পরিবারের দাবি হত্যাকান্ড
জীবননগর বেনীপুর বাঁওড়ে নৌকা ডুবে পাহারাদারের মৃত্যু : ময়না তদন্ত শেষে দাফন
জীবননগর ব্যুরো: জীবননগরউপজেলার বেনীপুর বাঁওড়ে নৌকা ডুবে পাহারাদার হাবিবুর রহমান ওরফে বাদল গোলদারের (৩৫) মৃত্যু নিয়ে নানারকম জল্পনা-কল্পনা শুরু হয়েছে। সাগর সাঁতরানো বাদল কী-ভাবে বাওড়ে ডুবে মারা গেলো এটা তারা কল্পনাও করতে পারছেন না। পরিবারের দাবি এ হত্যাকান্ড। এদিকে চুয়াডাঙ্গা মর্গে ময়না তদন্ত শেষে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় বাদলের নামাজে জানাজা শেষে তাকে গঙ্গাদাসপুর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সার্কেল পুলিশ সুপার মুন্না বিশ^াস গতকাল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
ঘটনার বিবরণে প্রকাশ, গত শনিবার রাতে জীবননগর শহরের সাবেক পৌর কাউন্সিলর আপেল মাহমুদের ছেলে সাজু, লাভলীপাড়ার মাজেদুর রহমানের ছেলে মাসুম ও গঙ্গাদাসপুর গ্রামের রেজাউল গোলদারের ছেলে বাদল গোলদার স্যালোইঞ্জিন চালিত টিনের তৈরীএকটি নৌকা নিয়ে বেনীপুর বাঁওড় পাহারায় বের হন। পাহারাকালে তাদের নৌকাটি রাত আনুমানিক ৮টার দিকে অজ্ঞাত কারণে উল্টে যায়। বাদল পানিতে ডুবে নিখোঁজ হলেও সাজু ও মাসুমকে বাওড়ের পানিতে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে এলাকাবাসী। নিখোঁজ বাদলকে রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে বাওড়ের জেলেরা জাল টেনে পানির নিচ থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে। এসময় জীবননগর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে উদ্ধার অভিযানে অংশগ্রহণ করে। নিহত বাদল সীমান্ত ইউনিয়নের গঙ্গাদাসপুর গ্রামের রেজাউল গোলদারের একমাত্র ছেলে। তার ৩টি শিশু কন্যা সন্তান রয়েছে। গঙ্গাদাসপুরের ডবল মার্ডার মামলা তিনি এজাহার নামীয় ৩ নম্বর আসামি। এছাড়াও থানায় তার বিরুদ্ধে মাদক মামলাও রয়েছে।
নিহত বাদলের সম্পর্কে চাচা কাওছার আলী জানান, শনিবার রাতে বাদলের বাওড়ে ডিউটি ছিলো না। তাকে সন্ধ্যার সময় ডেকে নেয়া হয়। বাদল একজন ভালো সাঁতারু। চট্টগ্রাম শিপ ইয়ার্ডে চাকরি করাকালে সে অনেকবার সাগর সাঁতরেছে। এছাড়াও গঙ্গাদাসপুরের আলোচিত খাস জমি নিয়ে বিরোধ ঘটনায় ঘটে যাওয়া জোড়া হত্যাকান্ড মামলার সে একজন আসামি। সেই বাদল বাওড়ে ডুবে মারা গেছে এটা আমরা বিশ^াস করতে পারছি না। আমাদের ধারণা কোন কারণে তাকে পানিতে ফেলে হত্যা করা হয়েছে। আজ সোমবার আমরা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করবো। বাদলের পিতা রেজাউল গোলদাম, মা সবেদা খাতুন ও স্ত্রী মিনু খাতুনেরও অভিন্ন অভিযোগ।
বাঁওড় ইজারাদারদের পক্ষে জীবননগর পাইমারী স্কুলপাড়ার ফরহাদ হোসেনের ছেলে ফয়সাল ইকবাল সাংবাদিকদের জানান, বাদল, সাজু ও মাসুম রাতে বাঁওড়ের মাছ পাহারা দিচ্ছিলো। নৌকা উল্টে গেলে তিনজন পানিতে পড়ে যায়। এদের মধ্যে সাজু ও মাসুম পানিতে ভেসে উঠলে মাছচাষি দিনু একটি ডোঙা নিয়ে তাদের উদ্ধার করেন। নিখোঁজ বাদলের সন্ধান না পাওয়ায় জেলেরা পানিতে জাল টেনে রাত ১১টার দিকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করেন।
জীবননগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কমান্ডার খালিদ হোসেন জানান, ইঞ্জিন চালিত নৌকায় তিন যুবক বাঁওড় পাহারা দিচ্ছিলো। তাদের নৌকা উল্টে গেলে দুইজনকে পানির উপরে ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। অপর যুবক বাদল পানির নিচে তলিয়ে যায়। স্থানীয় জনতা জাল টেনে ৩ ঘণ্টা পর তার মরদেহ উদ্ধার করে।
জীবননগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল খালেক জানান, পুলিশ রাতে লাশ উদ্ধার করে সুরতহাল প্রতিবেদনের জন্য চুয়াডাঙ্গা মর্গে পাঠানো হয়েছে। যেহেতু বাদল হত্যা ও মাদক মামলার আসামি তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে কি-না বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।