দেশের ১৩ জেলায় বইছে শৈত্যপ্রবাহ : চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে কম্বল বিতরণ

পৌষের হাড় কাঁপানো শীতে কার্যত জবুথবু সারাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার: বছরের শুরুতেই সারাদেশে জেঁকে বসেছে শীত। গত তিনদিন ধরে কনকনে শীতে কাঁপছে চুয়াডাঙ্গাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। গতকাল শুক্রবার মরসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা দেখেছে পঞ্চগড়। আবহাওয়া অধিদফতর জানিয়েছে, দেশের ১৩ জেলায় মৃদৃ শৈত্যপ্রবাহ বইছে। আগামী আরও কয়েক দিন শীতের প্রকোপ অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি। সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদফতরের দেয়া পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া, নওগাঁ এবং কুষ্টিয়া জেলাসহ রংপুর বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এর ফলে সারা দেশে কোথাও কোথাও দিনের বেলায় শীতের অনুভূতি হতে পারে। মৃদু শৈত্যপ্রবাহের প্রভাবে উত্তরাঞ্চলের পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৩ ডিগ্রি। চলতি শীত মরসুমে এটিই সর্বনিম্ন। চুয়াডাঙ্গায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিলো ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে গত বৃহস্পতিবার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঘন কুয়াশায় দিনের তাপমাত্রা কমেছে স্বাভাবিকের চেয়ে ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। এতে রাজধানীসহ সারাদেশেই বেড়েছে শীতের তীব্রতা। আর এ অবস্থা আরও চারদিন অব্যাহত থাকতে পারে বলে আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস। গতকাল শুক্রবার দেশের প্রায় সবখানেই তীব্র শীত অনুভূত হয়েছে। কোথাও কোথাও সন্ধ্যার পর বেড়েছে শীতের অনুভূতি। ছুটির দিন এমনিতেই রাস্তাঘাটে মানুষের চলাচল কম থাকে। তীব্র শীত তা আরও কমিয়ে দিয়েছে। খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া আজ রাজধানীতে কেউ ঘরের বাইরে বের হয়নি। যদিও নিম্ন আয়ের মানুষদের বিপত্তি বেড়েছে। ঘন কুয়াশার কারণে যানবাহন চলাচলেও বিপত্তি দেখা দিয়েছে। আজ শনিবার তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও কুয়াশা পুরোপুরি কাটতে আগামী আরও তিন দিন অপেক্ষা করতে হবে। এতে শীতের কাঁপুনিও অব্যাহত থাকবে। কাগজে-কলমে চুয়াডাঙ্গায় শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শীতের অনুভূতি অনেক বেশি।
এ প্রসঙ্গে আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও শৈত্যপ্রবাহের মতোই শীত অনুভূত হচ্ছে। এটাকে বলা হয় ‘কোল্ড ডে কন্ডিশন’। অর্থাৎ তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না নামলেও তীব্র শীতের অনুভূতি হচ্ছে। মূলত মধ্যরাত থেকে পরদিন দুপুর পর্যন্ত কুয়াশা, উত্তরের বাতাস, জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকা এবং ঊর্ধ্বাকাশের জেট স্ট্রিমের দক্ষিণমুখী বিস্তার ও নিম্নমুখী বিচরণ এই ঠান্ডার অনুভূতি বাড়িয়ে দিয়েছে। সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পার্থক্য পাঁচ ডিগ্রির নিচে নেমে এলে হাড়-কাঁপানো শীত অনুভূত হয়। এটাই গত দুই দিন ধরে হচ্ছে। আগামী ৭২ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মরসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। আর এর বর্ধিতাংশ উত্তরপূর্ব বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এছাড়া আগামী তিনদিন অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। তবে মধ্যরাত থেকে সকাল পর্যন্ত সারা দেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে এবং তা কোথাও কোথাও দুপুর পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচল, অভ্যন্তরীণ নদী পরিবহন এবং সড়ক যোগাযোগ সাময়িকভাবে ব্যাহত হতে পারে। আবহাওয়ার জানুয়ারি মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারিতে এক থেকে তিনটি মৃদু থেকে মাঝারি এবং এক থেকে দুটি তীব্র শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। বড় এলাকাজুড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে নেমে গেলে তাকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ ধরা হয়; ৬ থেকে ৮ ডিগ্রির মধ্যে থাকলে মাঝারি এবং ৮ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকলে তাকে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ বলা হয়। চুয়াডাঙ্গায় তাপমাত্রা সামান্য বেড়েছে। তবে শীত কমেনি একটুও। গতকাল শুক্রবার এ জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তীব্র শীতের প্রভাব পড়েছে খেটে খাওয়া কর্মজীবী মানুষের ওপর। হাড়কাঁপানো শীত ও কুয়াশার মধ্যেই তাদের কর্মস্থলে ছুটতে হচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার সকাল ৯টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত বৃহস্পতিবার যা ছিল ৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রাকিবুল হাসান বলেন, মাঝে কিছুদিন বিরতি দিয়ে জেলার ওপর দিয়ে আবারও তাপমাত্রা হ্রাস পাচ্ছে। এ অবস্থা আরও কয়েকদিন চলতে পারে। তীব্র ঠান্ডায় ঠিকমতো কাজ করতে পারছেন না খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষেরা। হতদরিদ্র ও শ্রমজীবী মানুষদের পোহাতে হচ্ছে অবর্নণীয় দুর্ভোগ। অনেকে কাজ না পেয়ে অলস সময় পার করছেন। কর্মহীন হয়ে পড়েছেন অনেকে। চুয়াডাঙ্গা সরদার পাড়ার মৎস্য শ্রমিক আশিকুর রহমান বলেন, কয়েকদিন ধরে যেভাবে শীত পড়ছে, মাছ ধরতে পারছি না। পেটের দায়ে পুকুরে নামতে হচ্ছে। ভ্যানচালক টুটুল হোসেন বলেন, শীতের মধ্যে ঘর থেকে বাইরে বের হমে মন চায় না। কিন্তু ঘরে বসে থাকলে তো আর পেট চলবে না। তাই বাইরে বের হতে হচ্ছে। কিন্তু রাস্তাঘাটে লোকজন নেই। যাত্রী পাচ্ছি না। এদিকে শীতের কারণে কয়েক দিন ধরেই জেলার হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও বেসরকারি হাসপাতাল এবং চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত চেম্বারে ঠান্ডাজনিত রোগে আক্রান্ত মানুষের ভিড় বেড়েছে। বিশেষ করে শিশু, ডায়রিয়া ও মেডিসিন বিভাগে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়ের কারণে চিকিৎসক-নার্সদের হিমশিম অবস্থা। সদর হাসপাতালের শিশু বিভাগের পরামর্শক মাহবুবুর রহমান বলেন, শীতের কারণে হাসপাতালে দুই ধরনের শিশু রোগীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। ঠান্ডাজনিত রোগ ও রোটা ভাইরাসজনিত ডায়রিয়া। প্রতিদিন বহির্বিভাগে শিশু রোগীর চাপ বেড়ে যাচ্ছে। আন্তঃবিভাগে শিশু ওয়ার্ডে গড়ে ৬০ জন রোগী চিকিৎসা নিচ্ছে। এ ছাড়া ডায়রিয়া ওয়ার্ডেও ৫০ থেকে ৬০টি করে রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। এদিকে, চুয়াডাঙ্গার বিভিন্ন স্থানে শীর্তাতদের মাঝে কম্বল বিতরণ অব্যাহত রয়েছে। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা শহরতলি দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়ায় বিএনপির উদ্যোগে কম্বল বিতরণ করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় দৌলাতদিয়াড় বঙ্গজপাড়া মাঠে কম্বল বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান শরীফ। বিশেষ অতিথি ছিলেন জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, সফিকুল ইসলাম পিটু, খালিদ মাহমুদ মিল্টন। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মিজানুর রহমান মিজানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান লিপ্টন, সিনিয়র যুগ্ম-সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি এবাদত হোসেন, আবুল কাশেম লাল্টু, জেলা মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক জাহানারা পারভীন, জেলা যুবদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদুল হক মাসুদ, সদর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক এসএম হাসান, আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আমির হোসেন ঢাকালে, ১নং সহ-সভাপতি রোকনুজ্জামান, জেলা ছাত্রদলের সহসভাপতি ফরিদুজ্জামান ফরিদ। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন আলুকদিয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. আক্তারুজ্জামান।
হাসাদাহ প্রতিনিধি জানিয়েছেন, জীবননগরের মাধবপুর গ্রামে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে মাধবপুর বাজারে যুব বিভাগের উদ্যোগে ৫০ পিস শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়। ২নং ওয়ার্ড যুব বিভাগের সভাপতি আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন ২নং ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি মাওলানা আবুল কাশেম। ২নং ওয়ার্ডের মূল ইউনিটের সভাপতি ইসমাইল হাসান, ইদ্রীস আলী, ২নং যুব বিভাগের সহ-সভাপতি শামীম, সেক্রেটারি আকিমুল ইসলাম, সহ সেক্রেটারি রাজু আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান তারিক, অফিস সম্পাদক রনি, প্রচার সম্পাদক নাজির আহম্মেদ, ক্রীড়া সম্পাদক আতিয়ার রহমান, সাংস্কৃতিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, সমাজকল্যাণ সম্পাদক তামিম হোসেন, শিক্ষা সম্পাদক জিয়াউর রহমান জুয়েল, শ্রমবিষয়ক সম্পাদক এনামুল সিদ্দীক, বায়তুল মাল সম্পাদক তরিকুল ইসলাম এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More