স্টাফ রিপোর্টার: চালের বাজারে লেগেছে নতুন ধানের সুবাস। রাজধানীসহ দেশের বাজারগুলোতে কমতে শুরু করেছে চালের দাম। এরই মধ্যে চালের দাম মানভেদে কেজিতে কমেছে চার থেকে পাঁচ টাকা। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পরিবেশ ভালো থাকলে আস্তে আস্তে দাম আরো কমে আসবে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া যায়।
এদিকে দেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় রাখতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জরুরি উদ্যোগ হিসেবে আগামীকাল শনিবার থেকে টিসিবির পেঁয়াজের দাম ৩৫ টাকা থেকে কমিয়ে ২৫ টাকায় বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়া বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করে বাজারে নজরদারি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। বাংলাদেশ থেকে বিদেশি ক্রেতারা যেন তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল না করে সে জন্য চিঠি দেয়া হবে। গতকাল বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে দেশের চলমান পরিস্থিতিতে ব্যবসা-বাণিজ্য বিষয়ে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি এসব কথা বলেন।
কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ীদের তথ্য মতে, মিনিকেট চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা কমেছে। গত সপ্তাহে রাজধানীর পাইকারি বাজারে এই জাতের প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চালের দাম ছিলো দুই হাজার ৫০০ থেকে দুই হাজার ৬৫০ টাকা। অর্থাৎ ৫০ থেকে ৫৩ টাকা কেজি। চলতি সপ্তাহে তা নেমে এসেছে দুই হাজার ২৫০ থেকে দুই হাজার ৩৫০ টাকায়। সে হিসাবে কেজি ৪৫ থেকে ৪৮ টাকা। আটাশ চালের দামও কমেছে একই পরিমাণে। চালটি এখন এক হাজার ৮৫০ থেকে এক হাজার ৯০০ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে। অর্থাৎ ৩৭ থেকে ৩৮ টাকা কেজি; যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৪৪ টাকা। বাজারে নাজিরশাইল বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪৬ থেকে ৫৪ টাকায়। এক সপ্তাহ আগে যা ছিল ৫৪ থেকে ৬০ টাকা।
কারওয়ান বাজারের চাল ব্যবসায়ী মেসার্স জনতা রাইস এজেন্সির মালিক মো. রাসেল বলেন, ‘চালের দাম কমতির দিকে। পরিবেশ ভালো থাকলে আরো কমে আসবে। বোরো ধান উঠে গেছে। যা বাকি আছে তাও ভালোভাবেই উঠবে বলে মনে হচ্ছে।’
বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে, আটাশ এখন মণপ্রতি এক হাজার ৬৪২ থেকে কমে এক হাজার ৪৯৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে গুটি চালের দাম কমেছে মণে ৩৭ টাকা। চালটি বর্তমানে প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৫৩০ টাকা দরে। গত সপ্তাহে বাজারে এর মূল্য ছিলো এক হাজার ৫৬৭ টাকা। এ ছাড়া নাজিরশাইল চালের দাম মণে ৩৭ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৩ টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, ভোক্তাদের মধ্যে যেসব চালের চাহিদা বেশি মূলত সেগুলোরই দাম কমেছে। সরকারিভাবে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে চাল বিতরণ কর্মসূচি চালু থাকার পাশাপাশি অনেকেই আগে কিনে মজুদ করায় বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমেছে। ফলে বাজারে চাহিদা কমে গিয়ে এসব চালের দাম কমে গেছে।
চালের এসব জাতের মধ্যে আটাশ ও মিনিকেট চালের দাম কমেছে সবচেয়ে বেশি। এসব চাল মূলত ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের ধান থেকে উৎপাদন করা হয়ে থাকে। ভোক্তা পর্যায়ে অধিক জনপ্রিয় হওয়ায় দেশের কৃষকরাও এ দুটি জাতের চালই আবাদ করে থাকেন সবচেয়ে বেশি। এ বিষয়ে নওগাঁ ধান-চাল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোদ বরণ সাহা চন্দন বলেন, ‘গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে চালের দাম কমেছে কেজিতে চার থেকে সাত টাকা পর্যন্ত। ভালো মানের পাইজাম, নাজির ও চিনিগুঁড়া ছাড়া সব ধরনের চালের দাম গত দুই সপ্তাহ ধরেই কমতির দিকে।’
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের বোরো মরসুমে সারা দেশে মোট দুই কোটি চার লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্য অর্জনের জন্য আবাদ লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪৭ লাখ ৬৬ হাজার হেক্টর। এরই মধ্যে হাওর জেলাগুলোর নিম্নাঞ্চলের ধান কাটা শেষ হয়েছে ৯০ শতাংশ। দেশের অন্যান্য জেলার ধানও কাটা শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে সারা দেশে প্রায় ২০ শতাংশ ধান কাটা হয়েছে।
রাজধানীর চালের বাজারে গতকাল আরো যেসব চালের দাম কমতির দিকে দেখ গেছে সেগুলোর মধ্যে জিরাশাইল চালের দাম প্রতি মণে কমেছে ৩৭ টাকা। এ জাতের চালের দাম মণপ্রতি দুই হাজার ৯০ টাকা থেকে কমে দাঁড়িয়েছে দুই হাজার ৫৩ টাকায়। বাসমতি চালের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। এখনো এক সপ্তাহ আগের দুই হাজার ২৩৯ টাকায় বিক্রি হচ্ছে চালটি। চিনিগুঁড়া চালের মণপ্রতি দাম তিন হাজার ৫৪৫ থেকে ১৯ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৫২৭ টাকায়। তবে কাটারিভোগ চালের দাম ৭৫ টাকা বেড়ে মণপ্রতি দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৬০ টাকায়।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ রাইস মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি জাকির হোসেন রনি বলেন, ‘গত মাসে মানুষের বাড়তি মজুদপ্রবণতার কারণে চালের দাম বাড়তির দিকে ছিল। তবে গত এক সপ্তাহ ধরে বাজারে চালের দাম কমে এসেছে। মূলত মিলাররা দাম কমানোর কারণে রাজধানীর পাইকারি বাজারে চালের দাম কমেছে।’