পারদ কিছুটা নেমে রেকর্ডে যতি; গরমের অস্বস্তি কাটতে এখনও দেরি

চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও বেড়েছে বাতাসের আর্দ্রতা : বৃষ্টি নিয়ে আশার বার্তা

স্টাফ রিপোর্টার: চৈত্রের শেষ দিন থেকে তাপমাত্রা চড়তে থাকার রেকর্ড ভাঙ্গার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিলো তা থেমেছে; তবে গরমের অস্বস্তি কমেনি। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সোমবার ঈশ্বরদীতে যা ছিলো দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গতকাল মঙ্গলবার থেকে ঢাকাসহ দেশের পাঁচ বিভাগের আকাশে মেঘের উপস্থিতি বেড়েছে। মৃদুমন্দ বাতাসও বইতে শুরু করেছে। এর প্রভাবে একযোগে দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা ১ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে। অল্প পরিমাণে হলেও সিলেটে চলতি মাসের প্রথম দিকে বৃষ্টি ঝরেছে। এদিন পারদ নেমে এলেও এবং আগের রাতে সিলেটে বৃষ্টি হলেও গরমের অস্বস্তি কমার সম্ভাবনার দেখা নেই আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে। মাথার ওপর সূর্যের খাড়া অবস্থানের কারণে দিনের বড় অংশ আগের কয়েক দিনের মতই তপ্ত ছিলো; গরমের অনুভূতি ছিলো অস্বস্তিকর। দেশের অন্যান্য স্থানেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় কিছুটা হেরফের হলেও উত্তাপ কমেনি। প্রখর তাপে ঘরে বাইরে মানুষের ভোগান্তি ছিলো আগের কয়েক দিনের মতই। তবে এদিনও বৃষ্টি নিয়ে আশার বার্তা থাকছে; সন্ধ্যার পর বৃষ্টি নামতে পারে ঢাকাসহ চার বিভাগে। গতকাল মঙ্গলবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে গতপরশু সোমবার এই জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিলো ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা এ জেলার চলতি মরসুমের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও বেড়েছে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ। যার ফলে গরমের তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। একটানা ১৫ দিন এ জেলার ওপর দিয়ে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও গরম কমছে না সীমান্তবর্তী জেলা চুয়াডাঙ্গায়। তীব্র গরম ও তাপদাহে জনজীবন অতিষ্ঠ ও স্থবির হয়ে পড়েছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ি থেকে বের না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চালানো হচ্ছে প্রচারণা।

এদিকে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ডের মধ্যেও দেশজুড়ে ঘণ্টায় ঘণ্টায় লোডশেডিং হচ্ছে। অসহ্য গরমে অতিষ্ঠ জনজীবন। দিনে-রাতে সবসময়ই বিদ্যুৎ যাচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে দিনে-রাতে ১০ থেকে ১৫ ঘণ্টারও বেশি লোডশেডিংয়ের খবর পাওয়া গেছে। অনেক গ্রামে রাতে বিদ্যুৎ আসেই না। এ অবস্থায় ফুঁসে উঠেছে গ্রামের মানুষ। কোনো কোনো গ্রামে পল্লী বিদ্যুৎকেন্দ্রের অফিসেও হামলা হচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে অনেক শিল্পকারখানার উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। শিল্পমালিকরা বলেছেন, একবার কারখানা বন্ধ হলে পুরো কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যায়। নতুন করে ফ্যাক্টরি চালু করতে আরও ২-৩ ঘণ্টা সময় লাগে। এ অবস্থায় ঈদের আগে ব্যবসা-বাণিজ্য চরম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

আগের দিনের চেয়ে ঢাকায় থার্মোমিটারে পারদ নেমেছে এক ডিগ্রি সেলসিয়াস। মাথার ওপর সূর্য্যরে খাড়া অবস্থানের কারণে দিনের বড় অংশ আগের কয়েক দিনের মতই তপ্ত ছিল; গরমের অনুভূতি ছিল অস্বস্তিকর। দেশের অন্যান্য স্থানেও সর্বোচ্চ তাপমাত্রায় কিছুটা হেরফের হলেও উত্তাপ কমেনি। প্রখর তাপে ঘরে বাইরে মানুষের ভোগান্তি ছিল আগের কয়েক দিনের মতই।

চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তাপমাত্রা ছিল ৩১ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৭৭ শতাংশ। দুপুর ১২টায় চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৬ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিলো ৫৪ শতাংশ। তাপমাত্রা আরও বেড়ে বিকেল ৩টায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং এ সময় বাতাসে আর্দ্রতা ছিলো ৩৮ শতাংশ। বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে গরম বেশি অনুভূত হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আজ বুধবার দেশের বেশির ভাগ এলাকার তাপমাত্রা অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে সিলেট, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও ঢাকা বিভাগের দুএক জায়গায় বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে বিক্ষিপ্তভাবে কোথাও কোথাও শিলাবৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। কোথাও কোথাও ঝড়বৃষ্টি আর শিলাবৃষ্টি হলেও সামগ্রিকভাবে দাবদাহ আপাতত যাচ্ছে না। দিনাজপুর, পাবনা, রাজশাহী ও চুয়াডাঙ্গা দিয়ে প্রচ- দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে দেশের অর্ধেকের বেশি এলাকা দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। তা আজ বুধবারও অব্যাহত থাকতে পারে। এ ব্যাপারে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ শাহীনুর ইসলাম বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে মেঘ দেখা গেলেও তাপমাত্রা খুব বেশি কমার সম্ভাবনা নেই। তবে কোথাও কোথাও কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো রাজশাহীতে, ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগের দিন পাবনার ইশ্বরদীতে তাপমাত্রা ছিলো ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা কমেছে সিলেট, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগে। এখানকার জেলাগুলোতে তাপমাত্রা ২ থেকে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমেছে।

এদিকে তাপমাত্রা কমলেও বাতাসে আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেশির ভাগ এলাকায় মানুষের ঘামঝরা বেড়েছে। এ প্রবণতা দুই-তিন দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আর ২৩ এপ্রিলের আগে দেশব্যাপী বৃষ্টিপাত বাড়ার তেমন সম্ভাবনা নেই। ওই দিন বৃষ্টিপাত বেড়ে দাবদাহ বিদায় নেয়া শুরু করতে পারে।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। এছাড়া রাজশাহী, পাবনা, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়ার উপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং ময়মনসিংহ, চাঁদপুর, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি ও পটুয়াখালী জেলাসমূহ এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, রংপুর ও সিলেটের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তা অব্যাহত থাকতে পারে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে, তবে সিলেট বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে রাজশাহীতে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৭ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বৃষ্টির আভাস দিয়ে তিনি বলেন, সন্ধ্যার পর থেকে আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে ঢাকাসহ চারটি বিভাগে বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে। বিভাগগুলো হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ ও সিলেট। সোমবার পাবনার ঈশ্বরদীতে এ মৌসুমের সর্বোচ্চ ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করার দুদিন আগে শনিবার চুয়াডাঙ্গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর এর আগের দিন রোববার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোর ও চুয়াডাঙ্গায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আগামী ২৪ ঘণ্টায় সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে জানিয়ে ওমর ফারুক বলেন, আগামী পাঁচদিনে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বাড়তে পারে এবং তাপমাত্রা কমতে পারে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More