দামুড়হুদায় শীতকালীন সবজি আবাদ করে কৃষকদের মাথায় হাত

বাজারে ধস : ফুলকফি ও বাঁধাকপিতে গুনতে হচ্ছে লোকসান

হাবিবুর রহমান/মিরাজ: চলতি মরসুমে দামুড়হুদা উপজেলায় শত শত বিঘা জমিতে শীতকালীন সবজি আবাদ করে বিপাকে পড়েছে কৃষকরা। চলতি মরসুমে সবজি আবাদ করেও উৎপাদন খরচের টাকাও উঠছে না কৃষকদের। হঠাৎ করে সবজির বাজারে ধস নামাই বিপাকে পড়েছেন কৃষকেরা। সব ধরনের সবজির বাজার হঠাৎ কমে যাওয়ায় সব থেকে বেশি লোকসান গুনতে হচ্ছে ফুলকফি ও বাঁধাকপি চাষিদের। সবজি বিক্রি করে শ্রমিক ও পরিবহন খরচ উঠছে না তাদের। ক্রেতা কম থাকায় অধিকাংশ সবজিই নষ্ট হচ্ছে ক্ষেতে।
জানা গেছে, চলতি মরসুমে শীতকালীন সবজি ফুলকপি আবাদ হয়েছে ৯৬ হেক্টর ও বাঁধা কপি ৭৬০ হেক্টর জমিতে। এবার বেশ ভালো উৎপাদনও হয়েছে। এদিকে, গত কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্যাপকহারে দাম কমে যাওয়ায় মহা বিপদে পড়ে গেছে কৃষকরা। আবাদে খরচের পরিমাণের চেয়ে বিক্রি মূল্য নগন্য হওয়ায় ক্ষেতের সবজি তুলে নারী-পুরুষেরা গো, ছাগলকে দিয়ে খাওয়াচ্ছেন কেউ কেউ। বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ হাজার টাকা খরচ হলেও কেউ কেউ বিক্রি করেছেন ১০-১৫ হাজার টাকায়। এখন যখন সবার কপি একসাথে বাজারজাত করার সময় হয়েছে তখন কপির কদর কমে গেছে। এদিকে বিভিন্ন গ্রামের কপি চাষিদের থেকে পাইকারী মূল্যে বিঘা ধরে কপি কিনে নিলেও এখন আর তারা কপি নিতে চাচ্ছে না। কেউ কেউ আবার বায়নার টাকাও ফেরত চাইছেন কৃষকদের থেকে। কৃষকরা বায়নার সামান্য টাকা মূল্যে পুরো ক্ষেতের কপি দিতে চাইলেও কপি নিতে অরুচি পাইকারী মহাজনদের।।
দামুড়হুদা উপজেলার নাপিতখালি গ্রামের সবজি চাষি খালিদ হাসান জানান, চলতি মরসুমে গ্রামের মাঠে তিনি দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপির আবাদ করেছেন। এতে তার চারা, বালাইনাশক, সার, সেচ ও শ্রমিক বাবদ খরচ হয়েছে ৫০ হাজার টাকা। তার আবাদকৃত ফুলকপি বিক্রি হবে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকায়। এতে তার চারা কেনা খরচও উঠবে না।
দামুড়হুদার গোবিন্দহুদা গ্রামের সাবেক মেম্বার কপি চাষি লুৎফর রহমান বলেন, বুক ভরা আশা নিয়ে এবার দেড় বিঘা জমিতে ফুলকপি-বাঁধাকপি আবাদ করেছি। বেশ ভালো ফলন হয়েছে। বাজার দর যেভাবে কমে গেছে তাতে করে অনেকগুলো টাকা লস হবে। প্রতিবছর এই সময় মাঠে মাঠে পাইকারী মহাজনরা ঘুরে ঘুরে কপি কিনতেন। এবার বহুদূর তাকিয়ে থেকে একটাও মহাজনের দেখা মিলছে না।
দামুড়হুদার বদনপুর গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, এক সপ্তাহ আগে একজন সবজি ব্যবসায়ী (পাইকারী) নিকট এক লাখ টাকায় দরদাম করে কপি বিক্রি করি। চুক্তি মোতাবেক তিনি আমাকে ২৮হাজার টাকা বায়না করেন। গত কয়েক দিন যাবত সবজির বাজার কমে যাওয়ায় তিনি আর কপি নিতে চাচ্ছেন না। এদিকে আবার বায়নার টাকা ফেরত চেয়ে তাগাদা দিচ্ছেন। আমার ক্ষেতের সব কপি দিতে চাচ্ছি তার বায়নার টাকায়; তবুও নিতে চাচ্ছেন না। এমন অবস্থায় মহা বিপদে পড়ে গেছি।
দামুড়হুদা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা অভিজিৎ কুমার বিশ্বাস বলেন, চলতি মরসুমে এ উপজেলায় শীতকালীন সবজি ৭৬০ হেক্টর জমিতে বাঁধাকপি ও ৯৬ হেক্টর জমিতে ফুলকপির আবাদ হয়েছে। ইতোমধ্যে সে সকল সবজি বাজারজাত শুরু করছে কৃষকরা। শুরুতেই দাম ভালো থাকলেও; এখন অনেকটা দাম কমে গেছে। যার মূল কারণ হচ্ছে একই সময়ে কৃষকদের উৎপাদিত সকল সবজি বাজারজাত প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এমন পরিস্থিতি এড়িয়ে চলতে আমাদের কৃষকদের জমিতে আগপেছ করে সবজি আবাদ করতে হবে।

এছাড়া, আরও পড়ুনঃ

মন্তব্যসমূহ বন্ধ করা হয়, কিন্তু ট্র্যাকব্যাক এবং পিংব্যাক খোলা.

This website uses cookies to improve your experience. We'll assume you're ok with this, but you can opt-out if you wish. Accept Read More