেহেরপুর অফিস জানিয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে চলমান কঠোর লকডাউনের ৬ষ্ঠ দিনে গতকাল বুধবার সেনাবাহিনীর সদস্যরা জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালিয়েছেন। বুধবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনী যশোর সেনানিবাসের ২৭ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির ১টি দল মেহেরপুর শহরের বিভিন্ন এলাকায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। যশোর সেনানিবাস ২৭ ফিল্ড আর্টিলারির রেজিমেন্টের লেফটেন্যান্ট শাদমান ইকবালের নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর সদস্যরা এ সচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। এ সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলাচল করাসহ বিনা কারণে বাইরে না আসার জন্য আহ্বান জানান।
‘মাস্ক পরার অভ্যেস, করোনামুক্ত বাংলাদেশ’ এ সেøাগানকে সামনে রেখে মেহেরপুর পুলিশের উদ্যোগে সাধারণ মানুষের মধ্যে শতভাগ মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণে সচেতনতামূলক কার্যক্রমসহ জনসাধারণের মাঝে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল বুধবার মেহেরপুর পুলিশের একটি দল মেহেরপুর শহরের হোটেল বাজার মোড় এবং পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জনসচেতনতামূলক প্রচারণা চালান। অযথা ঘরের বাইরে বের না হওয়ার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়। একইসাথে সকলকে মাস্ক ব্যবহার করার জন্য আহ্বান জানানো হয়।
পূর্ববর্তী পোস্ট
এছাড়া, আরও পড়ুনঃ