প্রকৃত মৎসজীবীদের নামে মামলা : পুলিশী হয়রানির অভিযোগ

দামুড়হুদার লক্ষ্মীপুরে জোরপূর্বক দলকা বিল দখল করে মাছ চাষের প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন

স্টাফ রিপোর্টার: মৎসজীবী না হয়েও জোরপূর্বক দলকা বিল দখল করে মাছ চাষ করার অভিযোগ তুলে দামুড়হুদার জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ও নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে দলকা-মরাগাংনী মৎসজীবী সমবায় সমিতির সদস্যরা।

গতকাল শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে লক্ষ্মীপুর গ্রামের দলকা বিলের পার্শ্ববর্তী গয়েশপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় চত্বরে ওই কর্মসূচি পালন করা হয়। প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন দলকা-মরাগাংনী মৎসজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ওমর আলী, সাধারণ সম্পাদক মুক্তার আলী, দামুড়হুদা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহিম, জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান জুড়ানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি আলমঙ্গীর হোসেন, জুড়ানপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলী হোসেন, স্বেচ্ছাসেবকলীগ কর্মী বখতিয়ার উদ্দিনসহ অন্যরা। এছাড়া দলকা-মরাগাংনী মৎসজীবী সমবায় সমিতির সদস্য ও এলাকাবাসী উপস্থিত ছিলেন।

দলকা-মরাগাংনী মৎসজীবী সমবায় সমিতির সভাপতি ওমর আলী অভিযোগ করে বলেন, দলকা মরাগাংনী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমিতির সদস্য সংখ্যা ১৯২ জন। এরা সকলেই প্রকৃত মৎস্যজীবী। মৎস অফিস থেকে সবাইকে মৎসজীবীর কার্ড দেয়া হয়েছে। জলমহালটির ইজারা সংশ্লিষ্ট করে হাইকোর্ট বিভাগে ভাই ভাই মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি রিট পিটিশন ১৩৮৭১/২০১৮ দায়ের করেন। আদালত ২০১৮ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ৩০ দিনের নিষেধাজ্ঞার আদেশ দেন এবং ২০২০ সালের ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত আদেশটি বহাল থাকে। আবার হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন মামলাটি ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর বাতিল করেন। ২০২২ সালের ১ মার্চ হাইকোর্ট বিভাগ রিট পিটিশন গ্রহণ করেন এবং মামলাটি সচল রাখার নির্দেশ প্রদান করেন।

তিনি দাবি করে বলেন, ২০১৮ সালে হাইকোর্টে মামলা হওয়ার পর আমরা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে মাসে মাসে রাজস্ব দেয়ার শর্তে বন্দোবস্ত নিয়ে বিলটি চাষ করছিলাম। চাষ করতে করতে আমাদের সাড়ে ৮ লাখ টাকার ঋণ হয়ে যায়। পরে আমরা তা পরিশোধ করি। কিন্তু আমাদের নামে ৫০ হাজার টাকার মামলা দেয়া হয়। আমরা জেলহাজত থেকে বের হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে গিয়ে জানতে পারি আমাদের কোনো ঋণ নেই। রাজস্বের সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করা আছে বলে জানান জেলা প্রশাসক। পরে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের কাছ থেকে রাজস্ব দেয়া ওই ৫০ হাজার টাকার রশিদ নিয়ে আদালতে জমা দিলে মামলাটি খারিজ হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ও নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক কোনো মৎসজীবী নন। সম্পূর্ণ ক্ষমতার দাপটে নাটুদহ ভূমি অফিসের কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের যোগসাজসে জোরপূর্বক দলকা বিল দখল করে মাছ চাষ করে আসছেন। প্রতিবাদ করলে মৎসজীবীদের নামে মামলা ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি করেন তারা। এক পর্যায়ে হেমায়েতপুর প্রগতি মৎসজীবী সমবায় সমিতির পক্ষে জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ও নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক শতকরা ৩০ টাকা দেয়ার শর্তে আমাদের সাথে চুক্তি করেন। কিন্তু সেই টাকা তারা আজও আমাদের দেননি।

দলকা মরাগাংনী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মুক্তার আলী বলেন, ৮২৮ বিঘা দলকা বিল অবৈধভাবে জোরপূর্বক দখল করে মাছ চাষ করছেন জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন ও নতিপোতা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আজিজুল হক। আমাদের চুক্তির টাকা না দিলে দলকা বিলে কাউকে মাছ ধরতে দেয়া হবে না। প্রকৃত মৎসজীবীদের মাছ চাষ করতে না দিলে রক্তে লাল হবে দলকা বিল। প্রয়োজনে বৃহত্তর কর্মসূচি দেয়া হবে।

মৎসজীবীদের কর্মসূচির সাথে একাত্মতা ঘোষণা করে জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আলমঙ্গীর হোসেন বলেন, সোহরাব চেয়ারম্যান এলাকায় যা ইচ্ছা তাই করে যাচ্ছেন। দলকা বিল নিয়ে এর আগে অনেক হত্যাকা- হয়েছে। আবারও সেই পরিস্থিতি তৈরি করছেন তিনি। দলকা বিল আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। প্রকৃত মৎসজীবীদের বিল চাষ করতে না দিয়ে ক্ষমতার দাপটে জোরপূর্বক বিল দখল করেছেন সোহরাব চেয়ারম্যান ও আজিজুল হক। মামলা ও পুলিশ দিয়ে হয়রানি বন্ধ করে প্রকৃত মৎসজীবীদের মাছ চাষ করতে দেয়ার দাবি জানান তিনি।

পরে মানববন্ধন করেন দলকা-মরাগাংনী মৎসজীবী সমবায় সমিতির সদস্য ও এলাকাবাসী।

উল্লেখ্য, গত ২০২০ সালের ২৩ নভেম্বর তৎকালীন জেলা প্রশাসকের সাথে হেমায়েতপুর প্রগতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি কামাল খান ১৪২৫-১৪৩০ বাংলা সালের জন্য বার্ষিক ১ম চার বছর ৯ লাখ টাকা করে এবং পরবর্তী ২ বছর শতকরা ২৫ ভাগ বৃদ্ধি করে ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা করে চুক্তিবদ্ধ হন। তবে, গত ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর দলকা বিল ইজারাপ্রাপ্ত হেমায়েতপুর প্রগতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটিডের সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯ লঙ্ঘন করে জুড়ানপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেনের কাছে ২০ লাখ টাকার বিনিময়ে ২৭৬ দশমিক ৪৮ একর জমির জলমহাল সাবলিজ প্রদান করে ৩০০ টাকার নন জুডিসিয়াল স্ট্যম্পে একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। সরকারি জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতি-২০০৯ এর অনুচ্ছেদ ৯ বলা হয়েছে, ইজারাকৃত জলমহালগুলো কোনক্রমেই সাবলিজ দেয়া যাবে না, যদি সাবলিজ দেয়া হয় তাহলে উক্ত জলমহালের ইজারা জেলা প্রশাসক/উপজেলা নির্বাহী অফিসার বাতিল করবেন এবং জামানতসহ জমাকৃত ইজরামূল্য সরকারে অনুকূলে বাজেয়াপ্ত হবে। ওই ইজারা গ্রহীতা পরবর্তী তিনবছর কোন জলমহালের ইজারার জন্য বা উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য আবেদন করতে পারবেন না। অপরদিকে, জেলা প্রশাসকের সাথে চুক্তিপত্রের ৯নং শর্তে লিজগ্রহীতা এই জলমহাল অন্য কাহাকেও সাব-লীজ প্রদান করিতে পারিবেন না। সাব-লীজ প্রদান করা হইলে লীজ তৎক্ষণাৎ বাতিল বলিয়া গণ্য হইবে। পরে লক্ষ্মীপুর দলকা মরাগাংনী মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেডের সাধারণ সম্পাদক মুক্তার আলী উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় বিল দলকা ইজারাপ্রাপ্ত সমিতি হেমায়েতপুর প্রগতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতি লিমিটেড সাবলিজ প্রদান করায় জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালার-২০০৯ এর ৯নং অনুচ্ছেদ এবং জেলা প্রশাসকের সাথে ‘বিল দলকা (বদ্ধ) জলমহাল লীজ ফরম (চুক্তিপত্রের) ৯নং শর্ত ভঙ্গ করায় গত বছরের ২৬ জুলাই হেমায়েতপুর প্রগতি মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির ইজারা বাতিলের দাবিতে জেলা প্রশাসক বরাবার একটি অভিযোগপত্র জমা দেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More