মহাসিন আলী: কয়েক মাস আগেও সবজির বাজার চড়া থাকায় ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গিয়েছিলো মেহেরপুরের সবজি। সবজি চাষে ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে এ জেলার কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আবাদ ও সবজির ব্যাপক ফলন হওয়ায় কয়েক মাসের ব্যবধানে বাজার দর একেবারেই পড়ে গেছে। ফলে ক্রেতার অভাবে সবজি কিনছে না পাইকারী ব্যবসায়ীরাও। ব্যবসায়ীরা বলছেন, কৃষি উপকরণ সার, কীটনাশকের দাম কমিয়ে আবাদের খরচ কমানো গেলে চাষিরা কিছুটা ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। এছাড়া আর অন্য কোন বিকল্প উপায় নেই বলে জানান এ জেলার চাষিরা।
স্থানীয়দের মতে, ফুলকপি, পাতাকপি, সীম, মূলা-বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষে সুনাম রয়েছে মেহেরপুর জেলার। তাই সবজি মৌসুমে ব্যাপকহারে সবজি চাষ করেন চাষিরা। বিশেষ করে জেলার শীতকালীন ও আগাম শীতকালীন সবজির কদর রয়েছে দেশের বিভিন্নস্থানের মোকামগুলোতে। চলতি মৌসুমে আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে ওঠা শুরু হলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ব্যাপকভাবে লাভবান হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে সবজির বাজার দর একেবারেই পড়ে গেছে। সবজি বিক্রি না হওয়ায় বিপাকে পড়েছে চাষিরা। মেহেরপুর জেলা কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, গত বছর এ জেলায় সবজির আবাদ হয়েছিলো প্রায় ২ হাজার ৬শত হেক্টর জমিতে। আর চলতি বছর সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে। মেহেরপুর বড়বাজার তহবাজার এলাকার পাইকারী বাজার ঘুরে দেখা গেছে কেজি প্রতি ফুলকপি ২-৩ টাকা, মূলা ২ টাকা, পালংশাক ৩ টাকা, সীম ৫ টাকা, বেগুন ৫-৬ টাকা, বিটকপি বা ওলকপি ৩-৪ টাকা, লাউ ৭-৮ টাকা, পিয়াজের কলি ৮-৯ টাকা, পাতাকপি ৮-১০ টাকা, টমেটো ৩৫-৪০ টাকা, নতুন আলু ৩০-৩৫ টাকা, পুরাতন আলু ৩৩-৩৪ টাকা, নতুন দেশী পিয়াজ ২৫-২৬ টাকা, গাজর ৩৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মেহেরপুর সদর উপজেলা ফতেপুর গ্রামের কপিচাষী লাবলু খাঁন বলেন, এবার ৫ বিঘা জমিতে সবজি চাষ করেছি। আবাদী এ জমিতে ফুলকফি, ওলকফি চাষ করতে কীটনাশক, সার, বীজ, সেচ মিলিয়ে সর্বমোট খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ টাকা। এর মধ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ৪০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। তিনি আরও বলেন, ৫ বিঘা জমিতে সবজি লাগিয়ে আমার প্রায় ৬০ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে। কীটনাশক, সার ও বীজের দাম পর্যন্ত ওঠেনি। এভাবে যদি ক্ষতি হতে থাকে তাহলে পরবর্তীতে আবাদ আমরা করতে পারবো না। গাংনী উপজেলার সাহারবাটি গ্রামের সবজি চাষি কাবুল হোসেন ও জামাল হোসেন জানান, আমরা অনেকে যারা ঋণ নিয়ে চাষ করেছি, তারা সবাই প্রায় পথে বসে যাওয়ার উপক্রম হয়ে গেছি। চড়া সুদে বিভিন্ন সমিতি থেকে ঋন নিয়ে লাভের আশায় সবজি চাষ করেছি। আগাম শীতকালিন সবজি বাজারে ওঠার সময়ও সবজির বাজার দর ভালো ছিল। চাষি ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হয়েছে। এখন পর্যন্ত পরিমাণ শীতকালিন সবজি বাজারে উঠেছে। ব্যাপকহারে সবজির চাষ ও ফলন ভালো হওয়ায় সবজির বাজরের দাম পড়ে গেছে। মুজিবনগর উপজেলার মোনাখালী গ্রামের চাষি হাবিবুর জানান, ফুলকপি আর বিট কপি চাষ করেছি। কিন্তু জমির লেবার খরচ উঠছে না। এক থেকে দেড় টাকা কেজি দরেও কেউ নিচ্ছে না। তাই জমিতেই কপি রেখে দিতে হচ্ছে। বিটকপি জমিতেই চাষ করে ফেলেছি। মেহেরপুর বড়বাজার সবজি ব্যবসায়ী রহিদুল ইসলাম ও আশরাফুল ইসলাম বলেন, কয়েক মাস আগেও সবজির দাম ভালো থাকায় আমরা লাভের মুখ দেখতে পেয়েছি। কিন্তু ব্যাপক হারে সবজি চাষ হওয়ায় এখন বাজারে ভরপুর সবজি আসছে। তাই সবজির বাজার দর একেবারেই পড়ে গেছে। এখন আমরাও চাষিদের কাছে থেকে সবজি কিনতে পারছি না। সবজি কিনলেই লেবার খরচ, গাড়ী ভাড়া উঠছে না। গাড়ী প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা লোকশান হচ্ছে। এদিকে মেহেরপুর বড় বাজারে সবজি কিনতে আসা তুহিন ও হাফিজুর রহমানসহ আরো অনেক ক্রেতা জানান, কিছুদিন আগে সবজির চড়া দাম থাকায় আমরা সবজি কিনে খেতে পারিনি। এখন সবজি কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। আমরা স্বস্থির মধ্যে রয়েছি। মেহেরপুর বড় বাজার তহবাজর ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ বলেন, বর্তমানে সবজি চাষিরা ব্যাপক লোকশানে মুখে পড়েছে। যা এই মৌসুমে আর পুষিয়ে নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে সবজি চাষের জন্য কৃষি উপকরন কীটনাশক, সারের দাম কমিয়ে আনা সম্ভব হলে চাষিরা কিছুটা এই ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পাবে। aমেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ বলেন- অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর সবজির চাষ বেড়েছে আবার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না থাকায় পর্যাপ্ত ফলন হয়েছে। বিধায় দাম কমে গেছে। চাষিরা নতুন নতুন মোকাম খুঁজে এ জেলার পাঠালে সবজির দাম পাবে বলে কৃষি বিভাগ মনে করেন।