প্রথম পুরস্কার পেলেন চুয়াডাঙ্গার ছেলে বখতিয়ার ও তাছলিমুল
বিশ্ব পরিবেশ দিবস জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার পুরস্কার বিতরণ
স্টাফ রিপোর্টার: বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা ২০২২’এবং ‘জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলা ২০২২ এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়েছে। গতকাল রোববার সকালে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অংশ নিয়ে উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু অ্যাওয়ার্ড ফর ওয়াইল্ডলাইফ কনজারভেশন ২০২০-২০২১, জাতীয় পরিবেশ পদক ২০২০-২০২১, বৃক্ষরোপণে প্রধানমন্ত্রী জাতীয় পুরস্কার ২০১৯-২০২০ তুলে দেয়া হয় বিজয়ীদের হাতে। বিতরণ করা হয় সামাজিক বনায়নে উপকারভোগীদের মাঝে লভ্যাংশের চেক। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সব বিজয়ীর হাতে সম্মাননা তুলে দেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন। এতে আলাদা ক্যাটাগরিতে প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন চুয়াডাঙ্গার বেলগাছি গ্রামের শিক্ষক বখতিয়ার হামিদ ও জীবননগরের তাছলিমুল হক কলিনস। বন ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কাজে নিয়োজিত কর্মকর্তা, খ্যাতিমান গবেষক, বিজ্ঞানী, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণবাদী ব্যক্তি ও গণমাধ্যম কর্মী/ব্যক্তিত্ব ক্যাটাগরিতে পদক পান বখতিয়ার হামিদ বিপুল। আর প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ‘বৃক্ষ গবেষণা, সংরক্ষণ, উদ্ভাবন’ ২০২০ শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কার গ্রহ করেছেন জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের কৃতিসন্তান তাছলিমুল হক। তিনি বর্তমানে গাজীপুরের সালনাতে বসবাস করেন।
২০০৮ সালে বেলগাছি গ্রামের শিক্ষক বখতিয়ার হামিদ বিপুল ‘পাখির গ্রাম বেলগাছি’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন তৈরি করেন। বখতিয়ার হামিদ বিপুল সংগঠনের সভাপতি। পরে বেলগাছি গ্রামকে পাখির অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়। ওই গ্রামে পাখি শিকার নিষিদ্ধ। তারপর বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে কাজ শুরু করেন তিনি। জেলার বিভিন্ন জায়গায় আটকা পড়া বাঘডাসা, বন বিড়াল, সাপ, পাখিসহ নানা প্রজাতির প্রাণী সংরক্ষণে এগিয়ে আসেন বিপুল। আহত প্রাণীদের উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করে আবারও উন্মুক্ত করে দেন। বন্যপ্রাণীদের আঘাত বা হত্যা করা বন্ধে শুরু করেন জনসচেতনতামূলক প্রচার প্রচারণাও।
এদিকে, প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পুরস্কার ‘বৃক্ষ গবেষণা, সংরক্ষণ, উদ্ভাবন’ ২০২০ শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কার গ্রহণ করেছেন জীবননগর উপজেলার খয়েরহুদা গ্রামের আব্দুস সামাদের ছেলে তাছলিমুল হক কলিনস। তিনি বলেন, সম্প্রতি পরিচালিত এক সমন্বিত গবেষণায় বলা হচ্ছে, গত আড়াইশ’ বছরের পৃথিবী থেকে হারিয়ে গেছে প্রায় ৬০০ প্রজাতির গাছ। আর বিপন্নপ্রায় উদ্ভিতের প্রজাতীর সংখ্যা প্রায় ১০ হাজার। এ সংখ্যা একই সময়ে বিলুপ্ত পাখি, স্তন্যপায়ী প্রাণী ও সরীসৃপের মিলিত সংখ্যার দ্বিগুণ। বিজ্ঞানীরা বলছেন, সাধারণ ধারণার চেয়ে ৫০০ গুণ দ্রুতগতিতে গাছ বিলুপ্তির ঘটনা ঘটছে। কিন্তু বিষয়টি সেভাবে মনোযোগ পাচ্ছে না। একটি শতকে বিলুপ্ত হওয়া পশুপাখির সম্পর্কে হয়তো মানুষ মোটাদাগে একটি ধারণা রাখে। কিন্তু গাছের ক্ষেত্রে তেমনটি ঘটে না। অনেকেই বলতে পারবে না, কোন গাছটি এখন আর দেখা যায় না। এই উপলব্ধিটা থেকেই মূলত আমি প্রয়োজন অনুভব করি, অন্ততঃ একটি হলেও বিপন্নপ্রায় গাছকে রক্ষা করা। গাছ পালার সাথে আমার সখ্য ছোটবেলা থেকে হলেও ২০১৬ সাল হতে আমি নতুন করে উদ্যোগ নিই বিপন্ন প্রায় বৃক্ষ সংরক্ষণ ও উদ্ভাবনের। এই প্রচেষ্টাই অনেক বাধা বিপত্তি এসেছে। যেমন পেশাগত জটিলতা, জায়গা সংকট, বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদের জীবনাচার বুঝে তাকে টিকিয়ে রাখা। সকল বাধা অতিক্রম করে বিপন্নপ্রায় উদ্ভিদ সংগ্রহ করে এবং তা হতে চারা তৌরি করে, তা ছড়িয়ে দিয়েছি বৃক্ষ প্রেমিক মানুষজনের কাছে। যেকোনো কাজেরই স্বীকৃত্বি পাওয়া একটা আনন্দের বিষয়, প্রধানমন্ত্রী কৃর্তক ‘বৃক্ষ গবেষণা, সংরক্ষণ, উদ্ভাবন’ ২০২০ শ্রেণিতে প্রথম পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়ে এ দায়িত্ব আরও বেড়ে গেল বলে আমি বিশ্বাস করি।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী শাহাব উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উপমন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী বক্তৃতা করেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ স্বাগত বক্তৃতা করেন।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমার অনুরোধ থাকবে এক ইঞ্চি জমি যেন আমাদের অনাবাদী না থাকে। আপনারা জানেন যে করোনা ভাইরাস বিশ্ব অর্থনীতির যথেষ্ট ক্ষতি করেছে। এর ওপর আবার এসেছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। এর ফলে আজকে আমাদের যেসব খাদ্য আমদানি করতে হয় সেগুলোর ভাড়া যেমন অত্যাধিক বৃদ্ধি পেয়েছে। অত্যাধিক ভাড়া বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য পাওয়াটাও কষ্টকর হয়ে গেছে।