নিষিদ্ধ পলিথিনে ছেয়ে গেছে দামুড়হুদাসহ বিভিন্ন বাজার
নজর নেই সংশ্লিষ্টদের : নষ্ট হচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্য
দামুড়হুদা প্রতিনিধি: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা শহর থেকে গ্রামীণ বিভিন্ন বাজারে নিষিদ্ধ পলিথিনে ছেয়ে গেছে। মাছ, মাংস, ডিম, তরকারি, পান-সুপারি, ফল, মিষ্টি, মুদি, মনিহারি প্রায় প্রতিটি দোকানে পণ্য বেচাকেনায় প্রকাশ্যেই ব্যবহৃত হচ্ছে সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত পলিথিনের ব্যাগ। প্রশাসনের যথাযথ তদারকি না থাকায় শুধু দামুড়হুদা উপজেলা শহরই নয়, দর্শনা পৌর শহরের বাজার, সীমাস্তবর্তী কার্পাসডাঙ্গা বাজার ও আটকবর বাজারসহ বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবাধে এ নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, অন্যদিকে এর ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্যে হুমকির সৃষ্টি করছে। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, দোকান থেকে বিভিন্ন পণ্য বহনের জন্য দেয়া নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ। এসব নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের পর আস্তাকুঁড় (আবর্জনা ফেলার স্থান), বাড়ির আশপাশের খোলা জমিতে যত্রতত্র ফেলা হয়। যেহেতু পলিথিন নষ্ট হয়ে মাটি ও পানিতে মিশে যায় না, সেহেতু এতে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। দামুড়হুদা, দর্শনা, কার্পাসডাঙ্গা, আটকবর গোচিয়ারপাড়া মোড়ের গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যে উপজেলা শহর, দর্শনা পৌর শহর, বিহত কার্পাসডাঙ্গা, আটকবর বাজার থেকে শুরু করে প্রত্যান্ত গ্রাম অঞ্চলে খুচরা ও পাইকারি মূল্যে বিক্রি করছে নিষিদ্ধ পলিথিনের ব্যাগ। সরেজমিনে ঘুরে ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দামুড়হুদা বাসস্ট্যান্ড বাজার, তহ বাজার, সাপ্তাহিক বাজার, মাছ বাজারসহ প্রতিটি এলাকাতেই এখন ব্যাপক হারে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার চলছে। সরকার পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধ করার পর কয়েক দিন পরিস্থিতি ভালো ছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত তদারকি না থাকায় সাম্প্রতিক সময়ে পলিথিনের ব্যবহার বাড়ছে। পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে বাজারে কাগজের ঠোঙা, চটের ব্যাগ ইত্যাদি রয়েছে। কিন্তু পলিথিন সহজলভ্য হওয়ায় বিকল্পগুলোর প্রতি মানুষের আগ্রহ কম। নাম প্রকাশ না করার শর্তে দামুড়হুদা বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, এই বাজারের বেশ কয়েকজন দোকানদার গোপনে নির্দিষ্ট লোকদের কাছে পলিথিন বিক্রি করে থাকেন। প্রতি কেজি পলিথিন ২০০-২৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। সারা উপজেলা খুচরা/পাইকারি মূল্যে প্রতিদিন ৫০০কেজি পলিথিনের ব্যাগ বিক্রি হয়। কার্পাসডাঙ্গা বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, প্রতিদিন এ বাজারে ১-২ শত কেজি পলিথিন ব্যাগ বিক্রি হয়। বাজারের ২/৩জন পাইকারি ব্যবসায়ীদের থেকে আমরা পলিথিন কিনে আনি। এছাড়াও কয়েকজন বড় ব্যবসায়ী দোকানে রেখে বিক্রি করে আমরা তাদের দোকান থেকে কিনে আনি। দামুড়হুদা উপজেলা পাট উন্নয়ন উপ-সহকারী কর্মকর্তা মো. রিয়াজুল ইসলাম বলেন, সরকারিভাবে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ হবার পর বাজারের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদেরকে পলিথিনের ব্যাগ ব্যবহার না করতে সচেতন করা হয়েছে। সচেতনমূলক প্রচার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে পলিথিন ব্যাগ বিক্রেতাদের তালিকা করা হয়েছে। অভিযান চালিয়ে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দামুড়হুদা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. মমতাজ মহল, সুনির্দিষ্টভাবে নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। নিষিদ্ধ পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার বন্ধে অচিরেই অভিযান চালানো হবে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলেই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১ নভেম্বর থেকে বাজারে পলিথিন জাতীয় সব ধরনের ব্যাগ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। কোনো ক্রেতাকে এ ব্যাগ দেয়া যাবে না। এছাড়া পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ কার্যক্রমে কাঁচাবাজার ও পলিথিন উৎপাদন কারখানায় অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান। গত বছরের ১ অক্টোবর থেকে রাজধানীর সব সুপারশপে এবং ১ নভেম্বর থেকে সব কাঁচাবাজারে এ পদক্ষেপ কার্যকর হবে বলে তিনি জানিয়েছিলেন। ২০০২ সাল থেকে আইন করে নিষিদ্ধ করা আছে পলিথিন ব্যাগ। ২০০৪-২০০৬ সাল পর্যন্ত সফলভাবেই প্লাস্টিক ব্যাগের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছিল। তবে এ সিদ্ধান্তের পরও এখনো পর্যন্ত দামুড়হুদা উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের তেমন কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.