দামুড়হুদা উপজেলা জুড়ে ফসলি জমির মাটি কাটার মহোৎসব : যাচ্ছে ইটের ভাটায়

দামুড়হুদা প্রতিনিধি: দামুড়হুদা উপজেলা জুড়ে চলছে কৃষি জমির মাটি কেটে বিক্রির মহোৎসব। পুরো উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় দিনে অথবা রাতে যান্ত্রিক দানব এক্সেভেটর (ভেকু) মেশিন দিয়ে কৃষি আবাদি জমির মাটি কেটে উপজেলার বিভিন্ন ইটের ভাটা ও গর্ত ভরাট কাজে বিক্রি করছে চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। উপজেলা প্রশাসনের ঢিলেঢালা ভূমিকায় কিছুতেই বন্ধ হচ্ছে না মাটি ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম।
জানা গেছে, দামুড়হুদা উপজেলার অধিকাংশ জমিই ত্রি-ফসলি। আর এসব ত্রি-ফসলি জমি থেকে প্রতি বছর শত শত বিঘা জমি থেকে মাটি কেটে বিক্রি করা হয়। এর ফলে এ উপজেলা থেকে নিত্যদিন কমছে আবাদি জমির পরিমাণ। এ উপজেলার চিহ্নিত মাটি ব্যবসায়ীরা দিনে ও রাতে কৃষকদেরকে প্রলোভন দেখিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করে বনে গেছে প্রভাবশালী। এ উপজেলায় গুটি কয়েকজন প্রভাবশালী মাটি ব্যবসায়ী চক্র গড়ে তুলেছেন নিজেদের মাটি ব্যবসার সক্রিয় সিন্ডিকেট। এরা দরিদ্র কৃষকদের টার্গেট করে অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে আবার চাপে ফেলে কেটে নিচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এসব ফসলি জমির মাটি কেটে ৮/১০ফুট গহীন করে জমি পরিণত হচ্ছে পুকুরে। এসব জমির মাটি অবৈধ ট্রাক্টর ও ট্রলি করে পরিবহন করা হচ্ছে দিন ও রাতে। এরফলে অদক্ষ চালকদের কারণে সরকারিভাবে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত গ্রামীণ সড়কগুলো চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এছাড়াও মাটি ভর্তি অবৈধ ট্রাক্টর ও ট্রলির কারণে নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতের বিভিন্ন ফসল। সরেজমিনে দামুড়হুদা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, এ উপজেলার প্রায় ৫০টির বেশি স্থানে এভাবে অবৈধ পন্থায় কৃষি জমির মাটি কেটে বিভিন্ন ইটের ভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছে উপজেলার চিহ্নিত ভূমিদস্যুরা। চিহ্নিত স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে দর্শনার পরানপুরের নলগাড়ি মাঠ, পারকৃষ্ণপুর গ্রামের মাঠ, সদাবরি, বুইচিতলার মাঠ, হল্ট চাদপুর গ্রামের ছটাংগার মাঠ, দামুড়হুদার হাতিভাঙ্গা, মোক্তারপুর, তারিনিপুর, জয়রামপুর গ্রামের মাঠ, চন্দবাস গ্রামের মাঠ, কানাইডাঙ্গা গ্রামের মাঠসহ সদ্য খননকৃত ভৈরব নদের কার্পাসডাঙ্গা ভূমিহীন পাড়ার নিচ থেকে ভেকু মেশিন দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে মাটি কাটা হচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক মাটি ব্যবসায়ী বলেন, সবাইকে ম্যানেজ করে মাটি কেটে বিক্রি করি। আর রাতে প্রশাসন অভিযানও চালায় না। তাই সব চেয়ে নিরাপদ রাতে মাটি কেটে বিক্রি করা। সারারাত উপজেলায় শতাধিক ট্রাক্টর চলে একটাও আটক হয় না। বিষয়টা বুঝতে তো বাকি থাকার কথা না আপনাদের। দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, কৃষি আবাদি জমি থেকে মাটি কাটা আইনবহির্ভূত। ভূমিদস্যুরা কৃষি ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হচ্ছেন। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে আমরা সকলেই সামগ্রিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। ভূমিদস্যুরা কৃষি জমি থেকে জমির টপ সয়েল (উর্বর) মাটি কেটে নিচ্ছেন। এর ফলে ওই জমিতে কাক্সিক্ষত ফসল উৎপাদন হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে একটা সময় ফসল উৎপাদন ব্যাহত হবে। আমরা কৃষি জমি রক্ষায় কৃষকদেরকে সচেতন করে যাচ্ছি। দামুড়হুদা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কে এইচ তাসফিকুর রহমান বলেন, ভূমি রক্ষায় সব সময় আমরা সজাগ আছি। কিছুদিন আগেও অভিযান চালিয়ে ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তথ্য পেলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাতে যারা মাটি কাটছে তাদের তথ্য পেলে পুলিশ পাঠিয়ে ধরে আনা হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More